চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আল্লাহ তায়ালা বড় চমৎকার করে এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। নানারকম সৌন্দর্যময় আর নয়নাভিরাম বস্তু দিয়ে এই পৃথিবী সাজিয়েছেন। আপন রহমত এবং দয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে তিনি মানুষকে পাঠিয়েছেন। নিজের ‘খলীফা’ (প্রতিনিধি) হিসেবে। যারা আপন রবের ইবাদত করবে। তার সন্তুষ্টি মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে। ইরশাদ হয়েছে: আমি মানুষ ও জিনকে কেবল এ জন্যেই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে। (সূরা যারিআত : ৫৬)
আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষ প্রতিনিয়ত আল্লাহ তায়ালার রহমত ও দয়ার মুখাপেক্ষী। শুধু মানুষ নয়, প্রতিটি বস্তুই আল্লাহ তায়ালার করুণা ভিখারী। আল্লাহর রহমত, দয়া ও করুণা ছাড়া কারো কারো জন্যে এই পৃথিবীতে এক মুহূর্তও টিকে থাকা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালার রহমত, দয়া ও করূণা লাভের উপায় কি? কোন পন্থা অবলম্বন করলে আল্লাহর রহমতের সাগরে অবগাহন করা যাবে? কোন সে আমল যার বরকতে মানুষের জীবন রহমতের স্নিগ্ধ জলধারায় সিক্ত হয়? হ্যাঁ, আজ আমরা এমন একটি বরকতময় রহমতে ভরা আমল নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ, যে আমলটি অফুরন্ত বরকত ও রহমতের আধার। যে আমল মানুষের জীবনকে আলোয় আলোয় ভরে দেয়। একরাশ স্নিগ্ধতা তার জীবনজুড়ে বিরাজ করে। এক পশলা রহমের বৃষ্টি তার হৃদয় ভূমিকে সিক্ত করে রাখে। কি সেই বরকতময় আমল? দরুদ শরীফ। আরবীতে যাকে বলে আস সালাত আলান নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ রাসূল,আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিবেদন করে দরুদ প্রেরণ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয় একটি আমল। এতে করে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনগন! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব : ৫৬)। আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে মুমিনদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি দরুদ প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই প্রত্যেক মুমিনের জন্যে অবশ্য পালনীয় হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ও ভালোবাসা উজাড় করে দরুদ প্রেরণ করা। দরুদ প্রেরণ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। দরুদ প্রেরণকারীর উপর তিনি রহমত বর্ষণ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছেন, নবীজী বলেন : যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাজিল করেন। (সহীহ মুসলিম : ১/৩০৬)। দরুদ প্রেরণের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য অর্জিত হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে যে আমার উপর বেশি বেশি দরুদ প্রেরণ করে। (জামে তিরমীযী :২/২৮৪ ইমাম তিরমীযী রহ. হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।) জুমার দিন বেশী বেশী দরুদ প্রেরণ করা উচিত । এটা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র নির্দেশনা। হযরত আউস ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- তোমাদের দিনসমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমার দিন। এ দিন তোমরা বেশি বেশি করে আমার প্রতি দরুদ পাঠ কর। (সুনানে আবু দাউদ :১/১০৪৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র নাম উচ্চারিত হলে দরুদ শরীফ পড়া প্রতিটি মুমিনের প্রতি ভালোবাসার দাবি। একজন মুমিন তার প্রেমাস্পদ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাম শুনলেই একবুক ভালোবাসা নিয়ে নবীজীর উপর দরুদ পাঠ করবে - এমনটাই কাম্য। কিন্তু এরপরেও যারা প্রেমাস্পদের নাম শুনে দরুদ পড়ে না তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাদেরকে ‘কৃপণ’ বলে অভিহিত করেন। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক(ধ্বংস হয়ে যাক) যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ আমার উপর দরুদ পাঠ করে না। (জামে তিরমীযী : ৫/৩৫৪৫ )।
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : ঐ ব্যক্তি কৃপণ যার কাছে আমার নাম উচ্চারিত হয় অথচ সে আমার উপর দরুদ পাঠ করে না। (জামে তিরমীযী :৫/৩৫৪৬ )।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।