Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষা বিদায়ের পথে

আবহাওয়ায় স্বাভাবিক পালাবদল নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ে দুর্যোগের মৌসুম সামনেই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আবহাওয়ায় শুরু হয়েছে স্বাভাবিক পালাবদল। বর্ষার ধারক-বাহক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর বিদায়ের পালা চলছে। এরফলে বর্ষাও বিদায়ের পথে। বাংলাদেশের জনজীবন, মানুষের জীবনধারণ, কৃষি-খামার, পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্যের বহুবিধ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব এবং অবদান রাখে বর্ষাকাল তথা মৌসুমী বায়ু। বর্ষা সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই তো বলা হয় ‘আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি’। তাছাড়া বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর তাবৎ ভাষা, কবিতা, গান, শিল্প-সাহিত্যের বড় অংশই দখল করে আছে ‘বৃষ্টি ও বর্ষা’। এরপরই রয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের স্থান।

সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ এই ঋতু প্রাণ-প্রাচুর্য্য আর বৈচিত্র্যে ভরপুর। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয়। বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরেও মাঝারি থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মৌসুমী বায়ু যথেষ্ট সক্রিয় না থাকায় বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। আশি^ন মাসের অর্ধেকেরও বেশি পার হয়েছে। অর্থাৎ শরৎ ঋতু প্রায় শেষের দিকে। হেমন্ত দরজায় কড়া নাড়ছে। দেশের অনেক জায়গায় অনাবৃষ্টি অবস্থা বিরাজ করছে। নদ-নদী, খাল-বিল ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রার পারদও ধীরে ধীরে কমে আসছে। গ্রামবাংলা, জনপদ, মাঠ-ঘাট, প্রান্তর-চরাচরে, আকাশপানে সূচনা হচ্ছে শান্ত-স্নিগ্ধ-শীতল আবহাওয়ার পরশ। খাল-নদী তীরে সফেদ কাশফুল বাতাসে দোল খাচ্ছে।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভোরবেলায় কোথাও কোথাও মিহি কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ধানের গোছার ডগায়, সবুজ গাছপালা, তরুলতায় জমছে ছোট্ট শিশিরবিন্দু। তবে এরই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ-নিম্নচাপ এমনকি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঘনঘটায় আবহাওয়া অশান্ত ও বিক্ষুব্ধ হওয়ার শঙ্কাও জেগে উঠছে। এদেশে অতীতকাল থেকেই ‘কার্তিকের (নভেম্বর) তুফান’ হিসেবে পরিচিত নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুম সামনেই।

পঞ্জিকার পাতার হিসাবে ‘আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল’ আগেই পেরিয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া-জলবায়ুর নিরিখে এদেশে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা এবং এর অবস্থানকালের উপরই নির্ভর করে ‘বর্ষা’র উপস্থিতি। গতকাল শনিবার আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে। বর্তমানে মৌসুমী বায়ু বিদায়ের প্রক্রিয়া চলছে। এরফলে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর কখনও কম সক্রিয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। সারা দেশে বৃষ্টিপাত কমে গেছে।

মেঘের দামামা বাজাতে বাজাতে এ বছর বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন ভারত, নেপাল, চীনসহ বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলে বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে বেশ আগেভাগে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে। এরপর দ্রুতই পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সক্রিয় হয়। গেল বছরেও মৌসুমী বায়ুর আগমন হয় আগেভাগে এবং বিদায় নেয় বিলম্বে। পর পর দুই বছরে মৌসুমী বায়ু অধিক সক্রিয় থাকায় বাংলাদেশ এবং ভারত, নেপাল, চীনের একাংশ বন্যা কবলিত হয়।

আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি অক্টোবর (আশি^ন-কার্তিক) মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে মৌসুমের বর্তমান সময়ের স্বাভাবিক হারে। পশ্চিমা বায়ুর সাথে পূবালী বায়ুর সংযোগ ঘটলে এ সময়ে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টি ঝরে।

আবহাওয়া বিভাগের পর্যালোচনায় জানা গেছে, চলতি বছর ভরা বর্ষা এবং বর্ষার পূর্ববর্তী (প্রাক-বর্ষা) ও বর্ষা-পরবর্তী (বর্ষাত্তোর) সময়কালে বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে। গেল আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশিহারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত জুলাই মাসে (আষাঢ়-শ্রাবণ) সারা দেশে সার্বিক বৃষ্টিপাতের গড় স্বাভাবিকের কাছাকাছি (৫ দশমিক এক শতাংশ কম) হয়েছে। গত জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

তবে গত মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ কম, এপ্রিল মাসে ৭৯ শতাংশ কম, মার্চ মাসে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম, ফেব্রুয়ারিতে ৯৯ শতাংশ কম, জানুয়ারিতে ৯৭.৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। স্বাভাবিকের তুলনায় সার্বিকভাবে চলতি বছর গড়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

বৃষ্টিপাত কমেছে, ভ্যাপসা গরম
মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয়। এরফলে দেশে বৃষ্টিপাত আরও কমেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ছাড়া প্রায় সারা দেশে অনাবৃষ্টি অবস্থা অব্যাহত থাকে। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারে ২৯ মিলিমিটার। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক স্থানে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় ভ্যাপসা গরম পড়ছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চাঁদপুরে ৩৫.৪ এবং সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ২৪.১ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫.২ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৭ ডিগ্রি সে.।

আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায়; ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

মৌসুুমী বায়ুর একটি বলয় ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ