মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
এককালে অসহায় শিশুদের মাতৃদুগ্ধের যোগান দিতে হাজির হতেন দুধ-মায়েরা। কোভিড পরিস্থিতি বিভিন্ন বিষয়ের মতো স্তন্যপানের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি করেছে। সদ্যোজাত শিশুকে রেখে মারা গিয়েছেন অনেক নারী। এছাড়া অনেক শিশুর মা কোভিডের জন্য কোয়ারান্টিনে রয়েছেন। তার ফলে শিশুদের থেকে জন্মদাত্রীকে দীর্ঘসময় দূরে থাকতে হচ্ছে।
অথচ এই মা-হারা বা মায়ের থেকে দূরে থাকা শিশুদের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ। তার ফলে কি এই প্রজন্মের একটা অংশ মাতৃদুগ্ধের অভাবে ভবিষ্যতে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে? এই প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলেছিল বৈদেহী দাস ও মণিময়ী চক্রবর্তীকে। নবজাতকেরা যাতে মাতৃদুগ্ধে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যে তথ্যপঞ্জী গড়ছেন এই দুই তরুণী, যার পোশাকি নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্রেস্ট মিল্ক রিসোর্স নেটওয়ার্ক’।
কেন এমন উদ্যোগ? মণিময়ী বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেন রিসোর্স খুঁজতে সাহায্য করতাম। কিন্তু তারপর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের একটা পোস্ট দেখি। দিল্লিতে মাতৃদুগ্ধ খুঁজছে। তারপরই আমাদেরও মনে হয় কলকাতায় এমন হবে না কেন?’ প্রথমদিকে এই দুই তরুণীও অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ রকম কিছু কলকাতায় নেই। এমনকি মিল্ক ব্যাঙ্ক নিয়ে বিশেষ সচেতনতাও গড়ে ওঠেনি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালেই একমাত্র মিল্ক ব্যাঙ্ক রয়েছে। তাও হাসপাতালে ভর্তি শিশুরাই এই ব্যাঙ্কের সুবিধা পায়। এই পরিস্থিতিতে এই দুই তরুণী শিশুদের সঙ্গে দুধ ডোনার মায়েদের সংযুক্ত করতেই গড়ে তোলেন এই রিসোর্স নেটওয়ার্ক।
বৈদেহী বলেন, ‘আসামেও এমন একজন মহিলার খবর পেয়েছিলাম যিনি নিজের ব্রেস্ট মিল্ক দান করতে চান। তারপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, একটি বাচ্চার মা মারা গিয়েছে, তার মাতৃদুগ্ধ লাগবে। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, এটা বরাবরের সমস্যা। তাই এই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাটা জরুরি ছিল।’ চিকিৎসকরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তবে দুধ শিশুকে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা নিতে হয়। শিশুমঙ্গল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অর্ণব রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা মায়েদের সাজেস্ট করি, বুকের দুধ বের করে সাধারণ তাপমাত্রায় আট ঘন্টা অবধি রেখে দিলে ভাল থাকে। ফ্রিজে রাখলে ২৪ ঘণ্টা অবধি থাকতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে হবে, মহিলাদের থেকে শিশুর শরীরে কোনো রোগের ট্রান্সমিশন যেন না হয়।’
মাতৃদুগ্ধ দানে আগ্রহী মায়ের তথ্যপঞ্জী তৈরি করা দুই ছাত্রীর পক্ষে মোটেই সহজ কাজ নয়। রয়েছে সামাজিক বাধা। সেটা অতিক্রম করে ডোনার মায়েরা দুধ দানে এগিয়ে এসেছেন। তবু তথ্যপঞ্জিতে এখনো পর্যন্ত যুক্ত ১৭ জন মায়ের নাম গোপন রাখা হচ্ছে। সতর্কতা হিসেবে মহিলাদের তিন মাস অন্তর অন্তর এইচআইভি বা হেপাটাইটিস টেস্ট করানো হয় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। এক্ষেত্রে সেতুর ভূমিকা নেওয়া মণিময়ী বলেন, ‘যারা সদ্যোজাত শিশুদের দুধের জন্য আমাদের কাছে আসছেন, তাঁদের সঙ্গে দুগ্ধদানে আগ্রহী মায়েদের যোগাযোগটাই করিয়ে দিচ্ছি। তারপর ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে সকলে এগোচ্ছেন।’ অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দুগ্ধদান করার পরে স্তনদাত্রী মায়েদের সন্তানরা দুধ থেকে বঞ্চিত হবে না তো? সংশয় দূর করে ডা. রায় বলেন, ‘এটা চাহিদা ও যোগানের অনুপাত। কোনো মা নিয়মিত হারে যদি অন্য বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, তাহলে সেই চাহিদা বুঝে শরীর বেশি দুধই উৎপন্ন করবে।’ এ দেশে মায়ের দুধ বিক্রিও হয়।
এ বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর প্রাক্তন সভাপতি ডা. অর্জুন মাঙ্গলিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এ দেশে হিউম্যান মিল্কের প্রচুর দাম। সাধারণের পক্ষে সেটা কেনা সম্ভব নয়। তাই আরো মিল্ক ব্যাঙ্ক হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টা কেউ ভেবেই দেখেনি। প্রাইভেট সেক্টরে টেস্টিং বা পাস্তুরাইজেশনে অনেক খরচ। তাই নিয়ম ও সুরক্ষাবিধি মেনে এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত।’ বৈদেহী, মণিময়ীরা তথ্যপঞ্জি তৈরির সময় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নতুন মায়েদের। তাঁরা বলেন, ‘ডাক্তারদের উপদেশ মেনেই যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদেরই ডোনার হিসেবে রাখছি। মেডিকেল হিস্ট্রিও নিয়ে রাখি। অনেকেই আসেন, তবে এলিজিবল সবাই হন না।’ মহামারির পরিস্থিতিতে শিশুর কাছে দুধ দানে আগ্রহী মহিলার পৌঁছে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। যাতে উভয়ের বাসস্থল কাছাকাছি হয়, সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে। সূ্ত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।