পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীতকাল শুরু না হতেই বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে মিটমিটিয়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও গ্যাস সরবরাহ কমছে। দেশের জ্বালানি সঙ্কট কাটাতে উচ্চমূল্যে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার এলএনজি কেনা হচ্ছে। কিন্তু কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘদিন থেকেই গ্যাসের সঙ্কটে কাজ ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চালু কারখানাতেও উৎপাদন প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছিল উদ্যোক্তাদের। এ পরিস্থিতিতে ঘাটতি মেটাতে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমছে, বাড়বে ব্যয়। স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সমুদ্রেও অচিরেই অনুসন্ধান শুরু হবে। পুরোনো ক‚প ওয়ার্ক করে ও হাইপ্রেসার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এলএনজি আমদানি ব্যয় দিন দিন বেড়ে চলছে। বাড়ছে ভর্তুকিও। অর্থবছরে (২০২০-২১) এলএনজি আমদানিতে দুই হাজার ৮১২ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।
কয়েক মাস ধরে এলএনজি আমদানি কম হচ্ছে। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনও কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে গ্যাস সরবরাহে। দেশীয় গ্যাসের মজুদও কমে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে ধীরগতির কারণে নতুন গ্যাস ক্ষেত্রও আবিস্কৃত হচ্ছে না। ফলে আগামীতে এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়বে। জ্বালানি আমদানি ব্যয় বাড়বে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়তির দিকে। বস্ত্র শিল্পকারখানায় গ্যাস সঙ্কটের চিত্র এবং বাজার হারানোর শঙ্কার কথা তুলে ধরেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা। এই সঙ্কট সমাধানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজার থেকে এলএনজি না কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশীয় ক‚পগুলো থেকে কম গ্যাস মিলছে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হওয়ায় সঙ্কট হচ্ছে। তবে সরকার স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সমুদ্রেও অচিরেই অনুসন্ধান শুরু হবে। পুরোনো ক‚প ওয়ার্ক করে ও হাইপ্রেসার জোন থেকে গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সচিব বলেন, সামনে আরও ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বসবে। স্থলভাগেও এলএনজি স্টেশন করার কাজ চলছে। ফলে আগামী বছরগুলোয় সঙ্কট কমে যাবে।
এ বিষয়ে পিডিবি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাসের সরবরাহ কমলে তেল ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে।
দীর্ঘদিন থেকেই গ্যাসের সঙ্কটে কাজ ব্যাহত হচ্ছে শিল্প খাতে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। চালু কারখানাতেও উৎপাদন প্রায়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছিল উদ্যোক্তাদের। এ পরিস্থিতিতে ঘাটতি মেটাতে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৩০ কোটি ঘনফুট। গত সপ্তাহে পেট্রোবাংলা মোট সরবরাহ করে ৩১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। ঘাটতি ছিল ১২০ কোটি ঘনফুট। গত এক দশকের প্রথম দিকে সরকারের নানা কার্যক্রমে দেশের দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বেড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছেছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশেষ করে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অচলাবস্থার কারণে বর্তমানে তা কমে ২৪০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২৪২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে।
বর্তমানে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দিনে ২৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। জ্বালানি বিভাগের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২৩০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসতে পারে। বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত না হলে ২০২২-২৩ সালে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে দিনে গ্যাস উৎপাদন ১৮.৪ কোটি ঘনফুট কমতে পারে। ২০২৩-২৪ সালে দৈনিক উৎপাদন ৪৩.৫ কোটি ঘনফুট কমে যেতে পারে। এ সময় শেভরনের অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বন্ধ হতে পারে। বিকল্প হিসেবে সরকার এলএনজির আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ হয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে, না হয় সরাসরি খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে এলএনজি কেনে। দাম কম থাকলে খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনা লাভজনক। কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় আপাতত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনছে না সরকার। গত কয়েক মাস ধরে অনেক দেশে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে গেছে। বেড়েছে এলএনজির চাহিদা।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। কাতারের রাস লাফান লিকিউফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানির গ্যাস ১৫ বছর চুক্তির আওতায় কিনছে পেট্রোবাংলা। চুক্তি সই হয় ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর। গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১১৩টি জাহাজে এলএনজি সরবরাহ করেছে রাস গ্যাস। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১১টি, ২০১৯-এ ৪৩টি, ২০২০-এ ৪০টি এবং চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৯টি জাহাজ এসেছে। এ বছর আরও ২১টি জাহাজে এলএনজি সরবরাহ করার কথা রাস গ্যাসের।
ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে তাদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৯০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে মিলছে সর্বোচ্চ ১৭০ কোটি ঘনফুট। আরেকজন কর্মকর্তা জানান, জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় সঙ্কট বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, ময়মনসিংহের শিল্প এলাকা গুলোতে সঙ্কট বেশি হচ্ছে। বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমছে, বাড়বে ব্যয়। জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। আগের দিন মঙ্গলবার গ্যাস সরবরাহ নেমে আসে ১১৩ কোটি ঘনফুটে। এতে বেড়ে যায় তেলের ব্যবহার।
গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৪৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে গ্যাসচালিত কেন্দ্র থেকে ১৩৬.৪১ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। গ্যাসের অভাবে ৯৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি। গ্যাস স্বল্পতায় দুই হাজার ২০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হয়েছে। বিপরীতে গত সপ্তাহে তেল দিয়ে উৎপাদিত হয় ৫১.৪৮ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা। তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮.৫৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এদিকে তেলের ব্যবহার আরও বাড়তে চলেছে। কারণ গত ২৫ আগস্ট এক বৈঠকে বলা হয়, বিদ্যুতে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমানো হবে। এই গ্যাস দিয়ে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। গ্যাসে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় গড়ে তিন টাকা ২৬ পয়সা। ফার্নেস অয়েলে ব্যয় ইউনিট প্রতি ১৩ থেকে ১৪ টাকা। আর ডিজেলে ব্যয় ১৮ থেকে ২৬ টাকা। ব্যয় বাড়লে বিদ্যুতে ভর্তুকিও বাড়বে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, শিল্প শ্রমিক ও দেশের স্বার্থে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাই, প্রণোদনা চাই না। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের মধ্যে নিটওয়্যারের ৯০ শতাংশ আর ওভেন পোশাকের ৪০ শতাংশ স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলো সরবরাহ করছে।
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অবস্থিত টেক্সটাইল মিলগুলোয় গ্যাসের চাপ সবচেয়ে কম। এ কারণে স্থানীয় মিলগুলো বেশি সঙ্কটে আছে। কোটি কোটি টাকার মেশিনারিজ নষ্ট হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।