পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়কের দুইপাশে কার্ভাডভ্যানের দীর্ঘ লাইন। এ যেন কোন টার্মিনাল। পাশে জমি দখল করে গড়ে উঠছে ঝুপরি ঘর, দোকান-পাট, জেলে পল্লী। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। তার উপর এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। তাতে যানজটের সাথে কখনো কখনো জনজটও হচ্ছে। সড়কবাতি না থাকায় রাতের আঁধারের সাথে সেখানে নেমে আসে ভয়াল পরিবেশ।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এমন চরম বিশৃঙ্খলা আর দখলবাজি চলছে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড এলাকায়। প্রায় ২৭শ’ কোটি টাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। কয়েক দফায় প্রকল্পের ব্যয় তিনগুণের বেশি বাড়িয়েও এখনো পুরো কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। তবে নগরীতে যানজট কমাতে গত বছর সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সংযোগ সড়ক ছাড়াই সড়কটি খুলে দেওয়ায় এমনিতেই তেমন সুফল মিলছে না। তার উপর দখলবাজির কারণে সড়কে এখন বেহাল দশা।
নগরীর পতেঙ্গা সৈকত থেকে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটি যুুক্ত হবে দেশের প্রথম টানেল কর্ণফুলী টানেলের সাথে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে-টার্মিনালের পাশ দিয়ে সড়কটি দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ফেনীর সোনাগাজী ও মীরসরাইয়ের বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের পাশ থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত উপক‚লীয় মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোডটি হবে তারই অংশ। দেশের প্রধান বন্দরনগরীর উপক‚লীয় বাঁধ শক্তিশালী করা, নগরীতে অব্যাহত যানজট কমানো, আবাসন, বাণিজ্য, পর্যটন, বিনোদন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ষাটের দশকে নির্মিত শহর রক্ষা বাঁধ ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগের বাঁধটির উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। আউটার রিং রোডের উচ্চতা আরো ১০ ফুট বাড়ানো হয়েছে। সড়কের নিচের অংশের প্রশস্ততা ৩০০ ফুট। বাঁধ রক্ষায় সাগর তীরের পাশে আছে ঢেউ প্রতিরোধক দেয়াল। চার লেনের সড়কটি চওড়ায় ৮৪ ফুট। সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর পর সেখানে পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করে। নগরবাসী ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ওই উম্মুক্ত স্থানটি দেখতে ছুটে যান।
বিশেষ করে ছুটির দিনে সেখানে নানা বয়সের মানুষের ঢল নামে। সড়ক রক্ষায় তৈরী ঢেউ প্রতিরোধক দেয়ালে বসে খুব কাছে থেকে সাগর দেখার অন্যরকম অনুভ‚তি পান পর্যটকেরা। সাগরে সাইরেন বাজিয়ে ছোট বড় জাহাজের ছুটে চলা। আবার শাহ আমানত আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয়া বিমানও দেখা যায়। একসাথে আকাশ, সাগর আর সড়ক পথে যানচলাচলের এমন বিরল দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন অনেকে।
সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের পাশের জমি দখল করে গড়ে উঠছে দোকান-পাট, ঝুপরি ঘর। জেলেরা রীতিমত বাড়িঘর তৈরী করছে। ঝুপরি ঘরে চায়ের দোকানে যানবাহন দাঁড় করিয়ে চালকরা বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাড়ছে বখাটেদের আড্ডাবাজি। দখলের ফলে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় বস্তির রূপ নিচ্ছে। পতেঙ্গা সৈকতের পরই সড়কে দুই পাশে অসংখ্য কার্ভাডভ্যানসহ ভারী যানবাহন রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পতেঙ্গা এলাকার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এভাবে রিং রোডে দিনের পর দিন ভারী যানবাহন পার্কিং করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) শাকিলা সুলতানা বলেন, ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বার বার নিষেধ করার পরও অবৈধ পার্কিং করা হচ্ছে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে কাজের কারণে নগরীর প্রধান সড়কে তীব্র জটের কারণে এই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এই সড়কেও জট হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রিং রোড যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হলেও নেই কোন সড়কবাতি। এতে সন্ধ্যা হতেই সেখানে আঁধার নেমে আসে। এতে যানবাহন চালক ও পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অনেকে তড়িঘড়ি এলাকা ত্যাগ করেন। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (্ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহম্মদ বলেন, সড়কবাতি না থাকায় নানা রকম সমস্যা হচ্ছে। ছোটখাটো অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। ডাকাতি, দস্যুতার আশঙ্কাও রয়েছে। রাত ১১টার পর ট্রাফিক পুলিশও আর থাকে না। তখন সড়কটি একেবারেই অরক্ষিত থাকে।
জানা গেছে, সিডিএ এখনও কাজ শেষ না করায় সড়কটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে হন্তান্তর করেনি। আর এই কারণে সিটি কর্পোরেশন সেখানে আলোকায়ন করেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সড়কে আলোকায়ন এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ জরুরি। তা না হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা এবং এলাকার সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট হবে। যারা এখন সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরী করছে এক সময় তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে তারা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বসতে পারে। দখলবাজি চলতে থাকলে সেখানে অপরাধীদের দৌরাত্ম্যও বাড়বে। লোকজনের অবাধ চলাচলের মধ্যে ভারী যানবাহন চলাচল করায় সড়কটিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। এজন্য একাধিক ফুটওভারব্রিজ এবং গণপরিবহন বা ছোট যানবাহনের জন্য সড়কে আলাদা লেন জরুরি বলেও মনে করেন তারা। এছাড়া অবৈধ দখল ঠেকাতে সেখানে বনায়নও করারও পরামর্শ তাদের।
আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আউটার রিং রোড খুলে দেওয়া হলেও এখনও সংযোগ সংড়কের কাজ চলছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। দখলবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশ দেখছে। আর সড়কের পাশের জমিতে যেসব অবৈধ স্থাপনা হচ্ছে তা দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। পতেঙ্গা সৈকতকে ঘিরে সড়কের ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত পরিবেশ বান্ধব এবং বিশ্বমানের পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সড়কের অন্য অংশে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প থাকায় সেখানেও পর্যটন কেন্দ্র বা অন্য কোন স্থাপনা তৈরির সুযোগ নেই। সাগরিকা সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংযোগ সড়ক চালু হলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৫৬ কোটি টাকা। বেশ কয়েক দফায় সেই ব্যয় বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা করা হয়। সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।