চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
জি এম মুজিবুর রহমান
নারীরাও মানুষ। মানুষের স্বাধীনতা-আচরণ যুক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্ণীত হয়ে থাকে। প্রকৃতিগতভাবে নারী ও পুরুষ সকল ক্ষেত্রে পূর্ণ সমতা লাভ করেনি তাদের কাজ ও বৃত্তিগুলো এমনভাবে বণ্টন করা হয়েছে, যাতে তারা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে। নারী গর্ভে সন্তান ধারণ করে, পুরুষের পক্ষে যা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে পুরুষের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারীর পক্ষে অসম্ভব। নারী-পুরুষের শারীরিক গঠনও ভিন্ন। নারী-পুরুষের কাজও তাদের চাহিদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিসংগত। এর বাইরে কেউ কোন কিছু করতে চাইলে বিপত্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে।
প্রত্যেক জিনিসের ভাল ও মন্দ দু’টি দিক রয়েছে। নারীদের জন্যও ভালমন্দ বৈশিষ্ট্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (দঃ) থেকে নির্দিষ্ট আছে। এই বৈশিষ্ট্য যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে তারাই ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ নারী। রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেন, দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। এখানে যে যত সুবিধাই গ্রহণ করুক না কেন সেটা সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী। তবে এই পার্থিব জগতে ধার্মিক স্ত্রী ব্যতীত উত্তম আর কোন জিনিস হতে পারে না (ইবনে মাজা)। অন্য হাদিছে আছে, যে আচার-আচরণে নিষ্ঠাবান, যে তার স্ত্রীর প্রতি সদয় সেই প্রকৃত মুমিন-মুসলমান। (তিরমিযি ও নাসাঈ শরিফ)। নারী জাতির উন্নতি ব্যতীত সমাজকে পরিপূর্ণ সমাজে পরিণত করা যায় না। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, ‘মানবদেহে যেমন দুই চোখ, দুই হাত, দুই পা, সমাজদেহে তেমনি নর-নারী। যে দেহে এক চোখ কানা, এক হাত নুলা, এক পা খোঁড়া সে দেহ বিকলাঙ্গ। নারী জাতির সুষ্ঠু উন্নতি ব্যতীত সমাজকে সমুন্নত বলা যায় না।’ সমাজকে সমুন্নত করতে হলে নারী জাতির উন্নতি ঘটাতে হবে আর সে উন্নতি হতে হবে সুষ্ঠু উন্নতি। পরিতাপের বিষয় বর্তমান বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি, উগ্র স্বাধীনতা বিরাজ করছে কিন্তু সুষ্ঠু ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য পরিদৃষ্ট হচ্ছে না।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ ‘বেদ’-এ আছে, ‘পুরুষ হ’ল শৌর্য, নারী হ’ল সৌন্দর্য। পুরুষের বৈশিষ্ট্য হ’ল বিচার ও শক্তি এবং এর দ্বারাই সে সব কিছুর পরিচালনা করে। নারীর বৈশিষ্ট্য হ’ল ঘরের সামঞ্জস্য বিধান এবং পুরুষের বিচার বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করা।’ বেদ-এ নারী ও পুরুষের কর্মের একটা ধারা ও পরিসীমা বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো; শান বেশি না দিলেও কেবল ভারে অনেক কাজ করতে পারে। মেয়েদের বুদ্ধি কলম-কাটা ছুরির মতো; যতই ধার দাও না কেন, তাতে বৃহৎ কাজ চলে না।’ পুরুষদের যোগ্যতা ও শক্ত কাজ করার ক্ষমতার বর্ণনার পাশাপাশি নারীর কর্মের পরিধির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এখানে। নারীকে বসে থাকতে বলা হয়নি। দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হবে তাদেরও, তবে কর্ম-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। রবী ঠাকুর অন্যত্র বলেছেন, ‘প্রাণকে নারী পূর্ণতা দেয়, এই জন্যই নারী মৃত্যুকেও মহীয়ান করতে পারে।’
নৈতিকতা সম্পর্কিত দায়িত্ব খুবই ব্যাপক ও বিস্তীর্ণ। নারীর দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইসলামপূর্ব যুগে পুরুষের তুলনায় নারীর গুরুত্ব ও মর্যাদা ছিল অনেক কম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। সে সময়কে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ বলা হতো। সে যুগে পুরুষরা নারীর প্রতি অন্যায় অপরাধ করলে নারীর পক্ষে প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব ছিল না। শক্তিশালী গোত্র বা গোত্র প্রধানদের অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ ছিল না। পবিত্র কোরআন এ সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়েছে। বিষয়-সম্পদ, মান-সম্মান সকল ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর অধিকার বেশি দেয়া হয়েছে। ইসলাম নারীকে সম্পদে মালিকানা দান করেছে। নারী ইচ্ছা মতো তার সম্পদ ব্যয় করতে পারে। এ ব্যাপারে পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে নারীরও অনুরূপ অধিকার আছে। স্বামী, পিতা বা অন্য কারো মাত্রাতিরিক্ত দায়দেনা পরিশোধের জন্য নারীর সম্পদে হস্তক্ষেপ করা যায় না। নারী ইচ্ছা করলে তার সম্পদ কেনাবেচা, দান-খয়রাত করা ও পরিশ্রম করে সম্পদ অর্জন করতে পারে। ইসলামপূর্ব যুগে পিতা বা স্বামীর সম্পদে নারীর কোন অধিকার ছিল না। নবুয়তের পঞ্চদশ বছরে পিতা ও স্বামীর সম্পদে মহিলাদের অধিকার সংক্রান্ত বিধান নাযিল হয়।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।