পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যদি কেউ ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। কারণ ইসলামে ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯১)। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবকল্যাণ ও মানবতার জন্য। ইসলাম মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানানোর শিক্ষা দেয়। স্মরণ রাখতে হবে এটি এমন এক সার্বজনীন ও শান্তিময় জীবনব্যবস্থা, যেখানে শুধু মানব সম্প্রদায়ই নয় বরং পশুপাখি ও প্রকৃতির অধিকারও সংরক্ষিত রয়েছে। অতুলনীয় চরিত্র মাধুর্য, অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ, আমল ও আখলাকের শিক্ষাই ইসলাম প্রদান করে থাকে। ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যদি কেউ ইসলামের লেবাস লাগিয়ে ইসলামকে বদনাম করার জন্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। বরং সে মুনাফিক এবং ইসলামের দুষমন বলেই বিবেচিত হবে। কারণ ইসলামে ফিতনা-সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯১)।
মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলো সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচাল’ (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৩২)।
অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ৯৩)। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং একে অন্যকে হত্যা কোরো না।’ (সূরা : নিসা, আয়াত : ২৯)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘(রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যর ইবাদত করে না, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না।’ (সূরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৮)। শুধু মুসলিমই নয় ইসলাম অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকেও হত্যায় উৎসাহিত করে না। অমুসলিমের জান-মাল-ইজ্জত সংরক্ষণের ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। আল্লাহ পাক সকল ফেতনা ফাসাদ থেকে আমাদের হেফাযত করেন। আমিন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানুষের সামজিক জীবন একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়। সমাজের অবস্থা পরিস্থিতি যদি কল্যাণময়ী শান্ত প্রকৃতির হয় তাহলে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সামগ্রিক জীবনেও সেই কল্যাণ এবং শান্তি অনুভূত হয়। খতিব বলেন, একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব। অন্য কোনো মত-পথে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ তদানিন্তন সময়ে আরববাসীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধতার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি সহমর্মিতা, প্রত্যেকের হক (প্রাপ্য) আদায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাহেলিয়াতের সর্ব প্রকার অজ্ঞতাপূর্ণ দ্বন্ধ-সংঘাত যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ, রক্তপাত অরাজকতা দূর করত: তথায় শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দ্য সম্প্রীতি সম্পন্ন একটি সুন্দর কল্যাণমূলক সমৃদ্ধশালী আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আজহাব, আয়াত: ২১)। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানবজীবনে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের যে কোনো কাজের ফলাফল নির্ভর করে তার নিয়তের ওপর। ওই কাজ আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর আগেই বান্দার মনের গহিনে থাকা ইচ্ছা তথা ‘নিয়ত’ আল্লাহর কাছে দ্রুত পৌঁছায়। এজন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা খুবই জরুরি। হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ বোখারির প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারি’তে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রহ.) আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন মানুষের নিয়ত এতটাই শক্তিশালী যে, তা ইবাদত নয়, এমন বিষয়কে ইবাদত বানিয়ে দেয়। যেমন ঘুম। মানুষ নিজ প্রয়োজনে ঘুমায়। কিন্তু যদি এ নিয়তে ঘুমায় ‘আমি ঘুমাব শরীর চাঙা হবে এবং চাঙা শরীরে মহান আল্লাহর ইবাদত করব’, তাহলে যতক্ষণ ঘুমাবে ততক্ষণ তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। অন্য আরেক হাদিসে নবীজী (সা.) বলেন, ‘ইখলাসের সাথে আমল করলে অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ সুতরাং কেউ যদি মানুষকে দেখানোর জন্য, সম্মান-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য ইবাদত কিংবা দান সদকাহ করে তবে তা সে হিসেবেই গণ্য করা হবে এবং পরকালে সে এর কোনো বিনিময় পাবে না।
খতিব আরো বলেন, বিচার দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে হিসাব নেবেন না। বরং বান্দার হিসাব হবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা তার নিয়তের ওপর। নবীজী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাহ্যিক আকার আকৃতি এবং ধন-সম্পত্তির দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, বরং তিনি দৃষ্টিপাত করেন শুধু তোমাদের অন্তরের আমল তথা নিয়তের দিকে।’ তিনি বলেন, আল্লাহর তায়ালার একজন একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত সহিহ নিয়তের ওপর আমল করা। সৎ স্বচ্ছ এবং বিশুদ্ধ নিয়ত বুকে ধারণ করা। যাতে ইহকাল এবং পরকাল দু’জায়গায়ই আল্লাহর দয়া এবং রহমতের ছায়ায় কাটাতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।