Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরআন-হাদিসের আলোকে স্বপ্নের তাৎপর্য

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফিরোজ আহমাদ

মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই। স্বপ্নের মাধ্যমেও অনেক মানুষ ইহকাল ও পরকালের নির্দেশনা পেয়ে যান। তবে সব স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য এক নয়। স্বপ্নযোগে প্রায়ই আমাদের কবর জগতের আপনজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। কবর জগতের আপনজনেরা আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে যান। স্বপ্নে কবর জগতের কাউকে অসুস্থাবস্থায় দেখলে মানুষ দান-সদকা করেন। কবরবাসীর জন্য গরিব মিসকিনের মধ্যে মিষ্টান্ন বিতরণ করেন। অনেকে বাবা-মায়ের জন্য শুক্রবার দিন বাদ জুমা দোয়া-মিলাদ ও তাবারুকের ব্যবস্থা করেন। তবে নবী-রাসূল গাউস কুতুব অলি আউলিয়ার স্বপ্ন আর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন দেখার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। অলি আউলিয়া ও মুমিন মুসলমান স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর দর্শন লাভের জন্য আকাক্সক্ষা ও আকুতি থাকে। মুমিন বান্দারা মহানবী (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার জন্য জন্য ঘুমানোর পূর্বে অজু করে, দোয়া কালাম পাঠ করে, গায়ে সুগন্ধি লাগিয়ে ও ডান কাত হয়ে ঘুমান। স্বপ্নে কেউ সাপ কুকুরের তাড়া খায়। স্বপ্নে কেউ লাশ দেখে। স্বপ্নে কাউকে বোবায় (ঘুমের ঘরে চিৎকার করে) ধরে। আবার স্বপ্নে কেউ বেলায়াতি ক্ষমতাও পেয়ে যান। স্বপ্নে অনেকের সৌভাগ্যে হয় মক্কা-মদিনা জিয়ারতের। মুমিন বান্দাদের সাথে স্বপ্নে মহানবী (সা.)-এর দেখাও হয়ে যায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা! আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারোটি তারা, চাঁদ ও সূর্য, আমার প্রতি সেজদাবনত অবস্থায় রয়েছে। (এ কথা শুনে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর পিতা বলল) হে আমার স্নেহের পুত্র, তুমি তোমার (এ) স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বলে দিয়ো না, তারা তোমার বিরুদ্ধে অতঃপর ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকবে”। (সূরা ইউসূফ : ৪, ৫)। হযরত ইউসুফ (আ.) তার স্বপ্নের কথা ভাইদের নিকট প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা গুরুত্বপূর্ণ এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে পরবর্তীতে তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল এবং ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হযরত ইউসুফ (আ.)-কে গভীর কুয়াতে নিক্ষেপ করেছিল। একটি পর্যায়ে গিয়ে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হয়েছিল। বহুদিন পর্যন্ত হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সাথে তার পরিবারের কোনো যোগাযোগ খোঁজখবর ছিল না। যখন হযরত ইউসুফ (আ.)-এর পিতা-মাতা ও ভাইদের সাথে দেখা হয়েছিল। তারা হযরত ইউসুফ (আ.)-কে দেখা মাত্র সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তার পিতামাতা এবং ওরা সকলে (হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাইগণ) তার প্রতি (দরবারের নিয়মানুযায়ী সম্মানের) সেজদা করল (হযরত ইউসুফ (আ.) তার সে স্বপ্নের কথা মনে হলো), সে বলল, হে আমার পিতা, এ হচ্ছে আমার পূর্বেকার সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা (আজ) আমার প্রভু যা সত্যে পরিণত করেছেন”। (সূরা ইউসূফ : ১০০)।
বুখারি ও মুসলিম শরিফে হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে, সে শীঘ্রই জাগ্রত অবস্থায়ও আমাকে দেখবে। কারণ শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারবে না। বুখারি শরিফে হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, উত্তম স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে, সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ উত্তম স্বপ্ন দেখলে সে যেন তা শুধু এরূপ লোকের নিকট প্রকাশ করে থাকে যে তাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে। আর যদি কেউ তার অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তার ক্ষতি এবং শয়তানের ক্ষতি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে। আর স্বপ্নটি যেন কারো নিকট প্রকাশ না করে। তাহলে তাতে তার আর কোনো অনিষ্ট ঘটবে না। তিরমিজি শরিফে হযরত আবু রাযীন উকাইলী (রা.) বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুমিনের স্বপ্ন নবুয়তের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। তোমরা একান্ত বন্ধু ও বিশেষ জ্ঞানী লোক ছাড়া স্বপ্ন প্রকাশ করবে না।
ইসলামে স্বপ্নের গুরুত্ব রয়েছে। সাহাবারা তাদের স্বপ্নের তাবীর মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে জেনে নিতেন। স্বপ্নের বিষয়টি পুরোপুরি রূহানীয়াতের সাথে সম্পর্কিত। স্বপ্নের নির্দেশনা হলো রূহানী নির্দেশনা। উত্তম স্বপ্ন দেখার আকাক্সক্ষা থাকাও একটি নেক আমলের পর্যায়ভুক্ত।
লেখক : ধর্ম ও সুফিবাদ গবেষক



 

Show all comments
  • nissan ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৪০ এএম says : 0
    স্বপ্নে লিফ্টে দ্রুত নিদিষ্ট স্টপ এর উপর উঠে আবার নিচে নেমে আসা এবং লিপ্ট থেকে বের না হতে পুনরায় উপরে উঠা এটা কিসের লক্ষণ
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃরুবেল ২১ মে, ২০২০, ১০:২৯ পিএম says : 0
    আমি ফজর নামাজ পড়ে ঘুমায় তারপর ঘুমের বিতরে হটাত দেখতে পাই একটা বিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে জাওয়ার সময় বর কে দেখে আমি ছিনতে পারি এবং আমি বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করি তারপর তার কিছুখন পরে আমার স্ত্রী কে খুঁজে পাওয়া যায়। আমি যানতে চাই এটা কিসের। ইঙ্গিত
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃরুবেল ২১ মে, ২০২০, ১০:২৯ পিএম says : 0
    আমি ফজর নামাজ পড়ে ঘুমায় তারপর ঘুমের বিতরে হটাত দেখতে পাই একটা বিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে জাওয়ার সময় বর কে দেখে আমি ছিনতে পারি এবং আমি বিয়েটা ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করি তারপর তার কিছুখন পরে আমার স্ত্রী কে খুঁজে পাওয়া যায়। আমি যানতে চাই এটা কিসের। ইঙ্গিত
    Total Reply(0) Reply
  • maria ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:২৬ পিএম says : 0
    আজকে আমার মা সকালে ঘুম ভাঙানোর পরে সাতটার দিকে আমি আবার ঘুমাই। তখন সপ্নে দেখি আমাকে একটা পরিবার দত্তক নিয়েছে সেখানে আমার ছোট এক ভাই আছে। তার সাথে ঘরে বসে কথা বলতে বলতে চলে যাই বারান্দার দিকে। সেখান যাওয়ার পর দেখি একটা সাপের মূর্ত। আমি কখনও হিন্দুদের কোনো নাটক সিনেমা দেখিনা যে বলতে পারেন ওসবের জন্য মূর্তিটা দেখেছি। আমি বেশিরভাগ আল্লাহর ইবাদত করি। তারপর দেখলাম সাপের মূর্তির মাথার পেছন থেকে এক্তা হালকা বেগুনি রঙের সাপ বেরিয়ে এসেছে। এটা দেখে আমি ভয়ে দৌড়ে পালাই বাড়ান্দায়। সাপটাও আসে উড়ে উড়ে আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যাই কারণ বাড়ান্দার শেষ প্রান্ত এটা এরপর আমি সাপটাকে তাড়িয়ে দেই সাপটাও ভয়ে পালিয়ে যায়৷ এরপর আমি রুমে এসে ওই ভাইকে জানাই সাথে সাথে দেখি সেই মূর্তি থেকে আরেকটা সাপ বের হয় এটার রং টা আমি বর্ণনা করতে পারবোনা কিন্তু সাপটা মাটিতে চলে। তখন সেই ভাইটা বল্ল এটা আরেকটা সাপ তাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিশোধ নিতে এসেছে। তারপর এই সাপটাও উড়ে আক্রমণ করতে চাইলো। এটা আগের সাপের চেয়ে শক্তিশালী৷ এটা কাউকে ভয় পায়না। অনেক সাহস নিয়ে এটাকে মারলাম আমি। কিন্তু চিন্তা এটার দেহ কোথায় লুকাবো। ঘরে মা বাবাও নেই যে জানাবো। এর মধ্যে সেই সাপ আসে যাকে আমি তাড়িয়েছি। আমার কথায় দুইজনে পালাই ঘর থেকে লাশ হাতে নিয়ে। তারপর আমাদের বন্ধুদের বাসায় পালাই কিন্তু সাপটা ঠিকই আমাকে খুঁজে পায় প্রতিবার। সবাই সাপ থেকে বাচতে পালায় আমিও পালাই। এক পর্যযায়ে আমি কবরের মধ্যে পালাই সেখানা আমাকে অনেকেই দেখে তাড়া নিজের জিবনের ঝুঁকি নিয়ে সাপের বিরুদ্ধে একজোট হয় কিন্তু আমাকে বিপদে ফালায়না। সাপকে জানায়না যে আমি সেই কবরের মধ্যে পালিয়ে আছি৷ তারা সাপ যেনো আমাকে না দেখে বিভিন্ন চেষ্টা করে৷ এরই মধ্যে একদল আসে যাদের কাছে সাপের হেরে যাওয়া নিশ্চিত। সবাই খুশি। সবাই যে যেখানে পালানো ছিলো বের হয়ে দেখে সাপের হেরে যাওয়া আমি তখনও পালানো কিন্তু আমার মনেও তখন একটু সাহস জেগেছে। এর মধ্যেই আমার ছোট দুই বোনের চিল্লা চিল্লিতে ঘুম ভাঙে আমার।
    Total Reply(0) Reply
  • মিলি আক্তার ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৩২ এএম says : 0
    সপ্নে কবরে অনেক সাপ দেখা কিসের লক্ষন
    Total Reply(0) Reply
  • জাবের ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৫৪ এএম says : 0
    আমি আজ ফজরের নামাজের পূর্বে সপ্নে দেখেছি কিছু জরাজীর্ণ কুকুর আমি এবং আমার পরিবার এর অন্য সবার উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে আমরা কুকুর গুলো কে তারানুর চেষ্টা করেছি ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে নাই,,তারপর গুম ভেঙে গেল আজান শুনে,,,
    Total Reply(0) Reply
  • সাবিনা খাতুন ৩ জুন, ২০২১, ৯:৫৯ এএম says : 0
    আমি একটি মেয়ে আমি একটি স্পনো দেখেছি কোবর আস্থানা অনেক ফুল ফুটে আছে আর আমি সিখানে বসে আছি এইটার মানে কি
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ শহীদুল ইসলাম সিজান ২৪ নভেম্বর, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
    আমার পরিবার অনেকদিন ধরে একটি পারিবারিক সমস্যার মধ্যে আছি। সবাই দোয়া করবেন। আমি আজকে দুইটি স্বপ্ন দেখি, প্রথমটিতে আমাদের পরিবারের একজন শত্রু (আমার চাচি) কে দেখি। তারপর দেখি ২ টি সাপ। একটি আমার মাথার উপরে ঘরের চালে, আরেকটি আমাদের ঘরে ঢুকছে। দ্বিতীয় স্বপ্নে দেখি আবার ২ টি সাপ। এবং দ্বিতীয় স্বপ্ন দেখার পর চোখ মেলে দেখি ফজরের আজান হচ্ছে। কেও কি দয়া করে এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন-হাদিসের আলোকে স্বপ্নের তাৎপর্য
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ