পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা সেতু নির্মাণশেষে এক বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন। এরপর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কাছে পদ্মা সেতু হস্তান্তর করা হবে। তবে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্যও সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাচ্ছে চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন (এমবিইসি)। আর পদ্মা সেতুতে টোল আদায় করবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)। বর্তমানে এ কোম্পানিটি পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ তদারকি তথা পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড হিসেবে চায়না মেজর ব্রিজ দেখাশোনা করবে। তারা সেতুটি নির্মাণ করায় এ-সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় তাদের জানা আছে। তাই ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড-পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের দেয়া হচ্ছে। তারা এজন্য দেশি-বিদেশি কর্মী ও বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করবে। আর টোল আদায় ও অন্যান্য কাজ করবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন।
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ রোড স্ল্যাববসানো হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। এর মাধ্যমে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু পিচ ঢালাইসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ, যা আগামী মার্চের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর আগামী জুনে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এমবিইসি-কেইসি জেভির (জয়েন্ট ভেঞ্চার) এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে স¤প্রতি চূড়ান্ত করেছে বিবিএ’র গঠিত কারিগরি কমিটি। শিগগিরই তা অনুমোদন করা হবে। এরপর আর্থিক প্রস্তাবনা জমা দেবে এমবিইসি-কেইসি জেভি।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে গত বছর আগ্রহ দেখায় পদ্মা সেতুর কেইসি। জিটুজি ভিত্তিতে এ কাজ করার প্রস্তাব দেয় কোম্পানিটি। এতে বলা হয়, বিশ্বের ৪৩টি দেশে বিভিন্ন সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করছে কেইসি। পাশাপাশি এমবিইসিও পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণে আগ্রহ দেখায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইসিকে কেইসির সঙ্গে পদ্মা সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত করার পরামর্শ দেয় কারিগরি কমিটি। কারণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেতুর প্রতিটি বিষয় তাদের জানা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর আগস্টে পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে যৌথ প্রস্তাব জমা দেয় কেইসি-এমবিইসি জেভি।
প্রাথমিকভাবে কারিগরি প্রস্তাব জমা দেয় কোম্পানি দুটি। এক্ষেত্রে মূল সেতুর পাশাপাশি নদী শাসনের অংশও রক্ষণাবেক্ষণ করবে এমবিইসি। তবে নদীর গতিপথ পর্যবেক্ষণ ও এ-সংশ্লিষ্ট কাজ তদারকি করবে না তারা। যৌথ কারিগরি প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে স¤প্রতি তা অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। এটি অনুমোদনের পর আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়ার জন্য সুপারিশ করে কারিগরি কমিটি।
প্রকল্প সূত্র জানায়, গত জুলাই পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। সর্বশেষ সংশোধিত পরিকল্পনা অনুসারে, আগামী বছরের ২৩ এপ্রিল মূল সেতু ও ২০ জুন নদী শাসনের কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে পদ্মা সেতুর টোল হারও চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ২৪ জুন তা বিবিএ’র বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হয়। তবে সেতুর নির্মাণকাজ এখনও বাকি থাকায় তা অনুমোদন করা হয়নি। তবে প্রস্তাবটি এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। বিবিএ’র পরবর্তী বোর্ড সভার অনুমোদনের পর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর টোল হার ফেরি পারাপারের বিদ্যমান চার্জের প্রায় দেড়গুণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ফেরিতে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে বাইক পারাপারে চার্জ ৭০ টাকা। আর পদ্মা সেতুতে বাইক চলাচলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। এছাড়া প্রাইভেটকার ও সাধারণ জিপে ফেরি পারাপারের চার্জ দিতে হয় ৫০০ টাকা। পদ্মা সেতুতে এ ধরনের মোটরযানে টোল দিতে হবে ৭৫০ টাকা। তবে প্রাডো, নিশান বা অন্যান্য বিলাসবহুল জিপ ও পিকআপে টোল দিতে হবে এক হাজার ২০০ টাকা। ফেরিতে এ চার্জ ৮০০ টাকা।
এর বাইরে পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাস চলাচলে টোল দিতে হবে এক হাজার ৩০০ টাকা। ফেরিতে এ চার্জ ৮৬০ টাকা। এছাড়া ছোট বাস তথা কোস্টারে এক হাজার ৪০০ টাকা টোল প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। আর মাঝারি বাস দুই হাজার টাকা ও বড় বাসে দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। ফেরিতে এ তিন ধরনের বাসের চার্জ যথাক্রমে ৯৫০ টাকা, এক হাজার ৩৫০ ও এক হাজার ৫৮০ টাকা।
এদিকে পদ্মা সেতুতে পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য ছোট ট্রাকে (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ থেকে আট টন) দুই হাজার ১০০ টাকা এবং বড় ট্রাকে (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৮০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ফেরির চার্জ যথাক্রমে এক হাজার ৮০ টাকা, এক হাজার ৪০০ টাকা ও এক হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুতে তিন এক্সেলের ট্রাক তথা কাভার্ডভ্যানে টোল দিতে হবে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ফেরিতে যা তিন হাজার ৯৪০ টাকা।
এর বাইরে পণ্যবাহী কনটেইনার তথা ট্রেইলারে পৃথক হারে টোল আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চার এক্সেলের ট্রেইলারে টোল ছয় হাজার টাকা আর চার এক্সেলের বেশি হলে ছয় হাজার টাকার সঙ্গে পরবর্তী প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টোল যোগ হবে। তবে ফেরিতে বর্তমানে টেইলার পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে এটি নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা জেডিসিএফ বাবদ অনুদান পেয়েছে সেতু বিভাগ। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে সেতু বিভাগকে। প্রতি বছর চার কিস্তি হিসেবে মোট ১৪০টি কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বিবিএকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।