পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী দেড় মাসের মাথায় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় নিজেদেরকে পুনরায় প্রতিষ্ঠত করেছে তালেবান। রোববার তারা রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। এরপর তালেবান ঘোষণা দিয়েছে যে, আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটিতে ২০ বছরের আমেরিকান যুগের অবসান ঘটলো।
তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম আল-জাজিরা টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তালেবানরা বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে চায় না। তিনি জানান, দলটি নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং শরিয়া আইনের মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে। তিনি বলেন, ‘আজ আফগান জনগণ এবং মুজাহিদিনদের জন্য একটি মহান দিন। তারা ২০ বছর ধরে তাদের প্রচেষ্টা এবং ত্যাগের ফল দেখেছে। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ, দেশে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’ তালেবান বিদেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশ ও সংস্থাকে যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সঙ্গে বসার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তালেবান যোদ্ধাদের প্রবেশ, রক্তপাত এড়াতে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির আফগানিস্তান ত্যাগ এবং আমেরিকা আতঙ্কিত হয়ে তার দূতাবাস ত্যাগসহ রোববার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ মন্তব্য এসেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণে উৎখাত হওয়ার দুই দশক পরে তারা আবার দেশটির ক্ষমতা দখল করেছে।
গতকাল সকাল নাগাদ একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমা কূটনৈতিক কর্মীদের অধিকাংশই কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং বিমানবন্দর সুরক্ষিত করা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইসহ আফগান কর্মকর্তাদের একটি কাউন্সিল বলেছে যে, তারা সরকার গঠন নিয়ে তালেবানদের সাথে আলোচনা শুরু করবে। গত সপ্তাহে গ্রামাঞ্চল এবং শহরগুলোতে তালেবানদের গতি এবং কৌশল আমেরিকা ও তাদের সমর্থিত আফগান সরকারকে সমানভাবে স্তম্ভিত করে ফেলে। তড়িঘড়ি করে আমেরিকান সামরিক হেলিকপ্টার ফ্লাইটগুলো কাবুলের দূতাবাস থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে, আমেরিকান ক‚টনীতিক এবং আফগান দূতাবাসের কর্মীদেরকে কাবুল সামরিক বিমানবন্দরে নিয়ে গেছে।
এর মধ্যেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া নতুন একটি ভিডিও বার্তায় তালেবান নেতারা আফগানিস্তানের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। কাবুল দখল ও বিজয় ঘোষণার একদিন পরে তালেবানের পক্ষ থেকে গতকাল নতুন এ ভিডিও বার্তা প্রচার করা হলো। সেই ভিডিও বার্তায় তালেবানের উপ-প্রধান নেতা মোল্লা বারাদার আখুন্দ বলেছেন, এখন সময় হয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়নের। তালেবানের উপ-প্রধান আরো বলেন, আমাদের জাতিকে আমরা সবচেয়ে ভালো সেবা দেব, গোটা জাতির জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসব, তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যতদূর যা করা দরকার, আমরা তাই করব। তিনি বলেন, ‘যেভাবে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে, তা কাঙ্খিত ছিল না। সেইসঙ্গে আজ আমরা যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাও কেউ ভাবেনি। এক সপ্তাহে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের পতন হয়েছে। বিশ্বে এমন ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসল পরীক্ষার শুরু এখন। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের সমস্যা সমাধান এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের সেটা মোকাবিলা করতে হবে।’ এদিকে, চীন বলছে তারা তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার জন্য প্রস্তুত। রাশিয়া বলছে, আজ মঙ্গলবার তালেবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। চীন ও রাশিয়া এমন সময়ে এই মন্তব্য করছে, যখন পশ্চিমা বিশ্ব শক্তি প্রয়োগ করে আফগানিস্তান দখল করায় তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানিয়েছে। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং সাংবাদিকদের বলেন, আফগান জনগণের নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণের স্বাধীন অধিকারকে চীন সম্মান জানায়। চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক করতে প্রস্তুত। রাশিয়া বলছে, তারা তালেবানের সমন্বয়কের সঙ্গে মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মঙ্গলবার তালেবান নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জারিনভ সাক্ষাৎ করবেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব তালেবানকে স্বীকৃতি দেব কি না। তালেবানের সরকার গঠনের ভিত্তি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, পাকিস্তান আফগানিস্তানে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। গতকাল বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আফগান শরণার্থী শিশুদের শিক্ষার সুবিধাও দিচ্ছে। প্রায় ৬ হাজার আফগান শিশু পাকিস্তানে অধ্যয়ন করছে।’ মালালা আফগানিস্তানে নারীদের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার উন্নয়নে পাকিস্তানকে সক্রিয় ভ‚মিকা পালনের আহ্বান জানান। মালালা বলেন, তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে একটি চিঠিও লিখেছেন।
আফগানিস্তানের আকাশে উড়ন্ত বিমান থেকে পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে কাবুল বিমানবন্দরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিমানের চাকার খাঁজে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই দুই আফগান নাগরিক। কিন্তু বিমান আকাশে ওড়ার পরেই ছিটকে পড়েন তারা। কাবুল বিমানবন্দরের এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
গত রোববার দুপুর থেকে কাবুলে তালেবান ঢুকতেই ভিড় জমতে শুরু করে আফগানিস্তানের রাজধানীর বিমান বন্দরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার বিমানবন্দর চত্বরে গুলিও ছোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আমেরিকার সেনারা। কিন্তু তবুও ভিড় বাড়তেই থাকে। এসময় ভিড়ের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মার্কিন সেনাদের গুলিতে না কি পদপিষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা কোন পক্ষই নিশ্চিত করতে পারেনি।
দীর্ঘ ২০ বছর পর ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে তালেবানকে অভিনন্দন জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গতকাল এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ‘সমগ্র আফগান ভ‚মিকে মার্কিন দখলদায়িত্ব থেকে মুক্ত করায় তালেবানকে অভিনন্দন। হামাস সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘ ২০ বছরের আগ্রাসনের অবসানের জন্য তালেবানের প্রশংসা করেছে। বিবৃতিতে হামাস আফগান জনগণের সফল ভবিষ্যতের ব্যাপারে শুভকামনা জানিয়েছে। হামাস জানায়, আমেরিকান সৈন্যদের বিতাড়িত করা প্রমাণ করে যে, জনগণের প্রতিরোধই এ বিজয়ের কারণ।
এদিকে তালেবানের ঝটিকা অভিযানের পর প্রথমে ক্ষমতা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে থাকার কথা থাকলেও পালিয়ে যান দেশটির মার্কিন পদলেহি প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। প্রথমত তিনি তাজিকিস্তানে গেলেও তাকে সেখানে আশ্রয় না দেওয়ায় তিনি ওমানে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি সেখানে আশ্রয় পেয়েছেন কি না শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তার ও তার পরিবারের মার্কিন ভিসা থাকায় তার শেষ গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র হতে পারে বলে অনুমান। সূত্র : ট্রিবিউন, ডেইলি মেইল, নিউইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।