Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ শব্দ দূষণের শহর খুলনা, সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড ১৩২ ডেসিবল

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫০ পিএম

খুলনা মহানগরী এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের ৫ শতাংশ একবারেই কানে শোনেননা। আর ৩৫ ভাগ সদস্য কানের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শব্দ দূষণের কারণে বধিরতা ছাড়াও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, গর্ভবতী নারীদের জটিলতা ও মানসিক সমস্যা বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্যের জন্য শব্দের নিরাপদ মাত্রা ৪৫ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে খুলনা মহানগর এলাকায় সর্বোচ্চ ১৩২ ডেসিবল মাত্রার শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে। গবেষণা থেকে শব্দ দূষণের কারণ হিসেবে যানবাহনের উচ্চশব্দ ও হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির শব্দকে প্রধানত দায়ি করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, মাইক ও সাউন্ড বক্সের আওয়াজ এবং বিভিন্ন ইস্যুতে পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে চরমে পৌঁছে দিচ্ছে।

আজ শনিবার খুলনায় পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সকালে নগরীর অফিসার্স ক্লাবে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারীত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় সচেতনতামূলক এ কর্মসূচিতে শতাধিক পরিবহন চালক-শ্রমিক অংশ নেন।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো: মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) ও প্রকল্প পরিচালক মো: হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুনুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বিমল কৃষ্ণ মল্লিক, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান ডা: মো: কামরুজ্জামান ও পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান।

প্রকল্প পরিচালক মো: হুমায়ুন কবির বলেন, করোনা অতিমারী গত দেড় বছরে আমাদের যে ক্ষতি করেছে তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি ক্ষতি করছে নীরব ঘাতক শব্দ দূষণ। দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে কঠোর আইন আছে, কিন্তু আইন না মানার প্রবণতার কারণে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। উন্নত দেশে ৯০ ভাগ মানুষ আইন মানে, বাকি ১০ ভাগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে কাজ করতে হয়। আর আমাদের দেশে ঘটে উল্টোটা। গুরুত্বহীন কাজে সময় নষ্ট করায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ২০৪০ সালে উন্নত দেশে উন্নীত হতে হলে আচরণগত ও অভ্যাসগত পরিবর্তন আনতে হবে।

ট্রাফিক পুলিশের পাঁচ ভাগ সদস্য একেবারে কানে শোনেন না আর ৩৫ ভাগ সদস্য ভুগছেন নানা সমস্যায়। এ তথ্য জানিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সিগন্যালে এক মিনিট আটকা পড়লেই আমরা অধৈর্য হয়ে হর্ণ বাজাতে শুরু করি। আমাদের দেশে শব্দ দূষণের মাত্রা ১২০ ডেসিবেলের ওপরে। তিনি যানবাহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ণ খুলে ফেলার আহ্বান জানান।

খুমেক হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান ডা: মো: কামরুজ্জামান বলেন, শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারলে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ বধির হয়ে যাবে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। মেজাজ বাড়বে, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করবে। কাজে মনঃসংযোগ হারাবে। কর্মক্ষমতা কমবে, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়বে।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে জানানো হয়, দেশের ১১ টি সিটি কর্পোরেশন ‘নীরব এলাকা‘ ঘোষণা ও বাস্তবায়নে কাজ করেছে। খুলনা মহানগরের ২১ নং ওয়ার্ডের কেডি ঘোষ রোড, রতন সেন সরণি, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড, ২২ নং ওয়ার্ডের যশোর রোড, পুরাতন যশোর রোড, কেডি ঘোষ রোডের সংযোগ ও আপার যশোর রোড নীরব এলাকার আওতাভূক্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ