Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পণ্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:১১ এএম

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার ভারী যানবাহন চলাচল করছে। মূলত এক্সেল লোড নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্বল্প চাকার যানবাহনে অতিমাত্রায় পণ্য পরিবহনের কারণেই সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। উপরের অংশ থেকে পাথর উঠে গিয়ে কোথাও কোথাও খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে আগামী পাঁচ বছরে সড়কটি মেরামতের জন্য ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সওজ।
সওজ সূত্র জানায়, মহাসড়কটিকে রক্ষার জন্য এবং দুর্ঘটনা এড়াতে এক্সেল লোড নীতিমালা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। যদিও এ নীতিমালা নিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নানা আপত্তি রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ বিষয়ে আর কোনো আপোষ করছি না। এক্সেল লোড নীতিমালা মানার কারণে মহাসড়কের আয়ু যেমন বাড়বে তেমনি পণ্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগও বাড়বে।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বর্তমানে নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করলে টনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনকে উৎসস্থলে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুস্তম আলী খান ইনকিলাবকে বলেন, এক্সেল লোড নিয়ে আমাদের দাবি-দাওয়া এখনও আছে। এক্সেল লোড নীতিমালা চালু করায় মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তিনি বলেন, নীতিমালা হলে সারাদেশে একইভাবে চালু করতে হবে। এখন যা হচ্ছে তা শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেলায়। আমরা চাই সারাদেশে এটা একযোগে বাস্তবায়ন করা হোক।
এ প্রসঙ্গে আরেক নেতা বলেন, সারা দেশের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য পরিবহনের নিয়মে ভিন্নতা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য পরিবহনে বড় দারোগার হাট এলাকায় স্থাপিত এক্সেল লোড স্কেল ও দাউদকান্দির স্কেলে যে নিয়ম অনুসরণ করা হয়, দেশের অন্যান্য এক্সেল লোড স্কেলের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। এতে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকার পণ্য পরিবহন মালিকরা একটি যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছেন না।
অনেকেই মনে করছেন, নতুনভাবে এক্সেল লোড নীতিমালা কড়াকড়ি করায় যানবাহন বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো সহজ কিস্তির পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুবিধা দিয়ে প্রচারণা চালানোর ফলে নতুন নতুন উদ্যোক্তারাও এ খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছেন।
পরিবহন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের পণ্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগ এখন বাড়তির দিকে। আর এতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে পণ্য পরিবহনে এক্সেল লোড নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ। নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় খাতটিতে এখন অতিরিক্ত যানবাহনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহনকারী প্রতিষ্ঠানের কিস্তি সুবিধা ও ব্যাংকঋণের সহজপ্রাপ্যতা থাকায় পুরনো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরাও এখন এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন।
এদিকে, মাত্রাতিরিক্ত ওজনের পণ্য নিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর জন্য এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ২০১২ সালের জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে। এখন এটি বাস্তবায়নে দিন দিন কঠোর হচ্ছে সরকার।
দেশে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-লরি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে যানবাহনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেড়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার হওয়ায় আগের তুলনায় এসব যানবাহনের দামও কমে গেছে। চাহিদা থাকায় বিক্রিও হচ্ছে অনেক বেশি। ওই কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পাঠানোর জন্য প্রতিটি ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ২৫ হাজার থেকে বেড়ে ২৮ হাজার টাকায় ওঠে, যার প্রেক্ষিতে এসব যানবাহনের বিক্রিও বেড়ে যায়।
আইশার ব্র্যান্ডের ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান রানার মোটরস সূত্রে জানা গেছে, এক্সেল লোড ব্যবস্থাপনায় সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পর থেকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে এখন বাড়তি চাকার অতিরিক্ত এক্সেলসংবলিত যানবাহনই বেশি বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগে এক বছর আগেও প্রতি মাসে ২০-২৫টি করে বিক্রি হতো। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০-৬৫টিতে। একসময় ছোট ছয় চাকার ট্রাকের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন সে স্থান দখল করেছে ১০ চাকার কাভার্ড ভ্যান। চাহিদা বাড়তে থাকায় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কয়েক মাস পরপরই প্রদর্শনী ও বিক্রয় মেলা, কাস্টমার মিট ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসংবলিত কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬-এর আগস্ট পর্যন্ত সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নিবন্ধিত ট্রাকের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬৩০টি। গত বছরের বছরের জুলাইয়ে এ নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৬টিতে। বছরের শেষ দিকে নভেম্বরেই তা ১০ হাজার ছাড়ায়। এছাড়া ২০১৬ সালের এপ্রিলে নিবন্ধিত কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৯৫টি। গত বছরের জুলাইয়ে দঁড়ায় ৩ হাজার ৯৫১টিতে। অর্থাৎ্ সোয়া দুই বছরের মাথায় বিআরটিএ- চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নিবন্ধিত কাভার্ড ভ্যানের নিবন্ধন বেড়েছে ১ হাজার ৭৫৬টি। অন্যদিকে একই সময় কার্গো ভ্যানের সংখ্যা ৮৫টি বেড়ে ২৩৯টিতে ও ডেলিভারি ভ্যানের সংখ্যা ২৯৬টি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৬টিতে। এ সময়ে বিআরটিএ চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৭টি থেকে বেড়ে ২ লাখ ২১ হাজার ৭০৩টিতে উন্নীত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পণ্য পরিবহন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ