Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কার বাক্সে পড়বে বিএনপি-জামাত-খেলাফত মজলিস-আল ইসলাহ ও হেফাজতের ভোট ?

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩৫ পিএম

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। অথচ এ আসনে বিপুল সমর্থক রয়েছে দলের। তৃণমূলে রয়েছে সাংগঠনিক ভিত্তি। একই সাথে জামায়াতও নেই নির্বাচনে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ এক সময় তাদের প্রার্থীর কব্জায় ছিল। একই সাথে নির্বাচনে নেই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। সেই সাথে প্রখ্যাত পীর আল্লামা সাহেব কিবলা ফুলতলী (রহ.) এর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আন্জুমানে আল ইসলাহ’র উল্লেখযোগ্য অনুসারী রয়েছে এ আসনে। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থক কম নয় এ আসনে। সেকারনে এ দল সমূহের ভোট নির্বাচনে যেকোন প্রার্থীর জয় পরাজয়ে বিশাল ফ্যাক্টর, বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। এই ভোট কার পক্ষে যাবে, কোন প্রার্থী সেই ভোটে ভাগ বসাবেন তাও এক বিরাট প্রশ্ন। যদিও এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি শিল্পপতি শফি চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র। তাকে দল বহিষ্কার করেছে। তার পক্ষে প্রথম দিকে প্রচারণায় নেমেছিল তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী। দলীয় খগড় নেমে আসে তাদের উপরও। তাই তারা একেবারে চুপ। এ অবস্থায় শফি বিএনপির ভোট কতটা টানতে পারবেন এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপি সহ নির্বাচন থেকে বাহিরে থাকা দল সমূহের ভোট কার কপালে জুটে।

তবে এই দল সমূহের ভোট টানতে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচনের মাঠে টপ গিয়ারে থাকা আওয়ামীলীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও জাতীয় পাটির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। স্থানীয় পর্যায়ে এ দল সমূহের নেতা ও কর্মী সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ করছেন নিজ নিজ অবস্থানে বসে। সিলেটের বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রচারের মতো ভোটের মাঠেও নীরব থাকবেন তাদের নেতা-কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বিএনপির কেউ। এই সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনই তারা বর্জন করবেন বলে জানান বিএনপি নেতারা। এদিকে বিএনপি জামায়াত, খেলাফত মজলিস, আনজুমানে আল ইসলাহ ও হেফাজতে ইসলামের ভোটাররা খুবই নিরব। নির্বাচন নিয়ে ভাবনাহীন তারা। তারা প্রত্যক্ষ করছে, এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ভোট রাজনীতির মিত্র আ’লীগ ও জাপার সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায়।

নির্বাচনে প্রচারণায় এসে জাপার শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘এ নির্বাচন সরকারের জন্য এক অগ্নি পরীক্ষা। ভোট কারচুপি করতে করতে ভোটের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমে গেছে।’ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি সহ অন্যদলের মতো সরকারের প্রতি ভোট নিয়ে একই সুরে অভিযোগ তোলেছে জাপা। সেকারনে সময়ের অপেক্ষা চলছে এখন। জাপার কপাল কিভাবে পুড়ে আ’লীগের ক্ষমতার প্রভাবে, সেই দিকে চেয়ে আছে তারা। এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আ’লীগ প্রার্থী বিভিন্নভাবে অভয় দিচ্ছেন বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকদের, তাকে ভোট দিলে রাজনীতিক নিপীড়ন সহ হয়রানীর পথ বন্ধ রাখবেন তিনি। তার ভোট রাজনীতির এমন বার্তায় কতটুকু ভরসা পায় বিরোধী দলের রাজনীতিকরা, ভোটের মধ্যে ঘটতে পারে তার প্রতিফলন। জাপার প্রার্থী আতিকও সেই বলয়ের ভোট আদায়ে করছেন লবিং। কিন্তু কতটুকু সাড়া পাবেন তা বলা বাহুল্য।

দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। একসময় সিলেট-৩ আসন ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। টানা তিনবার এই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান। ২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিলেও সিলেট-৩ আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। সে নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। আর আতিকুর রহমান আতিককে আলাদা প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি। বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শফি আহমদ। এই দুজনকে হারিয়ে সেবার বিজয়ী হন মাহমুদ উস সামাদ কয়েস। পরে ২০১৪ আর ’১৯ সালের নির্বাচনেও কয়েস সাংসদ নির্বাচিত হন। ’১৪-এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। আর ’১৯-এ প্রার্থী হলেও কয়েসের সঙ্গে পেরে ওঠেননি শফি। তবে মহাজোটের সমীকরণে পড়ে ২০০৮-এর পর এই আসনে আর প্রার্থী হননি আতিক।

শফি আহমদ চৌধুরীর দাবি, বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নেতারা মাঠে না নামলেও কর্মীরা আমার পক্ষে প্রচারে। তারা আমাকে ভোটও দেবেন।’ শফি এমন বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। একে তো দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তার ওপর প্রচারের শুরুর দিকে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে তাদের রোষানলে পড়েছেন শফি আহমদ। ফলে দলের ভোট ব্যাংকই এবার হারাতে হতে পারে শফি আহমদকে।

রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত-খেলাফত মজলিস, আনজুমানে আল ইসলাহ ও হেফাজতের ভোট যে বাক্সে পড়বে, সেই প্রার্থীই বিজয়ের মালা পরবেন। তবে সেই ভোট নৌকার চেয়ে জাপার বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলেট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ