পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার পক্ষপাতী নয় যুক্তরাষ্ট্র। বরং মার্কিন সরকার আঞ্চলিকভাবে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের কথা জানান। সেসময় সন্ত্রাসীদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র পৌঁছাতে না দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের সক্ষমতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে কাশ্মির ইস্যুতে একটি অর্থপূর্ণ আলোচনায় বসার জন্য ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানান কিরবি। ভারতের সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক জঙ্গি হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য অনলাইনে একটি পিটিশন দায়ের করে প্রবাসী ভারতীয়রা। বৃহস্পতিবার জন কিরবির কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। জবাবে কিরবি বলেন, এ ধরনের বিল সংক্রান্ত বিশেষ কিছু আমার নজরে পড়েনি এবং অবশ্যই আমরা এমনটা করছি না। ঝুলে থাকা কিংবা প্রক্রিয়াধীন থাকা কোনও আইন নিয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না উল্লেখ করে কিরবি বলেন, আমরা অঞ্চলের সাধারণ হুমকি, সাধারণ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে পারি এবং এ ব্যাপারে আমি বলতে পারি যে আমরা পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব। কাশ্মির ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলায়নি উল্লেখ করে কিরবি বলেন, কাশ্মির ইস্যুটির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান বদলায়নি। আমরা কাশ্মির ইস্যুতে দুই পক্ষের সঙ্গেই কাজ করতে চাই। আমরা অবশ্যই চাই ওই এলাকায় যে উত্তেজনা চলছে তা কমে আসুক ও অর্থপূর্ণ আলোচনা চলুক এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে ইস্যুটির সমাধান হোক।
প্রসঙ্গত, ৮ জুলাই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন কাশ্মিরি তরুণ বুরহান মুজাফফর ওয়ানি। হিজবুল মুজাহিদিনের এ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কাশ্মির। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর উরি’র সেনাঘাঁটিতে হামলায় ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানি। এ হামলার পর কাশ্মিরের উত্তেজনা রূপ নেয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবস্থায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশই কাশ্মির ইস্যুতে জোরালোভাবে নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরে। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে কাশ্মিরে ভারতের নিপীড়নের উল্লেখ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দাবি করেছেন, কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খবরে বলা হয়, গত মাসে উরি’র সেনাঘাঁটিতে হামলার পর আবারও পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত। পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ঘটনার পরপরই বলা হয়, সন্দেহমূলক জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা উল্লেখ করে ধোঁকা দিচ্ছে ভারত। এই প্রেক্ষাপটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এখন যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন, তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সমান তালে চলছে সামরিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা।
অপর এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। কোনোভাবেই বন্ধু হারাতে চান না ওবামা। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ভারতের অনুরোধের পরও উল্টো পাকিস্তানের পক্ষেই সাফাই গাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবি। কাশ্মীরের উরি হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে একঘরে করার চেষ্টা করছে ভারত। কিন্তু পরিস্থিতি বরং পাকিস্তানের অনুকূলেই যাচ্ছে। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিশেষ বার্তাবাহক মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ বুধবার অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের একটি বৈঠকে জানিয়েছিলেন, আমেরিকা এখন আর বিশ্বের সর্বশক্তিমান দেশ নয়। ক্ষমতা হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাকে ভুলে যাওয়াই ভালো। পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল পর্যন্ত আনা হয়েছিল। কংগ্রেসে বিলটি আনেন সাংসদ টেড পো। তার পর অনেক টালবাহানা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি। শুক্রবার ওই বিলটি নিয়ে কিরবিকে প্রশ্ন করা হয়। কিরবি বলেন, এই বিলে বিশেষ কিছুই দেখাতে পাচ্ছি না। এ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় কিরবিকে। জিজ্ঞাসা করা হয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী এই বিলকে সমর্থন করবে? কিরবি সাফ জানিয়ে দেন, একেবারই নয়। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।