পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনটি ছিল চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন। তবে এটা টেস্ট ক্রিকেটের দ্বিতীয় ইনিংস নয়। ওই দিন রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় তামিমা সুলতানা তাম্মি নামের এক মেয়ের সাথে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন নাসির। অনুষ্ঠানে পরিবারের লোকজন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে নাসিরের নববধূ তামিমা সুলতানা তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। কাজ করেন বিদেশি একটি এয়ারলাইন্সে। নাসিরের সাথে এটা তার দ্বিতীয় বিয়ে। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তামিমার প্রথম স্বামী রাকিব হাসান। শুধু তাই নয়, তাদের বিয়ের পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নেয়। কেউ কেউ বলেন, নাসির-তামিমার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়েছে। এক পর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। পরে আদালত বিষয়টি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্ত শুরু করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিয়ে বৈধ উপায়ে হয়নি বলে বলা হয়েছে। এছাড়াও তামিমা ও রাকিব হাসানের বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। রাকিব হাসানকে ডিভোর্স না দিয়েই তামিমা সুলতানা তাম্মি ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে বিয়ে করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তিনজনকে অভিযুক্ত করে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তামিমা রাকিবকে তালাক দেননি। আইনগতভাবে রাকিব তালাকের কোনো নোটিশও পাননি। তামিমা উল্টো জালিয়াতি করে তালাকের নোটিশ তৈরি করে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালাক না দেওয়ার ফলে তামিমা তাম্মী এখনও রাকিবের স্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। দেশের ধর্মীয় বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী এক স্বামীকে তালাক না দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা তাম্মীর বিয়ে অবৈধ। স্বামী থাকা অবস্থায় অবৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক দেখিয়ে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তারা ৪৬৮/৪৭১/৪৯৪/৪৯৭/৫০০/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ বিয়েটিতে তামিমার মা সুমি আক্তারকেও দোষী বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর বাদীপক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসান আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। তবে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা না দিয়ে নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি তাম্মির স্বামী দাবি করে রাকিব হাসান একটি মামলা করেছিলেন। মামলায় আগের বিয়ে গোপন থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিয়ে, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়ায় মানহানির অভিযোগ আনা হয়।
মামলা সূত্রে যায়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রæয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে জানেন। মামলায় আরও বলা হয়, তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার শিশু কন্যা মানসিক বিপর্যস্ত। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে।
অপরদিকে, তামিমা তাম্মি ফিরতে চাইলে আপত্তি নেই, তাকে গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী রাবিব হাসান। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয় তামিমা যদি ফিরে আসতে চায় তাকে কী আপনি গ্রহণ করবেন? জবাবে রাকিব বলেন, তামিমা আইনত এখনো আমার স্ত্রী। সে যদি ফিরতে চায় আমার পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পিবিআই’র সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে এসেছে প্রকৃত ঘটনা। নাসির ও আমার স্ত্রী তামিমা অবৈধভাবে বিয়ে করেছে। তামিমা যদি সংসার করতে চায়, সে বিষয়টিও আমি বিবেচনায় নেব। এ বিষয়ে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবো। আমার দায়ের করা মামলায় যেহেতু আদালতে চার্জশিট জমা হয়েছে, সেহেতু বিচারিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়েই আমি এমনটা চাইবো।
অপরদিকে, নাসির-তামিমার মামলাটি তদন্তে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তালাক হতে গেলে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার তার কোনোটিই মানেননি ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও এয়ারলাইন্স কোম্পানি সাউদীয়ার কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মী।
তিনি বলেন, এক সময় রাকিব হাসানের স্ত্রী ছিলেন তামিমা, কিন্ত নাসির হোসেন তামিমাকে আবারও বিয়ে করেছেন। আগের বিয়ের ডিভোর্স হয়েছে কি-না তা আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করার কথা তার। তামিমা আমাদের কাছে দাবি করেছেন তিনি রাকিবকে ডিভোর্স দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে রাকিব কেন মামলা করলেন?
পিবিআই প্রধান বলেন, তামিমা তালাকপ্রাপ্তা হয়েছেন নাকি হননি এ বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখলাম তালাক হতে গেলে তিনটি শর্ত লাগে। প্রথমত: হলো সংশ্লিষ্ট কাজীকে উপস্থাপন করা; দ্বিতীয়ত: যিনি তালাকপ্রাপ্ত হবেন অথবা যাকে তালাক দেয়া হবে তার বাসায় একটি নোটিশ পাঠানো এবং তৃতীয়ত: যিনি তালাকপ্রাপ্ত হবেন তার স্থায়ী ঠিকানার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যামের মাধ্যমে একটি নোটিশ পাঠাতে হবে। তামিমা-রাকিবের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়তটিতে দাবি করা হয়েছে রাকিব হাসানের বাসায় নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যে তারিখে চিঠিটি রাকিব হাসানের বাসায় প্রসেস করা হয়েছে সেই সময় ওই বাসায় রাকিব থাকতেন না। অর্থাৎ চিঠি প্রসেসের ছয় মাস পূর্ব থেকে রাকিব অন্য বাসায় ছিলেন। যেই তারিখে চিঠিটি দেখানো হয়েছে সেই সময়ের ঠিকানাটি ভুল ছিল। এই প্রসেসটি মানা হয়নি এবং তারা সঠিক কথা বলছেন না।
নাসির ও তামিমা ডাকযোগে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে যে চিঠিটি দেখিয়েছেন তা সঠিক দেখাননি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমাদেরকে বলেছেন তিনি এমন কোনো চিঠি পাননি। তালাক হতে গেলে যে প্রসেস মানা দরকার তার কোনোটিই মানা হয়নি, সুতরাং নাসির-তামিমার বিয়ে অবৈধ।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, তামিমা যে পাসপোর্ট ব্যবহার করেন তাতে তালাক দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালে। কিন্তু ২০১৮ সালে পাসপোর্ট নবায়নের সময় স্বামীর নাম রাকিব হাসান দেওয়া হয়। আমরা বলতে পারি বিয়ে চলমান অবস্থায় তালাক দেখানো হয়েছে। নাসিরের উচিত ছিল তামিমা যে তালাকনামাটি দেখিয়েছেন তা সঠিক কি-না সেটি যাচাই করা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে তালাকনামাটি জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে এবং এই জালিয়াতিতে তামিমার মা সুমি আক্তার সহযোগিতা করেছেন। নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে পিবিআই এখন কোনও ব্যবস্থা নেব কি-না জানতে চাইলে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এটি আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে, বৈধ উপায়ে হয়নি ক্রিকেটার নাসির-তামিমার বিয়ে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন, গ্রেফতারি পরোয়ানা না দিয়ে নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন এবং তামিমা ফিরতে চাইলে রাকিবের আপত্তি নেই; এমন মন্তব্য নিয়ে ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ বলছেন, শেষ হচ্ছে নাসির-তামিমার দ্বিতীয় ইনিংস। তবে এটা দেখতে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।