চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা.। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর অত্যন্ত প্রিয় একজন সাহাবী। যাকে তিনি হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। একদিন প্রিয়নবী (সা.)মুআয রা.এর হাত ধরে বলেন- ‘মুআয! আল্লাহর কসম! আমি তোমায় ভালবাসি’!! রাসূলুল্লাহ (সা.)এর ঘোর বিরোধীরাও তার কথার বিশ্বস্ততার ব্যাপারে হৃদয় থেকে কখনো আপত্তি তুলত না। রাসূলুল্লাহ (সা.)এর প্রতিটি কথাকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করত। সেখানে তাঁর নিবেদিত প্রাণ একজন সাহাবী তাঁর মুখনিঃসৃত পবিত্র কথামালাকে কতটুকু হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবে তা বলাই বাহুল্য। মুআয রা. এক আকাশ ভালোবাসা আর মুগ্ধতা মিশিয়ে উত্তর দেন- ‘আপনার জন্যে আমার পিতা মাতা উৎসর্গিত হোক। আমিও আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি...”। অতঃপর নবীজী (সা.)প্রিয় মুআয রা.কে লক্ষ করে বলেন- তুমি প্রত্যেক নামাজের পরে অবশ্যই এ দুআটি পড়বে।
“হে আল্লাহ! আপনি আমায় সাহায্য করুন আপনার যিকিরের ক্ষেত্রে, আপনার শোকরের ক্ষেত্রে এবং আপনার উত্তম ইবাদতের ক্ষেত্রে...”। ( -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২১১৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫২৪)
হাদিসের শিক্ষা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। আল্লাহ তায়ালার যিকির ও তাঁর ইবাদাতের ন্যায় শোকর ও কৃতজ্ঞতা আদায়ও আমাদের ধর্ম ইসলামে একটি পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়। আল্লাহ বিশ্বাসী একজন মুমিন হৃদয় থেকে এ কথা উপলব্ধি করে যে, একজন প্রাসাদের মালিক আল্লাহর ইচ্ছায় মুহুর্তেই পথের ফকির হয়ে যায়। আর একজন নিঃস্ব সহায় সম্বলহীন হয়ে যায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক। তাই একজন মুমিন কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। “আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু হয়” এই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে সে বলে উঠে- আলহামদুলিল্লাহ”।
হযরত ইসা আ.কে আল্লাহ তায়ালা বলেছিলেন- তোমার পরে এক উম্মত আসবে যারা পছন্দের কিছু পেলে শোকর আদায় করবে। আর অপছন্দনীয় কিছু পেলে সওয়াবের আশায় সবর করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১২৮৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪১৬৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৬৭০৪)
উম্মতে মুহাম্মাদীর এই চরিত্র এভাবেই আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা আ. এর নিকট প্রকাশ করেন। একটি হাদিসে এ বিষয়টি আরো প্রতিভাত হয়ে ওঠেছে। হযরত আবু ইয়াহইয়া সুহাইব ইবনে সিনান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেন- মুমিনের বিষয়টি বড় আশ্চর্যের! প্রতিটি অবস্থায়ই তার জন্যে কল্যাণ বয়ে আনে। এটা কেবলই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কোন আনন্দকর পরিস্থিতিতে সে যখন শোকর আদায় করে তখন সেটা তার জন্যে কল্যাণ বয়ে আনে। পক্ষান্তরে যখন সে কোন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হয়ে সবর করে তখন সেটাও তার জন্যে সওয়াব বয়ে আনে। (সহীহ মুসলিম :২৯৯৯)
শোকর আদায় যে শুধু একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয় এমন নয়। শোকর আদায় না করলে কুরআন মাজীদে শাস্তির ধমকি এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, “ যদি তোমরা (নেয়ামত পেয়ে) শোকর আদায় কর তাহলে আমি আমি অবশ্যই অবশ্যই নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে জেনে রেখ আমার শাস্তি বড় কঠিন। (সূরা ইবরাহীম : ৭)। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষ কত নেয়ামত উপভোগ করে থাকে তা গুণে শেষ করা অসম্ভব। ইরশাদ হয়েছে- যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে থাক তাহলে তা গণনা করে কখনো শেষ করতে পারবে না।( সূরা ইবরাহীম: ৩৪)
এই যে সুস্থতা কত বড় নেয়ামত। একটু অসুস্থ হলেই তার মূল্য বুঝে আসে। সুরুচির সাথে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারা কত বড় নেয়ামত তা একজন অরুচিতে ভোগা খেতে না পারা লোককে জিজ্ঞেস করে দেখুন। এই যে আপনি আরামে সারারাত দিব্যি ঘুমে কাটিয়ে দিলেন তা যে কতটা আনন্দের তা একজন অনিদ্রায় ভোগা অসুস্থ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করুন। দেখুন- ঘুমাতে না পারা কতটা কষ্টের। তাই তো আমাদের গর্বের ধন পবিত্র সুন্নাহর পরতে পরতে রয়েছে শোকরের অমলিন শিক্ষা ।
রাতভর আপনি তৃপ্তিসহকারে ঘুমালেন। ঘুম থেকে জেগে আপনি আপনার মালিক আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করুন। পড়ূন- আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।