পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ কিশোর আর ১১ দশমিক ৭ শতাংশ কিশোরী। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেশি হলেও মধ্যম আয় আর নিম্ন আয়ের দেশে এই হার ইদানীং বাড়ছে। এক গবেষণায় এই চিত্র বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং লিমিটেড সম্প্রতি এ নিয়ে জরিপ করে। সেই জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট এ প্রকাশিত ‘ই ক্লিনিক্যাল মেডিসিন নামক ওপেন-এক্সেস পিয়ার রিভিউড জার্নালে। এই গবেষণায় এসেছে সামগ্রিকভাবে কিশোর বয়সের মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা সমবয়সি ছেলেদের চাইতে বেশি।
জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। তবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে তেমন খুব একটা পার্থক্য নেই। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের কারণে পারিবারিক পরিবেশ, নিজেদের বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, চারপাশ এবং সর্বোপরি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ও এই শ্রেণিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। আত্মহত্যায় পরীক্ষা পদ্ধতি-স্কুলিং-রেজাল্ট, এসবও প্রভাব ফেলে।
জরিপে জানানো হয়, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক কীভাবে এবং কতটা আত্মহত্যা প্রবণতার সঙ্গে জড়িত তা নিয়ে বিশ্বে বড় পরিসরে কোনও গবেষণা হয়নি। তবে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং লিমিটেড এটি বোঝার জন্য ৫২ দেশের ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সি ১ লাখ ২০ হাজার ৮৫৮ জন কিশোর-কিশোরী নিয়ে একটি জরিপ করে। বাংলাদেশের ২ হাজার ৫৪৫ কিশোর-কিশোরী এতে অংশ নেয়। এই গবেষণায় এসেছে সামগ্রিকভাবে কিশোর বয়সের মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা সমবয়সি ছেলেদের চাইতে বেশি। তবে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই প্রবণতা কম এবং সবচাইতে বেশি আফ্রিকান অঞ্চলে। ছেলে আর মেয়েদের তুলনা করলে দেখা যায়, ধনী দেশগুলোর ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতার হার সবচেয়ে বেশি এবং দরিদ্র দেশগুলোর মেয়েদের মধ্যে এই হার সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার প্রায় সমান। যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ আর ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। আর এর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন দেশের মানসিক স্বাস্থ্য রোগ বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলছেন, আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে তেমন কোনও ভেদাভেদ নেই।
বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ১৩ থেকে ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। গত এক যুগে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে আত্মহত্যায় মৃত্যুহার প্রতি লাখ মানুষে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৬ জন। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে বোঝা যায় যে, দেশে আত্মহত্যার হার বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশে আত্মহত্যার সঠিক হার নির্ণয় না করা গেলেও গবেষণায় দেখা যায়, কিশোর-কিশোরী এবং কমবয়সি তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত বাংলাদেশি গবেষকদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অন্তত প্রতি ১০ জনে একজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যাকে ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার পূর্বাভাস কৈশোরেই পাওয়া যায়। সেটা সম্ভব হয় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা আছে কি না তা বুঝার মাধ্যমে। তারা বলছেন, আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা এবং চেষ্টাÑ এ তিনটি বিষয়ের কোনও একটি যদি কারও মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলে তার আত্মহত্যা প্রবণতা আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্বে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের প্রতি ৬ জনে অন্তত একজনের মাঝে এই তিনটি বিষয়ের যে কোনও একটি আছে। কৈশোরে আত্মহত্যা প্রবণতা থাকা যেমন ভবিষ্যতে আত্মহত্যা করাকে ইঙ্গিত করতে পারে; তেমনি এটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। আবার বিভিন্ন মানসিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাও একজনের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেশি। কিন্তু মধ্যম আয় আর নিম্ন আয়ের দেশে এই হার সমান-সমান বলেন।
এই গবেষণা দলের নেতৃত্বদানকারী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সায়েদুল আশরাফ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সমান সংখ্যায় বিষন্ন তায় ভোগে। এক্ষেত্রে ছেলেদের ‘আর্টিফিসিয়াল শক্ত’ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের (ছেলেদের) যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে যেন তারা ‘এক্সপ্রেস’ (প্রকাশ) করে। একইসঙ্গে নারীদের ক্ষেত্রে নানারকম ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ থাকে বাংলাদেশে, মেয়েরা অনেক বেশি ভোগে ছেলেদের চাইতে। নারীদের যদি এক্ষেত্রে সহযোগিতা করা যায় পারিবারিক এবং সামজিকভাবে তাহলে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
ছেলেমেয়েরা এখন অনেক বেশি সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘ইনভলভ’ হয়ে পড়ছে। অনেক সময়েই তারা সঠিক গাইডেন্স থাকে না। এমন কিছু কনটেন্ট দেখে ফেলে যা তাদের ‘কনফিউজড’ করে তোলে জীবনের ক্ষেত্রে। ফিলোসফিক্যালি তারা অনেক দিকভ্রান্ত থাকে জানিয়ে ডা. সায়েদুল আশরাফ বলেন, সেই সঙ্গে বাবা-মায়েরা মেন্টাল হেলথ ইস্যুতে খুবই কম সাপোর্টিভ আমাদের দেশে। যার কারণে সন্তানকে পাগল মনে করে, বুলি করে-যেটা সন্তানকে আরও দুর্দশার ভেতরে ফেলে দেয়। যার কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে। শরীরের অসুখ হলে চিকিৎসকের কাছে সন্তানকে নিয়ে যান বাবা-মা, ঠিক তেমনি এরকম মানসিক সমস্যা হলে চিকিৎসক দেখাতে হবে। কারণ যত বেশি দেরি হবে, তত বেশি খারাপ হবে। তাই এই স্টিগমা ভেঙে ফেলতে হবে।
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিবার, বাবা-মা, বাবা-মায়ের এক্সপেক্টেশন-এসবও মানসিক স্বাস্থ্যকে কোনও না কোনওভাবে প্রভাবিত করে। যখন এ বিষয়গুলো ইতিবাচক থাকে তখন তাদের সক্ষমতা বাড়ে আর যখন সেটা নেতিবাচক হয় তখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়। আর মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হলেই আত্মহত্যা, নিজের ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।