Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উম্মাতে মুহাম্মদীই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তা‘আলা উম্মাতে মুহাম্মদীকে এমন কিছু সম্মাননা দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মাতকে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত জাতির আবির্ভাব হয়েছে, তন্মধ্যে উম্মাতে মুহাম্মদীই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)। আর রসূল (সা.) কখনও ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী বিচারে কারো প্রতি জুলুম করেননি। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিই বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করেছেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মানবতার মুমূর্ষদশা থেকে মানুষ ও মানবতাকে মুক্তি দিতে প্রেরণ করা হয়েছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। প্রিয় নবীর মর্যাদা ও সম্মানের দিক থেকে ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মহান আল্লাহ বলেন, আর তখন কী অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং এই লোকদের বিরুদ্ধে আপনাকে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব। (সূরা নিসা : ৪০)। আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় নবী (সা.)কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া: আয়াত ১০৭)।
পেশ ইমাম বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অন্যসব নবীর চাইতে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গনীমাতের (যুদ্ধলব্ধ) অর্থ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকার এবং মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য (নবী করে) পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমনের ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে। (মুসলিম :১০৫৪)

আনাস ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘আমিই হলাম সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার মাথার ওপর থেকে মাটি সরে যাবে (অর্থ্যাৎ আমি কবর থেকে সর্বপ্রথম হাশরের মাঠে উঠব), কিন্তু এতে কোন অহঙ্কার নেই। আর আমাকে প্রশংসার পতাকা দেয়া হবে, তাতেও কোন অহঙ্কার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব মানব জাতির নেতা, এতেও আমার কোন অহঙ্কার নেই। কিয়ামতের দিন আমিই হব জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি, এতেও কোন অহঙ্কার নেই। (সূনান আদ-দারেমী : ৫৮) । উম্মাতে মুহাম্মদীকে এমন কিছু সম্মাননা আল্লাহ দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মাতকে দেননি। আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত জাতির আবির্ভাব হয়েছে, তন্মধ্যে উম্মাতে মুহাম্মদীই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)।

পেশ ইমাম বলেন, শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মাতের সম্মান আমাদেরকে বজায় রাখতে হবে। রসূলে কারীম সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতলানো পথেই আমাদেরকে চলতে হবে। রসূলের সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। আর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব হলো সবার সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করা। একমাত্র ইসলামই অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়েছে। হযরত সুফিয়ান ইবনে সালিম (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রেখ! কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, কোন অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোন জিনিস বা সহায় সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমের পক্ষে অবস্থান করব।’ (আবু দাউদ)। তিনি অন্যায়ভাবে অমুসলিমের জানমালের ওপর হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এর পরিণতি হবে জাহান্নাম।

খতিব আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে নবীজী সা.-এর অনুপম চরিত্র মাধুর্যের ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’। (সূরা আল কলম, আয়াত নং-৪)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র মাধুর্যের পূর্ণতাদানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি’। আমাদের উচিত ইসলামের সুমহান আদর্শগুলো গ্রহণ করা এবং নবীজী (সা.) এর উদার নীতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

ঢাকা মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া মসজিদে বায়তুল হারামের খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা জুমার বয়ানে জোরালো কণ্ঠে দাবি করে বলেন, বাংলাদেশে সুদীর্ঘকাল যাবত বিভিন্ন ধর্মের লোকদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মডেল গড়ে উঠেছে, তার সিংহভাগ অবদান এ দেশের আলেম ওলামা বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও খতিবদের। কারণ তারা কোরআন ও সুন্নাহর শান্তির বাণী দিয়ে সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথাই মানুষকে মেনে চলতে বলেন। মসজিদ থেকে ইমাম ও খতিবরা নবীজী (সা.) এর আদর্শের কথা বলেন। নবীজী (সা.)-এর জীবনে শত শত উদাহরণ রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের। যেমন হুদায়বিয়ার সন্ধি ও মদীনা সনদ এর অন্যতম উদারণ। খতিব বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে আলেম সমাজ বিশেষ করে ইমাম ও খতিবরা শতশত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সহ-অবস্থানের পক্ষে কথা বলে ও কাজ করে সফল হয়েছেন। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে ইস্তিকামাত তথা অবিচলতা সুদৃঢ় থাকা, দ্বীনি সফলতার চাবিকাঠি। দুনিয়ার যত গুমরাহি ও পাপাচার দেখা যায় তা সবই ইস্তিকামাত হতে সরে যাওয়ার ফল। আকায়েদ অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইস্তিকামাত না থাকলে মানুষ বেদাত শিরিক কুফর পর্যন্ত পৌছে যায়। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সুষ্ঠু সঠিক মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছেন তার মধ্যে বিন্দুমাত্র কমবেশি পরিবর্তন পরিবর্ধনকারি পথভ্রষ্ট রূপে আখ্যায়িত হবে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, আপনি দ্বীনের পথে দৃঢ়ভাবে সোজা চলতে থাকুন যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। (সূরা হুদ আয়াত নং ১১২) তাই আমাদের উচিত দ্বীনের ব্যাপারে ইস্তিকামাত নিয়ে থাকা। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।



 

Show all comments
  • SALIM SINHA ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ পিএম says : 0
    This type of Waz is continuing from years to years. Our honorable huzurs are totally unaware of our Muslims day to day problems. Suppose Interest is Haram in our religion. But most of the industry build up on interest based bank loans. The big industry can employ thousand of people . But without bank support you can't make such large scale industry. Bank will not give any loan without interest . You can set a small industry without any loan but large industry is not possible. If you don't set industry how crores man will be employed. But interest is haram here. Whats the solution . Without solving this type of issue WAZ like we are the best ummat can't give any good to muslim society.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা-পূর্ব বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ