পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এজন্য বৃহস্পতিবারের মধ্যে সকল স্কুল—কলেজ—মাদরাসাকে পাঠদান উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনা মেনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শেষ করা হয়েছে ধোয়া—মোছা ও পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতার কাজ। খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিকের অনেক প্রতিষ্ঠানই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি প্রস্তুতি। এদিকে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার কারণে এবং নদী ভাঙনে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয় ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যদিও এর মধ্যে কয়েকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতির কথা বলা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি স্কুল—কলেজ খুলে দেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ওই রাতেই বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেয় করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এরপর দিন ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। আর গত রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে শেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।
দীপু মনি বলেন, স্কুল—কলেজ—মাদরাসা খোলার পর প্রথমে চলতি বছরের এবং আগামী বছরের এসএসসি—দাখিল ও এইচএসসি—আলিম পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হবে। ক্লাস শুরু হলে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর ক্লাসরুমে ফিরতে উদগ্রিব হয়ে আছে তারা। এজন্য ইতোমধ্যে জামা—কাপড় তৈরি, বই—খাতাপত্রসহ অন্যান্য উপকরণ কেনাকাটাও শেষ তাদের। এখন অপেক্ষা বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সব পরিবারে একই চিত্র। যেসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করেন, প্রতিটি পরিবারে চলছে স্কুল—কলেজ—মাদরাসার ক্লাসে যাওয়ার উৎসবের আমেজ। শিক্ষার্থীদের এই আমেজে বাবা—মাসহ পরিবারের বড় সদস্যরাও শরীক হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে এতে শিক্ষকরাও দারুণ খুশি।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই ক্লাসরুম পাঠদান উপযোগী করতে কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। নির্দেশনা অনুযায়ী বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সেরেছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ, কেটে ফেলা হয়েছে খেলার মাঠের ঘাস, ধোয়া—মোছাও শেষ ক্লাস রুম, চেয়ার—টেবিল—বেঞ্চ। কোন কোন স্কুলে ছিটানো হয়েছে জীবণুনাশক ওষুধও।
দিনাজপুরের আজিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র রায় জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চে ধুলোময়লা জমে যাওয়ায় সেগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে শ্রেণিকক্ষগুলোতে জীবণুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার উত্তরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়েই স্কুল ধোয়ামোছার কাজ শেষ করেছি। এছাড়া প্রতিটি ক্লাসরুম, চেয়ার—টেবিল—বেঞ্চে এবং স্কুলের মাঠে জীবাণুনাশক স্প্রে করেছি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে আমাদের স্কুল পুরোপুরি প্রস্তুত।
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়ার এক সপ্তাহ আগেও রাজধানীর সেগুনবাগিচা স্কুল, আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল, শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুলের মাঠের ঘাস পরিণত হয়েছিল জঙ্গলে। স্কুলের ক্লাসরুম, বেঞ্চ, চেয়ার—টেবিলে জমেছিল ধূলার স্তুপ। তবে খুলে দেয়ার ঘোষণা পর এক সপ্তাহে এসব প্রতিষ্ঠান এখন পাঠদানের উপযোগী করা হয়েছে। তিনটি স্কুলেই দেখা যায় মাঠের ঘাসগুলো কেটে খেলার উপযোগী করা হয়েছে, ক্লাসরুমও ধোয়ামোছা শেষ। একইভাবে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পাঠদান উপযোগী করার কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।
এদিকে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ক্লাস শুরু হওয়ায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে আয়োজন করেছে নানা প্রস্তুতি। আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে ছাত্রীদের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভিকারুননিসার একাধিক শিক্ষক জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আবারও ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে তারা কিছু পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। ক্লাসের প্রথম দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বরণ করে নেবেন তারা।
তারা জানান, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারটি শাখাতেই প্রবেশপথের সবগুলো ফটক বেলুন ও জরি কাগজ দিয়ে সাজানো হবে। তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষকরা গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। শিক্ষার্থীরা যখন প্রবেশ করবে শিক্ষকরা তখন হাততালি ও ড্রাম বাজিয়ে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রীদের ভেতরে প্রবেশ করানো হবে।
শিক্ষকরা জানান, এ আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্রীরা এক ধরনের আনন্দ উপভোগ করবে। স্কুলের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়ে যাবে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের কারও মধ্যে স্কুলের প্রতি অনীহা থাকলেও সেটা কেটে যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে বরণ করে নতুনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো ব্রাঞ্চের দিবা ও মর্নিং শাখা—প্রধানরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন্নাহার বলেন, শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বরণ করতে চাই। তিনি বলেন, ছাত্রীরা গেটের ভেতরে প্রবেশ করার সময় প্রত্যেকের হাতে একটি করে ফুল দেওয়ার চিন্তা—ভাবনা থাকলেও এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গেটের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাবেন। এরপর নিয়মমাফিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
তবে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলায় বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এছাড়া করোনাকালে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরবে না। দারিদে্র্যর সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে অনেক ছাত্রছাত্রী এরই মধ্যে বিভিন্ন কাজে জড়িয়েছে। জোর করে অনেক মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাটা কত হবে তার ধারণা না মিললেও কিন্ডারগার্টেন আর বেসরকারি স্কুল—কলেজের শিক্ষার্থীদেরই শিক্ষাঙ্গনমুখী না হওয়ার শঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিক্ষার্থীদের এই ঝরেপড়া রোধ করাটাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ: প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা পালন নিশ্চিত করতে ও সঠিকভাবে অনুসরণের জন্য মনিটরিং টিম গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সরকারি—বেসরকারি সব স্কুল—কলেজকে মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ আদেশে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে বিবেচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন মাঠ পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে অধিদপ্তর থেকে পাঠানো কোভিড—১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুকরণ সংক্রান্ত নির্দেশনা ও কার্যক্রমগুলো যথাযথ ও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে মেনে চলা এবং তা অনুসরণের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।