বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
অনেক জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দল আওয়ামীলীগের প্রতীক নৌকা বাদ দিয়েই মাদারীপুরে সদর উপজেলার সব ইউনিয়নে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের দুর্ভেদ্য এ দুর্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রার্থী নির্ধারণ করতে না পারায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার জন্য গত জানুয়ারীতে মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার ৩টি সংসদীয় আসনের সাংসদগন দলীয় হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলো। কিন্তু একমাত্র মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ ড, সোবাহান গোলাপ সেই প্রস্তাবের পথ সরে নৌকা প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করানো পক্ষে নেমেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক প্রদানে তার একচ্ছত্র ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ তৈরী হওয়ায় নৌকা প্রতীক পেতে অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছে। সঠিক ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা না হলে তার নেতিবাচক ফলাফল দলকে গুনতে হতে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা শেষে গেলো রোববার দুপুরে গণভবনে আওয়ামীলীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সদর উপজেলায় প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার তথ্য জানানো হয়। এখানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের দলীয় লোকজনই স্বতন্ত্র প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। সে হিসাবে সদর উপজেলার এই ১৪টি ইউনিয়নে কোন নৌকা প্রতীক থাকছে না। বিষয়টি জানার পর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকাতে উঠান বৈঠকও করতে দেখা গেছে প্রার্থীদের। এরই মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কিনতে শুরু করেছে। তৃণমূল আ’লীগের প্রার্থীরা বিষয়টি দেখছেন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। এই উপজেলা শতকরা ৯০ ভাগ জনগণ আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতিতেও একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে আবার কেউ কেউ উপজেলা পর্যায়ের কমিটিতে রয়েছেন।
শাজাহান খান পন্থি একাংশের নেতাদের দাবী মতে, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দলীয় মনোনয়ন দিতে গেলে একাধিক যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে বেছে নিতে সংশয় সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই মনোমালিন্য আর দূরত্ব রোধে সদরের ১৪টি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দলীয় সমর্থনে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রার্থীরাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দাবি, এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভোট প্রদানের উৎসাহ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত রয়েছেন। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোটদানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম বলেন, ‘সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থীতা উন্মুক্ত রেখেছে। এখানে দলীয় একক কোনো সমর্থন দেওয়া হয়নি। কারণ প্রার্থীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একক প্রার্থী দিলে অন্তদ্বন্ধ তৈরি হয়। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারবে। আমাদের আর কোন সমস্যা নেই।’
তবে মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা জানান, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমরা মেনে চলি। তিনি যে নির্দেশনা দিবেন, সেটাই আমরা পালন করবো। তারপরেও জেলা আ’লীগ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নের দলীয়ভাবে নিবেদিত কর্মীদের সমর্থন দিবো। যাতে ত্যাগী আওয়ামীলীগাররা জয়ী হতে পারে।’
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, তৃতীয় ধাপে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ তারিখ। যাচাই বাছাই হবে ৪ নভেম্বর, ১১ নভেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ এবং ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২ লাখ ২১ হাজার ৭৮৩ জন ভোটার। আমাদের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।