পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আফগানিস্তানের বিখ্যাত তালেবান বিরোধী যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র আহমদ মাসুদ আন্দোলনের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা খলিল হাক্কানি। বিভিন্ন জিহাদী নেতা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে নতুন সরকার গঠন আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান। শনিবার পদপিষ্ট হয়ে ৭ জন আফগানের মর্মান্তিক প্রাণহানির পর তালিবান নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করায় কাবুল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে। সাময়িক ছেদ পড়ার পর পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের আমদানি-রফতানি অব্যাহত রয়েছে। নিষিদ্ধ তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান টিটিপির পাকিস্তানবিরোধী কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণে কমিশন গঠন করে তালেবান তাদেরকে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে পরিবারসহ আফগানিস্তান ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। পাঞ্জশিরকেন্দ্রিক বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তালেবান। কাবুলের জাদুঘরে রক্ষিত প্রাচীন নিদর্শনসমূহ সুরক্ষিত করতে বাহিনী মোতায়েন করেছে তালেবান। এদিকে দেশ পুনর্গঠনে তুরস্ককে কাছে পেতে চাচ্ছে তালেবানরা।
আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন এবং গত সপ্তাহান্তে রাজধানী কাবুল দখলে নেয়ার পর থেকে সারা দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তালেবান তাদের আলোচনায় অগ্রগতি দাবি করেছে। তাদের এ দাবি ইঙ্গিত দেয় যে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা কমতে পারে। গত শনিবার তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার কাবুলে পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা পরে দেয়া বিবৃতিতে একথা বলা হয়। সেখানে মিলিশিয়ার সিনিয়র কমান্ডাররা ইতোমধ্যেই জিহাদি নেতা ও রাজনীতিবিদদের সাথে সরকার গঠনের জন্য আলোচনা করেন। গত বছর দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করার পর বারাদার মঙ্গলবার কাতার থেকে আফগানিস্তানে যান। তিনি প্রথমে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার পরিদর্শন করেন। তার ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রুপটি ঘোষণা করেছিল যে, তাদের নিয়ম এবার ‘ভিন্ন’ হবে।
এখন পর্যন্ত, তারা তাদের সরকার কে গঠন করবে সে সম্পর্কে সামান্য কিছু বিবরণ দিয়েছে। বারাদার কাবুলে আসার কয়েক ঘণ্টা পরে, তালেবানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোয় দেখা গেছে, খলিল হাক্কানি-আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা একজন, যার মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার ঘোষণা করা হয়েছিল- তিনি জানিয়েছেন যে, আফগানিস্তানের বিখ্যাত তালেবান বিরোধী যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র আহমদ মাসুদ আন্দোলনের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছেন।
মাসুদ এ সপ্তাহের শুরুতে কাবুলের উত্তর-পূর্বে পাঞ্জশির উপত্যকায় তার প্রতিরোধ আন্দোলনে অস্ত্র সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি তার পিতা আহমদ শাহ মাসুদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান। তার এ আহ্বানে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যদিও হাক্কানির ঘোষণার ব্যাপারে মাসুদ কোন বিবৃতি দেননি, কিন্তু তার সহযোগীরা বলেছেন যে, তালেবানদের সাথে আলোচনা এখনও চলছে।
তালেবান এবং অন্যান্য আফগান রাজনৈতিক নেতারা নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে তাদের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, তালেবানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, নতুন সরকার গঠনের কাঠামো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘তালেবানের আইনী, ধর্মীয় এবং পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা কাঠামো প্রস্তুত করতে কাজ করছেন।’ আফগানিস্তানের টোলো সংবাদ সংস্থার মতে, তালেবানরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন সরকারের কাঠামো ঘোষণা করবে।
পণ্য আমদানি-রফতানি অব্যাহত
গত ১৫ আগস্ট তালেবানদের আফগান রাজধানী কাবুল দখলের পর সাময়িক বাধাগ্রস্থ হলেও পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। খায়বার জেলার তোর্খামে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পণ্যবোঝাই কাভার্ড ভ্যান ও লরিগুলো সীমান্ত অতিক্রমকালে আফগানিস্তান সীমান্তে অস্ত্রধারী তালেবানরা এবং পাকিস্তান সীমান্তে সেদেশের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা তদারকি করছেন।
তালেবান হস্তক্ষেপে কাবুল বিমানবন্দর শান্ত
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলায় পদপিষ্ট হয়ে ৭ আফগান নাগরিকের মর্মান্তিক প্রাণহানির পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে দেশটির নতুন শাসকদল তালেবান। গতকাল রোববার থেকে তালেবান বিধিনিষেধ কার্যকর করেছে। এদিন দেশত্যাগে ইচ্ছুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তালেবানরা ফাঁকা গুলি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ফলে তালেবান কাবুল দখলের পর বিমানবন্দরে গত সপ্তাহজুড়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছিল, তা এখন আর নেই। রোববার সকাল থেকেই কাবুল বিমানবন্দর বেশ শান্ত দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার সকাল থেকে বিমানবন্দরে নতুন বিধিনিষেধ জারি করে তালেবান। তারা বিমানবন্দরের সবগুলো ফটক দিয়ে সারিবদ্ধভাবে মানুষকে প্রবেশ করাচ্ছেন। ফলে বিমানবন্দরে পরিস্থিতি শান্ত ছিল এবং ফ্লাইট নিয়ে বিভ্রান্তি বা দৌড়াদৌড়ি ও সহিংসতা বন্ধ হয়েছে। তবে ভোর থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করা মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
ন্যাটো এবং তালেবান জানিয়েছে, গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল নেয়ার পর মানুষের হুড়োহুড়িতে বিমানবন্দরে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ এবং অন্যরা রানওয়েতে দুর্ঘটনায় মারা যান।
এদিকে, শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের চারপাশে বিশৃঙ্খলায় সাত আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। গত শনিবার পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়াদের ৪ জনই মহিলা। পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। কিন্তু তা যতোটা সম্ভব নিরাপদে পরিস্থিতি ঠিক করার চেষ্টা করছে।
আত্মসমর্পণে ৪ ঘণ্টা সময় বিদ্রোহীদের
আফগানিস্তানের একেবারে শেষ প্রান্তের প্রদেশ পাঞ্জশিরে বসে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন আফগান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ। তার সঙ্গে আছেন গনি সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল বিসমিল্লাহ মোহাম্মদী। তালেবানের বিরুদ্ধে তারা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তালেবান তাদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ৪ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তালেবান তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছে। খবরে আরো বলা হয়েছে, তালেবানের হাতে এই মুহূর্তে আছে আমেরিকার দেওয়া বিপুল অস্ত্রের সম্ভার। এক হিসেব অনুযায়ী, আফগান সেনাকে আমেরিকা ৬ লাখ রাইফেল-বন্দুক জাতীয় হালকা অস্ত্র, ৮০ হাজারের বেশি মাইন নিরোধক অত্যাধুনিক গাড়ি, যে কোনো রাস্তায় চলতে পারে এমন ৪ হাজার ৭০০ টি হামভি, ২০ হাজারেরও বেশি গ্রেনেড, নাইট ভিশন গগলস এবং ম্যানপ্যাক দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকার অত্যাধুনিক অস্ত্র ভান্ডারের সবটাই এই মুহূর্তে তালেবানের কাছে।
টিটিপির কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণে তালেবানে কমিশন গঠন
টিটিপি নেতাদের আফগান তালেবান কমিশন-এর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে তাদের সমস্যার সমাধান করতে এবং পাকিস্তান সরকারের সম্ভাব্য ক্ষমার বিনিময়ে তাদের পরিবারসহ দেশে ফিরে যেতে। নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), যা সাধারণত পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত, আফগান সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করছে এমন অভিযোগের তদন্ত করতে আফগানিস্তান তালেবান একটি তিন সদস্যের কমিশন গঠন করেছে। পাকিস্তান সরকারের সম্ভাব্য ক্ষমার বিনিময়ে টিটিপি নেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে (পাকিস্তানের সাথে তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে এবং তাদের পরিবারসহ দেশে ফিরে যেতে)। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিদের ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে এবং তাদের আফগানিস্তানে ফিরে যেতে বলেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা পূর্ব আফগান সরকারের কাছে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য টিটিপির আফগান মাটি ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আসছি এবং ভবিষ্যতে আফগান সরকারের কাছেও টিটিপি যাতে স্থান না দেয় সে বিষয়ে আমরা বিষয়টি উত্থাপন করব। আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে’।
কাবুলের জাদুঘর রক্ষায় বাহিনী মোতায়েন
ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। তালেবান-১ এর মতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিদর্শন ধ্বংসের অভিযোগ থেকে নিজেদের বাচাতে চায় তালেবান-২ এর নেতারা। আফগানিস্তানের জাতীয় সংগ্রহালয়ের পরিচালক মোহাম্মাদ ফাহিম রহিমি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কাবুলে জাতীয় সংগ্রহালয়ের বাইরে সশস্ত্র পাহারা বসিয়েছে তালেবান। সেই সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি- আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নমুনাবহনকারী নিদর্শনগুলো রক্ষা করা হবে। এ নিয়ে বুধবার তালেবান নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তার।
রহিমি জানিয়েছেন, কাবুলে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফগানিস্তান ভবনের দরজায় রক্ষী মোতায়েন করেছে তালেবান। ওই সংগ্রহালয়ে রাখা মহামূল্যবান সামগ্রী লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমে তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘আফগানিস্তানের বৌদ্ধদের স্থানগুলোর (ধ্বংস হওয়ার) কোনো ঝুঁকি নেই।’
আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তুরস্ককে চায়
তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেছেন, আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য তাদের তুরস্ককে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তিনি তুরস্কের দৈনিক ‘তুর্কিয়া’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের সব অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা আফগানিস্তানের প্রতিটি অঞ্চলের পুনর্গঠন করব। এ ব্যাপারে আমাদের তুরস্কের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তালেবানের এই মুখপাত্র আরো বলেন, তুরস্ক আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বের একটি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী দেশ তুরস্ক। মুসলিম বিশ্বেও তুরস্কের উঁচু মানের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আফগানিস্তানের সাথে তুরস্কের সম্পর্ককে অন্য কোনো দেশের সাথে তুলনা করা চলে না। এর আগে কাবুল দখলের এক দিন পর গত ১৬ আগস্ট তুরস্কের ক্ষমতাসীন সরকারের নিউজ চ্যানেল ‘তুর্ক খবর’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে সোহাইল শাহিন বলেছিলেন, তুরস্ক আমাদের কাছে একটি ভ্রাতৃপ্রতীম ইসলামি দেশ হিসেবে বিবেচিত। তিনি আরো বলেন, তুরস্কের সাথে আমরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। এরপর তুর্কি প্রেসিডেন্ট ১৯ আগস্ট তালেবানের সাথে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি হয়তো অচিরেই তালেবান নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এর আগে ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে তুর্কি সেনা মোতায়েন ছিল। কিছু দিন আগে এরদোগান বলেছিলেন, তার দেশের সেনারা কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সে সময় তালেবান কাবুল দখল না করলেও আফগানিস্তানের বিশাল অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। তুরস্কের পক্ষ থেকে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রস্তাব সম্পর্কে তালেবান তখন আঙ্কারাকে উদ্দেশ করে বলেছিল, আফগানিস্তানে যেকোনো বিদেশী সেনাকে ‘শত্রুসেনা’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আফগান ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াবে পুতিন-এরদোগান
আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। এসময় আফগান ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছেন তারা। গত শনিবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুই নেতার ফোনালাপ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দেশটিতে স্থিতিশীলতা, নাগরিকদের শান্তি নিশ্চিত করা এবং কঠোরভাবে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে সন্ত্রাস ও মাদকপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন পুতিন ও এরদোয়ান। আফগান ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা। গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখলের পর থেকে একপ্রকার অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে আফগানিস্তানে। আতঙ্কিত বহু মানুষ দেশ ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে, গত দুই দশক পশ্চিমা বাহিনীকে সহায়তাকারীরা প্রাণসংশয়ে ভুগছেন। তবে সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তালেবান জানিয়েছে, তারা আর যুদ্ধ চায় না। এখন একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠনই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তালেবানদের স্বীকৃতি দেয়নি এবং তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলোচনাও করছে না। গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ইইউ কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেয়েন। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে কাবুল থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া ইইউ প্রতিষ্ঠানের আফগান কর্মীদের কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তালেবান প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন ইইউ নির্বাহী প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েন। তিনি বলেন, তিনি মানবিক সহায়তায় ৫৭ মিলিয়ন ইউরো (৬৭ মিলিয়ন ডলার) বৃদ্ধির প্রস্তাব করবেন, যা চলতি বছর কমিশন আফগানিস্তানের জন্য বরাদ্দ করেছিল।
উরসুলা বলেন, ইইউ উন্নয়ন সহায়তা মানবাধিকারের সম্মান, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার এবং নারী ও কিওেশারীদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। তিনি বলেন, আমরা হয়তো তালেবানের কথা শুনবো। কিন্তু তাদের কাজ ও কর্মের মাধ্যমে আমরা তাদের সবার ওপরে পরিমাপ করবো। শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে কমিশন ইইউ দেশগুলোকে তহবিল প্রদানের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়ে উরসুলা আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে জি-৭ সম্মেলনে পুনর্বাসন ইস্যুটি তিনি তুলবেন। সূত্র : ট্রিবিউন, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি ও ডেইল সাবাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।