Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতির অভিযোগে বন্ধ পুনঃনির্মাণ কাজ

শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

একশ ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আঞ্চলিক মহাসড়কের পুনঃনির্মাণ ও উন্নয়নকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে ৩ বছর যাবত কাজটি বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব পথে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এ সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের কাজ করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসার পর থেকে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণকাজ তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

জানা গেছে, শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি ১৯৯১-৯২ সালে কোরিয়ান কোম্পানির মাধ্যমে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয়। পরে দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এ মহাসড়কটির পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ৩২.৪০ কি.মি. দীর্ঘ এ সড়কটির ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ যৌথভাবে শুরু করে মেসার্স এসইপিএল প্রাইভেট লিমিটেড, ওটিবিএল ও মেসার্স তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ নামের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরু থেকেই শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করতে থাকে। আর এটা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় মহাসড়কটির উন্নয়নকাজ। এরমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করে চলে যায়। এতে বিপাকে পড়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।

শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটির দুই অংশ নন্দীর বাজার থেকে ঝগড়ারচর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এবং ঝগড়ারচর থেকে বকশীগঞ্জ পর্যন্ত একই দৈর্ঘ্যের অন্য অংশ সংস্কারের কাজ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ মহাসড়কের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৫ মাসের মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পূর্বের সড়কটির দুই পার্শে ১ মিটার করে ২ মিটার সম্প্রাসরণ কাজে দেড়ফুট বালি ও ৮ ইঞ্চি সাববেস, ৬ ইঞ্চি সাববেস-২ ধরা থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া নিম্নমানের ইট বালি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। পুরনো সড়কের মেগাডম, কার্পেটিং ও বিটুমিনাস সম্পূর্ণ উঠিয়ে ফেলে সেখানে পাথর দিয়ে ৮ ইঞ্চি (২০০ মিলি মিটার) ডব্লিবিএম করে তার উপর আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মটিার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস দিয়ে ফিনিসিং দেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরং পুরনো সড়কের উপরের আড়াই ইঞ্চি (৬০ মিলি মিটার) কার্পেটিং এবং ১ ইঞ্চি (২৫ মিলি মিটার) বিটুমিনাস উঠিয়ে পুরনো পাথর আর কিছু নতুন পাথর দিয়ে সড়কটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করে।

বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও হুইপ আতিউর রহমান আতিক সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে সড়কটি তদন্তের সুপারিশ করেন। গেল বছরের জুলাইয়ে একাধিক তদন্ত টিম তাদের তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পান। ফলে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মদ ও উপসহকারী প্রকৌশলী মাজাহারুল ইসলাম আজাদকে শেরপুর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়। সড়কের ৪০ ভাগ কাজ শেষ না হলেও যাওয়ার আগে তারা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ৯০ কোটি টাকার বিল প্রদান করেন। অন্যদিকে নিম্নমানের কাজ করায় ঠিকাদারকে দেওয়া এ কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ওই সময় কর্মরত ও অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন মহাসড়কটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় খানাখন্দে ভরা সড়কটি দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা। গর্তে পড়ে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে ছোট যানবাহন। ভাঙা সড়কের কারণে কৃষিতে উদ্বৃত্ত অঞ্চলটির উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। এতে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জানিয়েছেন কৃষকরা।

তবে সচেতন মহলের দাবি ওই সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহাম্মেদের বিরুদ্ধেও কোনো বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ কেন হবে না ? শেরপুরের সচেতন মহল ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে শেরপুর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, এ সড়কে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। জড়িত ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করে অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং অনিয়মের সাথে জড়িত কমকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করেছি। তার বিরুদ্ধে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতির অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ