বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া মানব জীবন অচল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বান্দা আল্লাহ তাআলার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তিনি সাহায্য না করলে মানুষের পক্ষে কোনো কাজ করাই সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা তাঁরই কাছে সাহায্য কামনা করা বান্দার অবশ্যকর্তব্য। তাইতো বান্দা প্রতি নামাজে, প্রতি রাকাতে বলে : আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই। (সূরা ফাতিহা : ৪)।
নিজের জীবনে আল্লাহ তাআলার সাহায্য পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো, অন্যকে সাহায্য করা। মানুষকে সহযোগিতা করলে নিজের কাজেও আল্লাহ তাআলার সাহায্য পাওয়া যায়। এটা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এর ফজিলতও অনেক। বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক বিখ্যাত হাদিসে এসেছে : বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে নিরত থাকে, আল্লাহও তার সাহায্যে থাকেন। (সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯)।
উক্ত হাদিসে মানুষকে সাহায্য করার একটি বিশাল ফজিলত বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করবে আল্লাহ তাআলাও তাকে সাহায্য করবেন।
সরাসরি সাহায্য করা কিংবা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করাসহ সব ধরনের সাহায্যই এর অন্তর্ভুক্ত। সব শ্রেণির মানুষকে সাহায্য করাও এর অন্তর্ভুক্ত। সকল মুসলমান ভাই ভাই। হাদিসেও মুসলিম না বলে ভাই শব্দ বলা হয়েছে। মানুষ আপন ভাইকে যেমন আন্তরিকতার সাথে সাহায্য করে, তেমনি তার মুসলমান ভাইকেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করবে।
আরেকটি বড় হাদিসের একাংশে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ যর গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন : কোনো কারিগরকে সাহায্য করো অথবা কোনো অক্ষম ব্যক্তির জন্য কাজ করো। (সহীহ মুসলিম : ৮৪; সহীহ বুখারী : ২৫১৮)।
এই হাদিসে নির্দিষ্ট করে যারা জীবিকা উপার্জনের জন্য নিজে পরিশ্রম করে, তাদের সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা দিয়ে, আবার কোনো ক্ষেত্রে তার কাজে সহযোগিতা করে। যার দ্বারা যেমন ও যতটা সহযোগিতা করা সম্ভব, সেটাই করা।
কোনো কারিগরকে তার কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি আরেকটি বড় সওয়াবের ক্ষেত্র হলো, যে ব্যক্তি কোনো কাজ জানে না, তাকে উপযুক্ত কোনো কাজ শিখিয়ে দেয়া। যার জন্য যে ধরনের কাজ সহজ এবং উপযুক্ত তাকে সে কাজ শিখিয়ে দেয়া। অথবা তার কাজের ক্ষেত্র বানিয়ে দেয়া।
মানুষকে নানাভাবেই সাহায্য-সহযোগিতা করা যায়। যেমনÑ রাস্তাঘাটে অনেক বয়স্ক মানুষকে দেখা যায়, পরিশ্রম করে নিজের কাজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু পয়সা উপার্জনের জন্য কষ্ট করে তাকে কাজ করতে হচ্ছে। ওই মুহূর্তে তাকে সাহায্য করা। কেউ হয়তো ভারী কোনো বোঝা তুলছে, তাকে সেটা তুলতে সাহায্য করা। কেউ কোনো ভারী জিনিস নামাচ্ছে তাকে সেটা নামাতে সাহায্য করা। কেউ কোনো কাজ করতে না পারলে অথবা কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা। মোটকথা, যার যেমন সাহায্য-সহযোগিতা দরকার, নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করে দেয়া।
যারা আমাদেরই অধীনে কাজ করে, তাদেরও কাজে সাহায্য করা। তাদের কাজ হালকা করে দেয়া, কমিয়ে দেয়া। এতে তাদের উপকারের পাশাপাশি নিজেরও উপকার রয়েছে।
আরেকটি উপায় হলো, অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কোনো কাজের কথা বলে, কিন্তু সেই কাজ করার জন্য তার কাছে কোনো উপকরণ থাকে না। তার কাছে সেটা কেনার মতো পয়সাও থাকে না। তাকে কিছু টাকা-পয়সা দিলে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অথবা বানাতে পারবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।