পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু স¤প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজা। ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এ পূজা শুরু হয়। ভোর থেকেই চন্ডীপাঠসহ নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় পূজা মন্ডপগুলোতে। ঢাক-ঢোল আর শঙ্খের ধ্বনিতে ছড়িয়ে পড়ছে পূজার আমেজ। সোমবার রাতে দুর্গতিনাশিনী দশভূজা দেবী দুর্গার বোধনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজা। সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করছেন। বছর ঘুরে দেবীর আগমনিবার্তায় উৎসবের আমেজ এখন বাঙালি হিন্দুদের প্রাণে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি হিন্দু এলাকায় এখন সাজসাজ রব।
গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী, বনানী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে উৎসব আমেজ। শিল্পীরা দুর্গার রঙতুলির শেষ আঁচড় বুলিয়েছেন এবং সাজসজ্জার কাজও সম্পন্ন করেছেন। তেজগাঁও মনিপুরীপাড়ার ফার্ম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোহনা সামাজিক সংঘের উদ্যোগে দুর্গাপূজা আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে দেখা যায়, শিল্পীরা রঙ্গতুলির কাজ শেষ করে পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সাজানোর কাজ করছেন। হিন্দু পূজারিরা ভিড় করছেন দেবীর আরাধানায়।
বনানী মাঠে গত নয় বছর ধরে পালন করা হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। সেখানে দেখা যায়, মাঠের পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। সেখানে চলছে পূজা অর্চনা। এভাবে সারা দেশে হাজারো মÐপে নিখুঁত তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার রূপ। রঙ বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে পূজামÐপগুলো। ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি পূজামন্ডপ। পূজা মন্ডপ এলাকায় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সকালে মÐপে মÐপে হয়েছে বোধন, বা দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনা পূজা। ষষ্ঠী তিথিতে বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গাপূজার সূচনা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, বিল্ববৃক্ষ বা বেলগাছ মহাদেবের ভীষণ প্রিয়। পদ্মযোনী ব্রহ্মাও বিল্ববৃক্ষে দেবীকে প্রথম দর্শন করেন। তাই শাস্ত্র অনুযায়ী দেবীকে বিল্ববৃক্ষ তলে আবাহন করা হয়। বিল্ববৃক্ষ তলে দেবী আবাহনের মধ্যে সংকল্প করেছি, দশমী পর্যন্ত যথাবিধ উপায়ে আমরা মায়ের পূজা করব। প্রাতঃকালে নিদ্রামগ্ন দেবীকে জাগরণের মাধ্যমে গতকাল আমরা প্রার্থনা করেছি, দেবীর জাগরণে যেন সমস্ত অসুর শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে ধরায় সুর শক্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মঙ্গলময়ী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহনের মাধ্যমে আমরা চাইব, তিনি যেন ধরায় মঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। বহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবির সেই আগমণের সময়ই দুর্গাপূজা। রাম শরৎকালে দেবীকে আহŸান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন। অকাল বোধন কেন, জানতে চাইলে পুরোহিতরা বলেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গা পূজা হয় তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। তবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় পূজা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ২৩১টি মন্ডপ।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আবাহনের মাধ্যমে মূল মন্ডপে দেবী আসীন হওয়ার পর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস। বুধবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে হবে মহাসপ্তমী পূজা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজার পর হবে কুমারী পূজা। এ দিন রাত ৭টা ৫৮ মিনিটে সন্ধিপূজার পর শুক্রবার সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে শুরু হবে মহানবমী তিথি। শনিবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে দশমীর বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এবারের দুর্গাপূজা শেষ হবে। সেদিন সরকারি ছুটি; বিকাল ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে প্রতীমা নিয়ে বিজয়া শোভাযাত্রা যাবে বিসর্জনের ঘাটে।
শাস্ত্র বলছে, সপ্তমী, অর্থাৎ দেবীর আগমনের দিন বুধবার এবং ফেরার দিন শনিবার হওয়ায় দুর্গা এবার আসছেন নৌকায় চড়ে, যাবেন ঘোড়ায়। দুর্গার নৌকায় চড়ে মর্ত্যে আসার অর্থ হল- শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। অর্থাৎ শস্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা। আর ঘোড়ায় চেপে দেবীর বিদায়ের মানে হল- ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। মানে- রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর শঙ্কা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।