গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে প্রায় আধাকেজি মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ এবং পাঁচ হাজার ইয়াবাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজন তরুণী রয়েছেন। তারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রুবায়াত, রোহিত হোসেন, মাসুম হান্নান, আমানুল্লাহ, মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান, মুসা উইল বাবর, সৈয়দা আনিকা জামান ওরফে অর্পিতা জামান, লায়লা আফরোজ প্রিয়া, তানজিম আলী শাহ এবং হাসিবুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আধাকেজি মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’র দাম অর্ধকোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মোট আটটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, এরা মাদক ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট। অভিজাত এলাকায় তাদের বিচরণ। প্রত্যেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তান অথবা ব্যবসায়ী। গত শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বনশ্রী, বারিধারা, উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, একমাস আগে একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই সিন্ডিকেটের সন্ধান মেলে। তিনি বলেন, ক্রিস্টাল মেথ (আইস) একটি ভয়ঙ্কর মাদক, যা ইয়াবার থেকে বহুগুণ শক্তিশালী যা মানব মস্তিষ্কের নিউরনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি একটি ‘ক’ শ্রেণীর মাদকদ্রব্য।
তিনি আরো বলেন, কিছুদিন ধরে নতুন মাদকের দিকে ঝুঁকছেন মাদক কারবারি ও সেবীরা, যার নাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। সর্বপ্রথম মাদকটি ধরা পড়ে ২০০৭ সালে। তারপরে ১০ থেকে ১২ বছর এর অস্তিত্ব আমরা পাইনি। ২০১৯ সালে আবারও এ মাদকের আবির্ভাব ঘটে। সে বছর আমরা রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইস তৈরির কারখানার সন্ধান পাই। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তিনি মালয়েশিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালেই আইস তৈরির কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে দেশে ফিরে আইস তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আইস নামের এ মাদক ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের কাছে এমন তথ্য ছিল। একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ও গোয়েন্দা কৌশল ব্যবহার করে আমরা বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় ‘আইস’ এর এ শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হই। সে পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক টিম শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত একযোগে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর যুব সমাজের মাঝে এ মাদকটি ছড়িয়ে পড়ছে। বিয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রেফতারদের সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান। গ্রেফতার রোহিত হোসেন মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা করেছেন। মালয়েশিয়াতেই তিনি আইসে আসক্ত হন। এরপর দেশে ফিরে এ মাদক কারবারে জড়ান। উত্তরায় তার বাবার একটি বড় মার্কেট রয়েছে। গ্রেফতার ১০ জনের এ চক্রটির মূলহোতাকে আমরা খুঁজছি। তবে গ্রেফতার প্রত্যেকেই মাদকসেবী। সেবন করতে করতে তারা আইস কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের প্রত্যেকের আলাদা পেশা রয়েছে। সেসব পেশার আড়ালেই তারা আইসের কারবার করছেন।
আইস কীভাবে দেশে আসছে জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, মাদকটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসার তথ্য আমরা পেয়েছি। কীভাবে, কোন পথে, কারা এ ভয়ঙ্কর মাদক নিয়ে আসছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ কৌতুহল থেকে আইস নামের মাদক সেবন করতে গিয়ে কারবারে জড়িয়ে পড়েন। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা এক গ্রাম আইস ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় কেনাবেচা করত। মাদক দ্রব্য অধিদফতরের কেমিস্ট শফিকুর রহমান সরকার বলেন, জব্দকৃত ৫০০ গ্রাম আইস থেকে প্রায় এক লাখ পিস ইয়াবা তৈরি করা সম্ভব। মাদক কারবারিরা সরাসরি ইয়াবা চোরাচালান ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সরাসরি কাঁচামাল চোরাইপথে আনছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এতে করে পরিবারের সদস্য বা অভিভাবকরা সহজে বুঝতে পারেন না যে, আইস ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি সহজে এগিয়ে যাওয়া যায়। তৃতীয়ত, ইয়াবার চেয়ে আইস ১৮ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।