Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্গোৎসবের সপ্তমী আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা গতকাল শুরু হয়েছে। দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালন করতে বছর ঘুরে আবারো দুর্গতিনাশিনী দশভুজা ‘মা দুর্গা’ এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। গতকাল ষষ্ঠি তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হয় দেবী দুর্গার। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ মঙ্গলবার সপ্তমী তিথিতে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃণ্ময়ীতে। পরদিন মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হবে। এইদিনই হবে সন্ধীপূজা।

মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সর্বশেষ দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। আর দেবীর এই আগমনকে ঘিরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলের পূজা সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর বনানী দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারো প্রস্তুত করা হয়েছে মহামায়া দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। বাহারি সব রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব প্রতিমা। রঙ-বেরঙের আলোকসজ্জা আর নানা রঙের ডিজাইনের কাঠামো দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজাঙ্গণ। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যারতি, ধূনচী নাচসহ পূজার পাঁচ দিনই থাকছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। খামারবাড়ী কৃষি ইনস্টিটিউটের দুর্গাপূজা মণ্ডপেও একই চিত্র। খামারবাড়ী মোড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্রবেশদ্বার। রাস্তার দু’ধার সাজানো হয়েছে লাল-নীল বাতি দিয়ে। নারী-পুরুষ উভয় দর্শণার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রতিমা আবার রেখে দেয়া হয় বছরজুড়ে। তাই এখানকার প্রতিমা তৈরিতে একটু বেশিই নজর দেয়া হয়। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রতিমার রঙ-তুলির আঁচড়। ত্রিশূল, চক্র, ঢাল-তলোয়ারসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে দশভূজা দেবী দুর্গাকে। জমকালো সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অন্দরবাহির।

এদিকে, রামকৃষ্ণ মিশন, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, শাঁখারী বাজার, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ, পশ্চিম ধানমণ্ডির দুর্গা মন্দির, আখড়া মন্দির, নিমতলা মন্দির, ফার্মগেট, বনশ্রীসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমকালোভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজার। পঞ্জিকা মতে জানা গেছে, এবার মা আসছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে। দশমীর দিন তিনি কৈলাশে ফিরেও যাবেন দোলায় চড়ে। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা বলছেন, দেবীর এবারের আগমন ও গমন বার্তা মর্ত্যবাসীর জন্য মোটেই শুভকর নয়। ঘোটকে চড়ে আসার অর্থ ছত্রভঙ্গ। দোলায় ফেরার অর্থ মড়ক কিংবা মহামারি।

পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি এখন শেষ হয়েছে। এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা হবে ২৩৮টি স্থানে, যা গত বছরের চেয়ে ৪টি বেশি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আস্থা, সরকারি অনুদান ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ