Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য শিশু অপহরণ

অপহৃত শিশু উদ্ধার, গ্রেফতার এক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

২০০৯ সালে জমি বিক্রি ও ঋণ করে দুবাই যান পাবনার বাসিন্দা রানা আহমেদ বাকি (২৬)। কিন্তু কাগজপত্র সঠিক না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে যাকাত ভিসায় দেশে ফেরেন তিনি। এরপর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না রানা। এজন্য প্রতিবেশীর তিন বছর বয়সী শিশুকে অপহরণ করেন তিনি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে টানা ২৩ ঘণ্টা অভিযান শেষে সিরাজগঞ্জ থেকে শিশু অপহরণের ঘটনায় জড়িত রানাকে গ্রেফতার এবং অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করে র‌্যাব-৪। গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গত ২১ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোড এলাকা থেকে সাড়ে ৩ বছরের শিশু আফিয়াকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার দিনই অপহরণকারী মোবাইল ফোনে শিশুটির বাবা-মার কাছে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। এরই প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল। আভিযানিক দল প্রথমে অপহরণকারীর নিজ জেলা পাবনা ও শ্বশুর বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় অভিযান পরিচালনা করে। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অপহরণকারী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানায় দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থান করছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গত শুক্রবার সকাল ৯টার থেকে গতকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানাধীন এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।
তিনি আরো বলেন, অভিযানের এক পর্যায়ে শাহজাদপুর থানাধীন ১০ নং কৈজুরি ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের বাঁধ সংলগ্ন স্লুইস গেট এলাকার একটি বাসা থেকে অপহৃত শিশু আফিয়াকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় অপহরণকারী রানা আহমেদ বাকিকে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অপহরণকারী রানা আহমেদ দুই বছর ধরে আশুলিয়া থানাধীন পল্লীবিদ্যুৎ কবরস্থান রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। পেশায় রিকশাচালক রানা বেশিরভাগ সময় রাতে রিকশা চালাতেন। দিনে বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে স্থানীয় একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতেও কাজ করতেন। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় তিনি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেন। এ সময় তার বাড়ি মানিকগঞ্জ এবং নানা বাড়ি ধামরাই থানায় বলে জানান। তিনি নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিতেন। কিন্তু তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক, মেয়ের বয়স ৯ বছর এবং ছেলের বয়স ১০ মাস। তার নিজ বাড়ি পাবনা জেলার সদর থানায় ভাউডাঙ্গা গ্রাম এবং শ্বশুর বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানায়। ভিকটিম শিশুর বাবা আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও মা সোনিয়া বেগম (২৭) দুজনই গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য দীর্ঘ দিনের পরিচিত আনোয়ারা নামে এক নারীর বাসায় শিশু আফিয়াকে রেখে যেতেন তারা। আনোয়ারার পাশের বাসায় ভাড়া থাকতেন রানা।
সেই সুবাদে ভিকটিম শিশুর সঙ্গে মামা পরিচয়ে মিশতেন রানা।
কী কারণে শিশু আফিয়াকে অপহরণ করেছিল রানা? জানতে চাইলে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, অপহরণকারী রানা আহমেদ ২০০৯ সালে জমি-জমা বিক্রি ও ঋণ করে দুবাই গমন করেন। কিন্তু সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ২৩ দিন জেল খেটে যাকাত ভিসায় দেশে ফেরত আসেন। দেশে ফেরত আসার পর থেকে তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্যই তিনি শিশু আফিয়াকে অপহরণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ