Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানি বন্ধতা নিরসনে সিলেট নগরীতে ৪০০ কোটি টাকা হয়েছে ব্যয়

অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ৭:১০ পিএম

অতি প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে গড়ে উঠেছে সিলেট। বহুতা সুরমা নদীর তীরে এ সিলেটের নগর সভ্যতা। আছে ছোট বড় পাহাড় টিলার সমারোহ। নীল আকাশের সাথে হেলান দিয়ে শক্ত বুনিয়াদ গড়ে তুলেছে সিলেট নগরীর। এছাড়া রয়েছে প্রশস্থ ছড়া খাল। নগরীর পানি নিষ্কাষনের আদি এ ব্যবস্থা। সেই পথে বর্ষার পানি গড়িয়ে পড়ে সুরমা নদীতে। এমন সুবিন্যস্তভাবে শহর আগের অবস্থায় নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ছড়া-খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ আর জলাশয় ভরাটে এখন বদলে গেছে সিলেট। এখন ভারি বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় নগরী। সড়ক ছাপিয়ে ঢুকে যায় পানি বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। এতে চরম দুর্ভোগে নগরবাসী। অথচ দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া ছড়া খাল উদ্ধার সহ পানি বদ্ধতা লাগবে গত এক যুগে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপরও লাগব হয়নি পানিবদ্ধতা। এবার বর্ষায় বিগত বছরের তুলনামুলক কম হয়েছে বৃষ্টি। তবু অন্তত ৩/৪ দিন বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে নগরী। এতো টাকা খরচের পরও ছড়া উদ্ধার না হওয়া ও নগর পানিবদ্ধতা মুক্ত না হওয়ায় এসব প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন এখন প্রশ্নবিদ্ধ।


সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট বড় প্রায় ২৫ টি ছড়া। তবে দখল-দুষণে অনেক স্থানে ছড়ার অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে এখন। নগরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি বড় ছড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কি:মিটার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ছড়ার দু’পাশ দখল করে রেখেছে স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। এই ছড়াগুলো উদ্ধারে এ পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ব্যয় করেছে প্রায় ৪০০ কাটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ছড়া-খাল দখলমুক্ত করতে বৃহৎ একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২৩৬.৪০ কোটি টাকার। বৃহৎ প্রকল্পের পরও ছড়া দখলমুক্ত হয়নি, কার্যত যেই সেই, কেবল টাকার লুটপাঠ।


২০১৬ সালে ছড়া-খাল দখলদারদের একটি তালিকা করে সিসিক। এতে ২৬৮ জনকে ব চিহ্নিত করা হয়েছে দখলদার হিসেবে। দখলদারদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এছাড়া কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ছড়া-খাল দখল করে এরা গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। ফলে প্রবাহমান ছড়া খাল এখন কংকাল সার, ধারন করেছে বিচিত্র রূপ। অপরদিকে ২০০৯ সালে নগরীর ছড়াগুলো উদ্ধারে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিসিক। এরপর ২০১৩ সালে একই লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় ২০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প। এরপর নগরীর ছড়া খাল উদ্ধারে ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ২৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার মেঘা প্রকল্প। এছাড়া এই সময়ে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও কয়েকটি ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তবে এতো প্রকল্প, এতো অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে না পারায় এসব প্রকল্পের সফলতা ভেস্তে যান। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ কোথায় গেছে তার কোন হদিস নেই। অনেকে বলছেন, বাগবাটোয়ার করে লোপাট করেছেন এই বিপুল পরিমান অর্থ সংশ্লিষ্টরা। বাস্তবে কাজ না হল্ওে কাগজে কলমেই সেই অর্থের শ্রাদ্ধ করেছেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের বাস্তাবায়ন নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এসব প্রকল্পের ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেনি সিটি করপোরেশনও। তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যবহার কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে তার জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত আবশ্যক।

তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, নগরীতে আগেরমতো আর পানিবদ্ধতা হয় না। অধিক বৃষ্টিতে নগরীতে নগরীর কিছু এলাকায় পানি জমলেও তা নেমে যায় অল্প সময়ের মধ্যে।


সিলেট নগরের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সাথে যুক্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে তাই নদী পানিতে টুইটুম্বুর হয়ে যায়। ফলে ছড়ার পানি টানতে পারে না নদী। একারণে নদীর তলদেশ খননের প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দাবি, ছড়াগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলেও অনেকাংশে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলাবদ্ধতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ