পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনন্দঘন পরিবেশে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছেÑ হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শারদীয় দুর্গাপূজা’ শেষ হয়। এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৭ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে গত ১১ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। পরবর্তী চারদিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চণার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী-দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। শুক্রবার সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। দশমী শুক্রবার হওয়ায় আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল শোভাযাত্রা না করেই প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।
এবারের দুর্গাপূজার ব্যাপক আয়োজন করা হয়। পূজা উদযাপনে প্রধানমন্ত্রীর ৩ কোটি টাকা অনুদান ছাড়াও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডবে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হয়। অতপর সরকার পূজা উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পুলিশের পাশাপাশি ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শান্তি সম্প্রীতির দাবি জানানো হয়। ফলে বাংলাদেশে পূজা উপলক্ষ্যে যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং আনন্দঘন পরিবেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করেন, তেমন দৃশ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও দেখা যায়নি। কলকাতা শহরের চেয়ে ঢাকায় পূজামণ্ডপের পরিবেশ ছিল বেশি আনন্দমুখর।
ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা ১১ মিনিট পর্যন্ত বিজয়া দশমীতে সারা দেশের পূজামণ্ডপে ‘বিহিত পূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটে।
মূলত ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় বাঙালি হিন্দুর যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হয় বিজয়া দশমীতে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।
নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন গত সোমবার দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল। তবে অষ্টমীর দিন বুধবার কুমিল্লায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অতপর মহানবমী পেরিয়ে গতকাল শুক্রবার সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে এক বছরের জন্য বিদায় নেন ভক্তকুল।
শ্বশুরালয়ে ফেরার আগে দুর্গতিনাশিনী দেবী দূর্গাকে সিঁদুর, পান আর দুর্বা দিয়ে বরণ কর নেন নারী পুণ্যার্থীরা-এর মধ্য দিয়ে জরা কাটিয়ে পৃথিবী যেন শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে, সেই প্রার্থনা করা হয়। তবে মহামারী পরিস্থিতিতে এবারও কোনো সিঁদুর খেলার আয়োজন ছিল না।
‘মহিষাসুর বধের’ আনন্দের পাশাপাশি গতকাল দুপুরের পর দেবী বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে বিষাদের সুর বেঁজে উঠে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনী বাদ্যে দেবী বন্দনার গানে গানে বিসর্জনের জন্য বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে আসেন ভক্তরা। ঘাটে আসার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিকাল ৪টায় বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে শাহজাহানপুর বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অতপর একে একে রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডব থেকে আনা দেবিকে বিসর্জন দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, এ বছর ঢাকা মহানগরে ২৩৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, যার যার মতো করে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জন দেবেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, মহিষাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে এইদিনে বিজয়ী হয়েছেন দুর্গা মা। সে কারণেই দিনটি আমাদের আনন্দের, আমরা উৎসব করি। জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই। মহামারি এবং বিয়জ দশমী শুক্রবার হওয়ায় এবারও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা হয়নি। বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর বুড়িগঙ্গার নদীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।
এবারের পূজায় করোনারভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে বলে পুরোহিতরা জানান। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী দুর্গা এবার এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে। কৈলাসে দেবালয়ে ফিরে গেছেন দোলায় চেপে।
চট্টগ্রামে হরতাল আজ : এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হলসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আজ শনিবার অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-ঐক্য পরিষদ। একইসঙ্গে হামলার প্রতিবাদে প্রতিমা বিসর্জন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল নগরীর জেএম সেন হলের সামনে এক পথ সভায় এ ঘোষণা দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এসময় তিনি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাজপথে থাকতে হবে। যতক্ষণ না দোষীদের শাস্তি হয়। পাশাপাশি রাজপথ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
এ সময় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আশিশ কুমার ভট্টাচার্য জানান, পুলিশের অসতর্কতার কারণে মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নামাজের পরে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে কীভাবে মিছিল বের হলো। এজন্য পুলিশকেই দায়ী করেন তিনি। এ সময় তিনিও প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার ঘোষণা দেন।
জানা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে একটি দল মিছিল নিয়ে নগরীর জেএম সেন হলের দিকে আসে। এসময় কিছু লোক মণ্ডপের দিকে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে দাঙ্গা পুলিশ ও সাঁজোয়া যান আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে গুলি ছোড়ার কথা জানান কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। ৫০ জনকে আটকের কথা জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।