পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
“মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি। আহা, হাহা, হা। আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি। আহা, হাহা, হা ॥” শিক্ষাজীবনে ছুটি পেলে শিক্ষার্থীদের আনন্দের প্রতীক হয়ে আছে রবি ঠাকুরের এই গান। ক্লাস নেই, স্কুলে যেত হবে না শুনলেই আনন্দে ভরে উঠে শিক্ষার্থীর মন। কিন্তু এবারই এক ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ক্লাসে ফিরতে পেরেই যেন সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। হবেই না বা কেন? করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিল দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই পুরো সময়টাই শিক্ষার্থীদের কেটেছে ঘরবন্দী। ৫৪৩ দিন পর তাই স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খোলার দিনে শিক্ষার্থীদের মনে ছিল না আনন্দের কোন অন্ত। দেড় বছর পরে প্রিয় প্রতিষ্ঠান, সহপাঠী, শিক্ষকদের সাথে ফের দেখা হওয়াতেই যেন তাদের মাঝে ছিল ঈদের আনন্দ। এদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজ-মাদরাসা। যেন দীর্ঘ দেড় বছর পর ফের প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়ার পর এক সপ্তাহ থেকে প্রস্তুতি চলছিল প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে একেক প্রতিষ্ঠানে ছিল একেক রকম আয়োজন। কোথাও ফুল দিয়ে, কোথাও বা ড্রাম বাজিয়ে, চকলেট বিতরণ করে, করতালির মাধ্যমে ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় দেখা গেছে একই চিত্র। রাজধানীর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করে, হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করানো হয়। এছাড়া গেটের পাশেই বসানো ছিল হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। ক্লাসরুমেও শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছিল জেড আকৃতিতে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় আজিমপুর গভার্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপালকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। যে কেউ এসব নম্বরে ফোন করে যদি জানান, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো রকম সমস্যা আছে; আমরা তা সমাধানের ব্যবস্থা নেব।
গতকাল রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলো দেখা যায় অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীরা ছুটছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসায়। ঘরবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে ক্লাসে ফিরতে পারার স্বস্তি ছিল সকলের চোখে-মুখেই। প্রতিষ্ঠানের সামনেও ছিল ভিন্ন চিত্র, দীর্ঘ ছুটির পর বন্ধু-সহপাঠীদের সাক্ষাত পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা। আনন্দে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন, প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে আড্ডা, গল্পে সময় কেটেছে তাদের।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা আরোয়া মেহজাবিন জানায়, এতদিন পর স্কুলে ফিরে অনেক আনন্দ লাগছে তার। স্কুলে ঢোকার সময় তাকে চকলেট দিয়েছেন শিক্ষকরা। স্কুলের গেইট সাজানো হয়েছে রঙিন বেলুন দিয়ে। প্রথম দিন মেহজাবিনদের দুটো ক্লাস হয়েছে, বাংলা আর সমাজ। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশানের বাসা থেকে হেঁটে হেঁটে প্রথম দিন স্কুলে এসেছে সে মায়ের সাথে। তাকে স্কুলে দিয়ে মা চলে গেছেন অফিসে। স্কুল শেষে মেহজাবিন বাসায় ফিরবে ফুপির সাথে। মেহজাবিন জানায়, হাত স্যানিটাইজ করে তারপর স্কুলে ঢুকেছি। ক্লাসে ফাঁকা ফাঁকা করে বসতে দিয়েছে। মিসরা বলেছেন, সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হবে, হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
মিরপুরের এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা বললেন, আমাদের ঈদ মনে হচ্ছে। এই ১৮ মাস পর তারা আসছে, আমরা যেমন খুব এক্সাইটেড ছিলাম শিক্ষার্থীরাও খুব এক্সাইটেড ছিল। বাচ্চাদের স্কুলের ফেরার দিনটা যাতে আনন্দময় হয়, সে দিকটি মাথায় রেখেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল জহুরা বেগম বলছেন, করোনার মধ্যে অনেকে চিন্তিত ছিলেন, ক্লাস শুরু হলে বাচ্চারা স্কুলে গেলে আবার সংক্রমণ বেড়ে যায় কি না। সেই শঙ্কা যেন ভুল প্রমাণ করা যায়, শিক্ষক, অভিভাবক- সবাইকে নিয়ে আমরা সেই চেষ্টাই করব। তিনি জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে ১৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা মেনেই তারা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে স্বাগত জানাচ্ছেন। স্কুলের গেইটে দুই পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষক আর কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সময় তাদের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। সবাইকে স্বাগত জানানো হয়েছে একটি করে লাল গোলাপ দিয়ে। উদয়ন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী হৃদিতা নূর সিদ্দিক বলেন, অনেক দিন বাসায় থেকে থেকে এখন স্কুলে ফিরতে কেমন লাগবে তা নিয়ে খানিকটা অস্বস্তি তার ছিল। কিন্তু স্কুলে এসে তা কেটে গেছে। অনেক দিন পর ফিরলাম। এত সুন্দরভাবে বরণ করবে আমরা ভাবিনি। একটু অন্যরকম লাগছে, এটা ঠিক। তবে শিক্ষকরা আমাদের অনেক সহযোগিতা করছেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে, গল্প, আড্ডা, হাসিঠাট্টা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখেও অনেক ভালো লেগেছে। ক্লাসে পড়াশোনার চাইতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে করোনামুক্ত থাকার বিষয়ে শিক্ষকরা পরামর্শ দিয়েছেন বেশি। যদি প্রতিদিন ক্লাস করতে পারতাম, তাহলে আরও খুশি লাগতো।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা তাসনীম অরিন বলেন, এতদিন পর স্কুলে আসতে পেরে সত্যিই আনন্দ লাগছে। টানা বাসায় থাকতে থাকতে আমরা সবাই অনেক ক্লান্ত ছিলাম। স্কুল খোলায় ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। এতদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে জীবন ধন্য হয়ে গেছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করানো হলেও বাইরে অভিভাবকরা ছিলেন অসচেতন। বেশিরভাগ অভিভাবকই গেটের বাইরে জটলা বেধে, গাদাগাদি করে বসে দিয়েছেন আড্ডা। ঝাল-মুড়ি, ফুচকাসহ নানারকম মুখরোচক খোলা খাবার খেয়ে সময় কেটেছে তাদের। এসময় কারো কারো মাস্ক দিয়ে মুখ-নাখ ঢাকা থাকলেও বেশিরভাগেরই মাস্ক ছিল থুতনিতে।
আজিমপুর স্কুলের সামনে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অসচেতনতার বিষয়ে জানতে চাইলে হামিদুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, বাইরে প্রচণ্ড গরম, আর অনেকের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হয়েছে এজন্য এক সাথে বসে গল্প করছি।
সেগুনবাগিচা স্কুলের অভিভাবক সাহিদা আক্তার বলেন, এক সময় আমরা অভিভাবকরা নিয়মিতই অনেক গল্প, মজা করতাম। মাঝে দেড় বছর দেখা নাই। তাই সকলে মিলে একটু একসাথে সুখ, দুঃখের কথা বলছি।
মতিঝিল বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ফুটপাতে দেখা যায় মাদুর বিছিয়ে একসাথে কয়েকজন অভিভাবক মাস থুতনিতে রেখে জমিয়ে গল্প করছেন। অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অসচেতনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা।
আজিমপুর স্কুলের প্রিন্সিপাল বরখাস্ত: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল হাসিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল সকালে এ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, একটি কক্ষ অপরিষ্কার পেয়েছি। উনাকে আমরা প্রথমে শোকজ করব, কিছু করতে হলে তো আগে শোকজ করতে হয়।
প্রিন্সিপাল হাসিবুর রহমান বলেন, মন্ত্রী যখন পরিদর্শনে আসেন, তখন তিনি আমাদের কলেজের একটি স্টোর রুমে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি তখন বলতে পারিনি যে এটা স্টোর রুম। আমার চাকরির আর মাত্র পনের দিনের মত আছে। এখন আমার কী করেন, তারাই বলতে পারবেন। ডিজি বলেছেন, প্রথমে শোকজ করবেন।
পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে এসে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সবার সচেতনতা এক রকম নয়। যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবেন, তাদের একটু সচেতন থাকতে হবে। স্কুলের প্রতিটা আনাচে-কানাচে খুঁজে দেখতে হবে। কোথাও যেন ময়লা না থাকে। যতটা ভালো পারা যায়, আমরা চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে নজরদারির জন্য প্রত্যেক জেলায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। যে কেউ এসব নম্বরে ফোন করে যদি জানান, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রকম সমস্যা আছে; আমরা তা সমাধানের ব্যবস্থা নেব।
শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে জানান, দীর্ঘ দেড় বছর পর আপন ভুবনে ফিরে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা খোলার প্রথম দিনে এমন চিত্র ছিলো চট্টগ্রামের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর নজরদারির মধ্যেও ছাত্র, ছাত্রীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। শিক্ষাঙ্গনে ছিলো প্রাণের জোয়ার। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে শামিল হয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মুসলিম হাই স্কুলসহ সব স্কুলের প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ, হাত ধোয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা মাপতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে ক্লাসে প্রবেশ করে। অনেকের পরনে ছিলো নতুন ইউনিফর্ম। শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা, ছোবহানিয়া আলিয়া, নেছারিয়া কামিল মাদরাসাসহ নগরী ও জেলার সব মাদরাসায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান শুরু হয়েছে।
রেজাউল করিম রাজু রাজশাহী থেকে জানান, ক্লাসে ফিরতে পেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। রোববার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেতে দেখা গেছে।
রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক আছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও ভালো। অনেক শিক্ষার্থীর সাথে অভিভাবকও এসেছেন।
নাছিম-উল-আলম বরিশাল থেকে জানান, ছাত্রÑছাত্রীদের পদচারনা আর ক্লাসে বই খাতা নিয়ে পড়াশোনা শুরু হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পরে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
দীর্ঘদিন পরে পড়ার সাথীদের দেখা পেয়ে উচ্ছাস ধরে রাখতে পারেনি বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও প্রাণপ্রিয় ছাত্রÑছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসে বসতে পেরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার নোয়াখালী জানান, বেজে উঠেছে স্কুল-কলেজের ঘণ্টা। শেষ হয়েছে অপেক্ষা। নানা অজুহাতে প্রতিদিন দেরি করে আসা শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে এসেছে সময়মতো। নানা আলোচনা, পরিকল্পনা শেষে খুলেছে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুয়ার। আর তাই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরাও মহাখুশি। শ্রেণীকক্ষে উৎফুল্ল শিক্ষার্থীরা একে অপরের কুশলাদি জিজ্ঞেস করছে।
ডিএম রেজা খুলনা থেকে জানান, খুলনায় টানা প্রায় দেড় বছর ছুটির পরে শিক্ষার্থীরা ফিরেছে বিদ্যালয়ে। হৈ চৈ আর উল্লাসে মেতে উঠেছে স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর অভিভাবকদের মাঝেও ফিরে এসেছে স্বস্তি। আজ রোববার খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ ছুটির পর সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে কে কার আগে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করবে এই প্রতিযোগিতা লেগে ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও সকাল থেকে ছুটেছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের পরিবেশ দেখতে।
নুরুল আবছার তালুকদার আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে জানান, আনোয়ারা উপজেলায় শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ ও করোনা মহামারিতে নিহতদের স্মরণে দোয়া ও মুনাজাতের মধ্যদিয়ে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে। শারীরিক উপস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে গতকাল রবিবার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা, ফুলদিয়ে বরণ ছাড়াও সাজানো হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ।
মো. দেলোয়ার হোসেন গাজীপুর থেকে জানান, দীর্ঘদিন পর সহপাঠী, শিক্ষকদের দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে আসতে পেরে দারুণ খুশি তারা। আর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো।
মো. আরিফ হোসেন দুমকি (পটুয়াখালী) জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় আনন্দ উল্লাসে মুখরিত হয়ে উঠেছে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। উপজেলার মুরাদিয়া জয়গুন নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সেজেছে লাল,নিল,হঁলুদ রঙের বেলুনে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘ দিন পর স্ক্লু খুলছে তাই আনন্দঘন পরিবেশে স্কু্লরে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতেই এই সাজ।
আনোয়ার জাহিদ ফরিদপুর থেকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে গিয়ে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা গিয়ে ঈদের উৎসবের মত আনন্দে উল্লাস করছে। স্কুলে ফিরতে পেরে এক বন্ধু অপর বন্ধু দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ছে সবাই।
মোজাম্মেল হক গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে জানান, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সকল বিদ্যাপিঠে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিত করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের পদচারনায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি বিদ্যাপ্রাঙ্গন। অনেকদিন পর প্রিয় বিদ্যাপিঠে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত ও উৎফুল্ল শিক্ষার্থীরা।
মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ ঝালকাঠি থেকে জানান, সকালে প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসব আমেজে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও নানা আয়োজনে বরণ করে নেয় শিক্ষার্থীদের। সহপাঠী বন্ধুদের কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় প্রাণ ফিরে এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
শামসুল হুদা লিটন কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা ব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে খুশির আমেজ বিরাজ করছে। প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপীঠ শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত ও ফিরে পেয়েছে তার প্রাণ।
আশিকুর রহমান টুটুল, লালপুর (নাটোর) থেকে জানান, লালপুরে ১১৩টি প্রথমিক ও ৯৬টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলেছে ক্লাস। দীর্ঘ ১৮ মাস পরে আবারো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠনগুলি। সকাল দশটার দিকে লালপুর উপজেলার গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরন করে নেন লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী। এসময় উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার সাদ আহম্মেদ শিবলী, লালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন মন্ডলসহ শিক্ষকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
আবুল হাসান সোহেল মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও বাঁধ সেজেছে ৮টি বিদ্যালয়ে। বানের পনি আর অবস্থাপনার কারণে আসতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষকরা আসলেও বসাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের।
লম্বা সময় পর স্কুলে পাঠদানকে কেন্দ্র করে তাই প্রতিষ্ঠানগুলোও সেজেছে রঙিন সাজে। বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়েছে ফুল দিয়ে।
সাইদুর রহমান মাগুরা থেকে জানান, জেলা শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গঠিত টিম বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
মাগুরা শহরের আদর্শ ডিগ্রী কলেজসহ জেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯ টা থেকেই শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রীরা মুখে মাস্ক পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করছে।
আবদুল হালিম দুলাল মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) থেকে জানান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষার্থীদের আনন্দের সাথে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা গেছে। তবে অনেক শিশু শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল আবার বন্ধ হয়ে যাবে নাতো?
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতা নন্দ দাশ জানান, তিনি এবং সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তারা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি স্কুল খোলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মেহেদী হাসান মুবিন মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) থেকে জানান, উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক পাইরট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফটক দিয়ে একজন, দুজন করে শিক্ষার্থী ঢুকছে। ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা দায়িত্বরত ব্যক্তি তখন স্যানিটাইজার ও তাপমাত্রা মেপে মেপে শিক্ষার্থীদের ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আজ সপ্তম ও দশম শ্রেণির ক্লাস রাখা হয়েছে।
আজিজুল হক টুকু নাটোর থেকে জানান, শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। প্রতিটি স্কুলেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা দেখার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাপমান যন্ত্রের। প্রত্যেকেই মাস্ক পরিধান করে ক্লাশে প্রবেশ করেছে।
মোশফিকুর রহমান সৈকত নীলফামারী থেকে জানান, নীলফামারীরর চারিদিকে ঈদের মতো উৎসব। করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া সারা দেশের ন্যায় নীলফামারী জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো দীর্ঘ ৫৪৩ দিন পর খুলে দেয়ার এই উৎসবে শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকরাও যেন মেতে উঠেছিল।
মো. সম্রাট হোসাইন পঞ্চগড় থেকে জানান, স্কুল-কলেজ খোলায় শিক্ষার্থীদের মাঝেও এক ধরনের খুশির আমেজ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকাংশে কম দেখা গেছে।
মো. জাকির হোসেন পটুয়াখালী থেকে জানান, সকাল সাড়ে সাতটায় পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও দীর্ঘদিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা খুবই খুশি। তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, এতদিন যেন তারা একটা বন্দীদশার মধ্যে ছিলেন ,আজ স্কুলের স্বাভাবিক শিক্ষার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা খুবই উৎফুল্ল।
মো. খলিলুর রহমান ফুলপুর (ময়মনসিংহ) থেকে জানান, সকাল থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে বিভিন্ন স্কুলে শুরু হয়েছে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিনের ক্লান্তি ভুলে স্কুল-কলেজে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
মো. মেরাজ উদ্দিন শেরপুর থেকে জানান, সরাসরি পাঠদানে অংশ নিয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে ঢুকেই যেন খুশিতে আত্মহারা কোমলমতি শিক্ষার্থী। মনে হচ্ছে বছরের প্রথম দিনে নব উদ্যামে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। ক্লাস চালু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যরকম আনন্দ উল্লাস দেখা গেছে। ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন অভিভাবকরাও।
আতাউর রহমান আজাদ টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে স্বশরীরে পাঠদান। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এদিকে, বন্যা কবলিত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বিরত রাখা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।