পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমদানি-রফতানি উভয় খাতেই পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সমুদ্র, আকাশ ও সড়কপথে যথাক্রমে জাহাজ, উড়োজাহাজ ও ট্রাক-টেলরের ভাড়া এবং কনটেইনার, স্ক্যানার, হ্যান্ডলিংসহ বন্দরের আনুষঙ্গিক চার্জসহ সার্বিকভাবে পরিবহন খরচ আগের চেয়ে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রফতানিমুখী ব্যবসায়ীদের মুনাফায় টান পড়েছে। দেশের ভেতরে সড়কপথেও ভাড়া বেড়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত একটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই ভাড়া মোটামুটি কয়েক বছর ধরেই স্থির ছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এখন ২০ হাজার টাকার কমে এই পথে ট্রাক পাওয়া মুশকিল। করোনাজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ভাড়া বাড়িয়েছেন ট্রাকমালিকেরা। আবার ট্রাকের ঢাকা-চট্টগ্রাম বন্দর-ঢাকা পথে চলতে বড়জোর ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যজট লাগলে পণ্যবোঝাই ট্রাক-টেলরকে পথে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে তখন পাঁচ-সাত দিনও লেগে যায়।
এ ছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যাত্রাবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্পের বিশাল পণ্যের চালান এলে ট্রাক-টেলর ব্যবহৃত হয়। তখন আবার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে সংকট দেখা দেয়। এই সুযোগে কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় ওঠে যায়। এসব সমস্যা সত্তে¡ও বিদেশি ক্রেতা ধরে রাখার স্বার্থে অনেক রফতানিকারক কম মুনাফা করছেন এবং কেউ কেউ লোকসান দিচ্ছেন বলেও শোনা যায়।
বাংলাদেশের একজন নামকরা নিট পোশাক কারখানার মালিক সুইডেন ও ইতালিতে নিয়মিত টি-শার্ট, পলো শার্ট ও জ্যাকেট রফতানি করেন। করোনার পর দুই দেশের ক্রেতারা সর্বশেষ ক্রয়াদেশে লিড টাইম তথা পোশাক সরবরাহের সময় তিন মাস থেকে কমিয়ে দুই মাস করেছেন। এ জন্য বাংলাদেশের ওই রফতানিকারক এক মাস ধরে উড়োজাহাজে করে পোশাকের চালান ইতালি ও সুইডেনে পাঠাচ্ছেন। সাড়ে চার লাখ ডলারের পোশাক পাঠাতে তাকে দুই লাখ ৩৪ হাজার ডলার বিমানভাড়া দিতে হয়েছে। তা সত্তে¡ও বিদেশি ক্রেতা ধরে রাখতে চান তিনি।
দেশের সিংহভাগ আমদানি-রফতানি পণ্য সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে আনা-নেয়া করা হয়। আমদানি-রফতানিকারকেরা জানান, সাধারণত ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতিটি কনটেইনারবোঝাই পণ্য করোনার আগে ইউরোপে নিতে খরচ পড়ত বড়জোর দেড় হাজার ডলার। এখন এই খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ হাজার ডলার। আর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রতিটি কনটেইনার পণ্য বোঝাই করে ইউরোপে নিতে আগে খরচ হতো দুই থেকে আড়াই হাজার ডলার। এখন খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ উত্তর আমেরিকায় ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের এক কনটেইনার পণ্য পাঠাতে খরচ পড়ত বড়জোর দুই হাজার ডলার। এখন খরচ হয় ২০-২৫ হাজার ডলার। অন্য দিকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের এক কনটেইনার পণ্য পাঠাতে খরচ হতো আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ডলার।
জানা গেছে, জাহাজ কোম্পানিগুলো করোনার কারণে খরচ কমাতে তাদের সব জাহাজ চালাচ্ছে না। অর্ধেক বা এর চেয়ে কম সংখ্যায় জাহাজ পরিচালনা করছে। ফলে চাহিদার তুলনায় জাহাজ কম থাকায় ভাড়া বেড়েছে। আবার জাহাজ কম চলায় কনটেইনার-সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে সেভাবে কনটেইনার আসছে না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সাড়ে নয় কোটি টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ লাখ টন পণ্য রফতানি হয়েছে। এর অর্ধেকই তৈরি পোশাক।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনার কারণে জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বেড়েছে। শুধু বিদেশি ক্রেতাদের ধরে রাখার জন্য ১০-১২ গুণ বেশি ভাড়া গুনছি। তিনি জানান, বিদেশি ক্রেতারা লিড টাইম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই বিমানে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক রপ্তানিকারক। এ জন্য এখন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পণ্যজট লেগেছে।
আকাশপথে শাকসবজি ও পচনশীল পণ্যের পাশাপাশি তৈরি পোশাক বেশি রফতানি হয়। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) সূত্রে জানা গেছে, করোনার আগে ইউরোপে এক কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ পড়ত দুই মার্কিন ডলার। এখন তা বেড়ে পাঁচ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ উত্তর আমেরিকায় আগে এক কেজি পণ্য পাঠাতে উড়োজাহাজভাড়া লাগত সাড়ে তিন থেকে চার ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ ডলারে। এ ছাড়া জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রতি কেজিতে ভাড়া তিন গুণ বেড়ে চার ডলার হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের স্ক্যানার ও হ্যান্ডলিং খরচও বেড়েছে। বিমানবন্দরে প্রতি কেজি পণ্য ওঠানো-নামানোতে (হ্যান্ডলিং) আগে যেখানে দুই ডলারের মতো খরচ হতো, সেখানে এখন চার ডলার ব্যয় করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।