Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৫ এএম

হতাশা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। করোনাকালীন সময়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। চাকরি হারানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। সাম্প্রতিক আত্মহত্যার প্রবণতা এবং এর সম্ভাব্য কারণ এটিই মনে করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ নারী-পুরুষও আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে দিন দিন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে অভিভাবকরা।

সাত দিনে চার শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনই আলাদা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। চার শিক্ষার্থী হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইমরুল কায়েস, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) তাহমিদুর রহমান জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের (সাবেক) মাসুদ আল মাহাদী (অপু) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার।

ইমরুল কায়েস গত ২৩ সেপ্টেম্বর যশোরে ঝিকরগাছায় গ্রামের বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি রাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

২৩ সেপ্টেম্বর রাতেই পাবনা শহরের একটি ছাত্রাবাস থেকে তাহমিদুর রহমান জামিলের (২২) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার লাশের পাশ থেকে ‘বাবা-মা ক্ষমা করো, গুড বাই’ লেখা চিরকুট পাওয়া যায়। তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান শহরের শালগাড়িয়া মেরিল বাইপাস এলাকার সাফল্য ছাত্রাবাসে থাকতেন তাহমিদুর রহমান জামিল। পারিবারিক কোনো একটি বিষয় নিয়ে কিছুদিন ধরে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তার সাড়া-শব্দ পাননি সহপাঠীরা। একপর্যায়ে কক্ষের দরজা খুলে তাকে ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখে থানায় খবর দেন তারা। পরে পুলিশ গিয়ে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।

ওসি আমিনুল ইসলাম আরও জানান, তার কক্ষ থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে ‘বাবা-মা ক্ষমা করো, গুড বাই’ এরকম কিছু কথা লিখে গেছেন ওই শিক্ষার্থী। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এরপর গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকা থেকে মাসুদ আল মাহাদীর (অপু) লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাঁনখারপুলে ভাড়া বাসায় থাকতেন অপু।

ওইদিন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, ঢাবির এক সাবেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করেছে।

মাসুদ আল মাহাদীর সরাসরি শিক্ষক এবং চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ফাহমিদুল হক ফেসবুকে এ প্রসঙ্গে লেখেন, ‘অপুকে ধারণ করার যোগ্যতা সিস্টেমের নেই...মেধাবী ছাত্র ছিল, সত্যিকারের মেধাবী। ফল ভালোও করত। গতানুগতিক ভালো ফল করাদের মতো সে ক্লাসে খুব নিয়মিত ছিল না। সে প্রশ্ন করত, প্রতিবাদ করত। ষাটের দশক কিংবা নিদেনপক্ষে আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেসব শিক্ষার্থী নিয়ে গর্ব করত, যাদের কারণে ছাত্র আন্দোলন বিষয়টা একটা স্বর্ণালি এক রোমান্টিসিজম এখন, অপু ছিল সে ধরনের শিক্ষার্থী।’

‘অনার্সে সে থার্ড হয়েছিল। অনার্সের রেজাল্টের পর একদিন অপুকে বললাম, মাস্টার্সের এক বছর বাড়তি একটু মনোযোগ দিলেই তুমি প্রথম হতে পারবা। সে বলল, আমি তো প্রথমই হতাম অনার্সে। হিসাব করে দেখেছি, একজন মাত্র শিক্ষক সেই প্রথম বর্ষ থেকে যে পরিমাণ কম নম্বর দিয়ে আসছেন, ওনার কোর্সে অ্যাভারেজ নম্বর পেলেই প্রথম হতাম। অপু আত্মহত্যা করেছে শুনছি। সিস্টেম কীভাবে প্রখর এক তরুণকে এদিকে ঠেলে দিতে পারে, তার একটি মাত্র উদাহরণ দিলাম।’

সবশেষ বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদারের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেলো। গ্রামের বাড়ির পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি গোপালগঞ্জ সদর থানার পাটিকেলবাড়ি ইউনিয়নের ভূপেন হালদারের ছেলে।

গোপালগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মিজানুর রহমান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পুলিশের ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কয়েকপাতা সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৮ পিএম says : 0
    নৈতিক শিক্ষার অভাব নৈতিকতার অভাব আত্মহত্যা মহাপাপ দুনিয়া আখেরাত সবকিছুই শেষ। আল্লাহর ভয়ংকর ভয়ানক শাস্তির মধ্যে পড়ে গেল জাহান্নাম অবধারিত হলো। দুনিয়ার অশান্তি অর্থের যন্ত্রণা বাবা মায়ের উপর রাগান্বিত হয়ে জীবন শেষ করে দেওয়া পৃথিবীর সব চায়তে বোকার কাজ। জীবন দেওয়া নেওয়ার মালিক আল্লাহ তকদিনের ফায়সালা আল্লাহ করেন। ক্ষনস্থায়ী ক্ষুদ্র জীবন প্রতিটি মুহুর্তো পরিক্ষা আসল জীবন পকৃত জীবন মৃত্যুর পর। পকৃত পক্ষে সাধারণ জীবন স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকাটাই পকৃত সুখ শান্তি। আখেরাতের চিন্তা কবরের চিন্তা হক হালালের চিন্তা সবকিছুই আপনার কাছে থাকবে যদি আপনার তকদিরে নামাজ থাকে আপনি যদি নামাজি বান্দা হন। পৃথিবীর সমস্ত নিয়ামত শান্তি সুখের পবিত্র স্থান আল্লাহর বায়তুল্লাহ। নামাজের মাধ্যমে আপনার মনের ব‍্যাথা দুঃখ যন্ত্রণা অভাব অভিযোগ আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করুন। মনের শান্তি পাবেন আল্লাহর সাহায্য পাবেন। যে মা বাবা বুকের রক্ত কে পানি করে দিনরাত পরিশ্রম করে তিলে তিলে একটি সন্তান কে বড় করেছেন। অর্থকষ্টে কখনো বাবা মায়ের উপর অভিমান করে বা বাবা মায়ের উপর রাগান্বিত হওয়া শতভাগ শয়তানের কাজ। শয়তান হতে বাচতে অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য চায়তে হবে। আল্লাহ্ প্রত‍্যেক মায়ের সন্তান দের সত‍্য বুঝার তৌফিক দেওয়ার ফরিয়াদ করছি। আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ