Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফেসবুকের কারণে খুঁজে পেলেন নিজেকে, ৭০ বছর পর দেখতে যাচ্ছেন মাকে!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:১৪ পিএম

ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ৭০ বছর পর শেকড় খুঁজে পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া শিশু এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। গেল এপ্রিল মাসে নিজের হারিয়ে যাওয়ার গল্প ফেসবুক পোস্টে লেখার মাধ্যমে আপনজনদের খুঁজে পেয়েছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল (শনিবার) মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাচ্ছেন তিনি।

দীর্ঘ ৭০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় চাচার সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান ১০ বছরের কুদ্দুস। পরে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন তিনি। এ দীর্ঘ সময়ের প্রতিটি দিন ছেলের পথ চেয়ে কাটিয়েছেন তার মা। এরই মধ্যে মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন তিনি। এ সময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলের সন্ধান না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার ও স্বজনরা। এখনও তার পরিবারের মা ও এক বোন বেঁচে আছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবার নিজ জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন।

স্থানীয় ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় শিশু অবস্থায় হারিয়ে যান কুদ্দুস। এরপর থেকে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে সংসার শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার নানা চেষ্টা করে যান কুদ্দুস। তবে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সন্ধান মেলেনি। অবশেষে গেল এপ্রিলে আইয়ূব আলী নামে পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন।

এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা। আইয়ুব আলীর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে নিজের শেষ ইচ্ছা হিসেবে নিজের পরিবারের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করার কথা লেখেন। ওই ফেসবুক পোস্ট দেশের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ের তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ভাতিজা সে পোস্ট দেখে নিজের হারিয়ে যাওয়া চাচার কথা জানান পরিবারের কাছে। এরপর ফেসবুকে তাদের যোগাযোগ ও কথা হয়। এরপর নিজের সবকিছু খুলে বলে শেকড় খুঁজে পান তিনি।

নিজের পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার পর কুদ্দুস বলেন, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। দীর্ঘদিন পর হলেও আমার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। আমার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। আগামী শনিবার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবো। আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হবে এটার চেয়ে ভালোলাগার কিছু হতে পারে না। বাড়ুইপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের এক প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা সবাইকে বলতেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। অবশেষে ফেসবুকে লেখার পর তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। দীর্ঘদিন পর একটা মানুষ তার একান্ত আপনজনদের খোঁজ পেয়েছেন। এছাড়া তার জন্মস্থানের মানুষ এখন থেকে আমাদের এখানে আসবে। আবার আমরাও নতুন এক জায়গার কিছু মানুষের সঙ্গে নতুন করে আত্মীয়তার সুযোগ পাবো। এদিকে, আইয়ুব আলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল আবদুল কুদ্দুসের ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও তার ফেসবুক পেজে আপলোড করেছিলেন। আর ফেসবুকের ওই পোস্টের ওপরে লিখে ছিলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার এ বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবার থেকে এতগুলো বছর বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন। কেউ যদি তার কথা শুনে চিনতে পারেন তাহলে যোগাযোগ করুন। এরপর বাকিটা ইতিহাস। সাড়া পড়ে যায় এবং পরিবারের খোঁজ মেলে।



 

Show all comments
  • Dadhack ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:০২ পিএম says : 0
    We can use Facebook in positive manner.
    Total Reply(0) Reply
  • Israfil ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:১৯ এএম says : 0
    Very nice. Nothing better than finding one's own family especially the mother.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেসবুক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ