চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ফিরোজ আহমাদ
মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই। স্বপ্নের মাধ্যমেও অনেক মানুষ ইহকাল ও পরকালের নির্দেশনা পেয়ে যান। তবে সব স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য এক নয়। স্বপ্নযোগে প্রায়ই আমাদের কবর জগতের আপনজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। কবর জগতের আপনজনেরা আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে যান। স্বপ্নে কবর জগতের কাউকে অসুস্থাবস্থায় দেখলে মানুষ দান-সদকা করেন। কবরবাসীর জন্য গরিব মিসকিনের মধ্যে মিষ্টান্ন বিতরণ করেন। অনেকে বাবা-মায়ের জন্য শুক্রবার দিন বাদ জুমা দোয়া-মিলাদ ও তাবারুকের ব্যবস্থা করেন। তবে নবী-রাসূল গাউস কুতুব অলি আউলিয়ার স্বপ্ন আর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন দেখার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। অলি আউলিয়া ও মুমিন মুসলমান স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর দর্শন লাভের জন্য আকাক্সক্ষা ও আকুতি থাকে। মুমিন বান্দারা মহানবী (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার জন্য জন্য ঘুমানোর পূর্বে অজু করে, দোয়া কালাম পাঠ করে, গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে ও ডান কাত হয়ে ঘুমান। স্বপ্নে কেউ সাপ কুকুরের তাড়া খায়। স্বপ্নে কেউ লাশ দেখে। স্বপ্নে কাউকে বোবায় (ঘুমের ঘরে চিৎকার করে) ধরে। আবার স্বপ্নে কেউ বেলায়াতি ক্ষমতাও পেয়ে যান। স্বপ্নে অনেকের সৌভাগ্যে হয় মক্কা-মদিনা জিয়ারতের। মুমিন বান্দাদের সাথে স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর দেখাও হয়ে যায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারোটি তারা, চাঁদ ও সূর্য, আমার প্রতি সেজদাবনত অবস্থায় রয়েছে। (এ কথা শুনে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর পিতা বলল) হে আমার স্নেহের পুত্র, তুমি তোমার (এ) স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলে দিয়ো না, তারা তোমার বিরুদ্ধে অতঃপর ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকবে”। (সূরা ইউসূফ : ৪, ৫)। হযরত ইউসুফ (আ.) তার স্বপ্নের কথা ভাইদের নিকট প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে পরবর্তীতে তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল এবং ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হযরত ইউসুফ (আ.)-কে গভীর কুয়াতে নিক্ষেপ করেছিল। একটি পর্যায়ে গিয়ে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়েছিল। বহুদিন পর্যন্ত হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সাথে তার পরিবারের কোনো যোগাযোগ খোঁজখবর ছিল না। যখন হযরত ইউসুফ (আ.)-এর পিতা-মাতা ও ভাইদের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা হযরত ইউসুফ (আ.)-কে দেখা মাত্র সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তার পিতামাতা এবং ওরা সকলে (হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাইগণ) তার প্রতি (দরবারের নিয়মানুযায়ী সম্মানের) সেজদা করল (হযরত ইউসুফ (আ.) তার সে স্বপ্নের কথা মনে হলো), সে বলল, হে আমার পিতা, এ হচ্ছে আমার পূর্বেকার সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা (আজ) আমার প্রভু যা সত্যে পরিণত করেছেন”। (সূরা ইউসূফ : ১০০)।
বুখারি ও মুসলিম শরিফে হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে, সে শীঘ্রই জাগ্রত অবস্থায়ও আমাকে দেখবে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারবে না। বুখারি শরিফে হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে, সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ উত্তম স্বপ্ন দেখলে সে যেন তা শুধু এরূপ লোকের নিকট প্রকাশ করে থাকে যে তাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে। আর যদি কেউ তার অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তার ক্ষতি এবং শয়তানের ক্ষতি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে। আর স্বপ্নটি যেন কারো নিকট প্রকাশ না করে। তাহলে তাতে তার আর কোনো অনিষ্ট ঘটবে না। তিরমিজি শরিফে হযরত আবু রাযীন উকাইলী (রা.) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। তোমরা একান্ত বন্ধু ও বিশেষ জ্ঞানী লোক ছাড়া স্বপ্ন প্রকাশ করবে না।
ইসলামে স্বপ্নের গুরুত্ব রয়েছে। সাহাবারা তাদের স্বপ্নের তাবীর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে জেনে নিতেন। স্বপ্নের বিষয়টি পুরোপুরি রূহানীয়াতের সাথে সম্পর্কিত। স্বপ্নের নির্দেশনা হলো রূহানী নির্দেশনা। উত্তম স্বপ্ন দেখার আকাক্সক্ষা থাকাও একটি নেক আমলের পর্যায়ভুক্ত।
লেখক : ধর্ম ও সুফিবাদ গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।