পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানব পাচারকারী চক্রের মুলহোতা কাল্লু (৪০) গত ১০বছর ধরেই দরিদ্র ও নিন্ম আয়ের পরিবারের বেড়ে ওঠা কিশোরীদের ভারতে পাচার করে আসছিল। এই কাজে তার ভাগনে নাগিন সোহাগ (৩২) ছিল অন্যতম সহযোগী। আর ভারতের বিভিন্ন এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন সাতক্ষীরা জেলার বিল্লালসহ আরো কয়েকজন সদস্য। কাল্লু- সোহাগ চক্রে ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে ভারতে এ পর্যন্ত দুইশ’র বেশি নারী পাচার করেছে এই চক্র। গত কয়েকদিন রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে নারী পাচারকারী চক্রের মুলহোতা কাল্লু, নাগিন সোহাগ ওরফে সোহাগ ও সীমান্তবর্তী এজেন্ট মো. বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে একজন সাহসী ‘মা’ সম্পর্কে জানা যায়। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে পাচার হওয়া মেয়েকে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নিষিদ্ধ পল্লী উদ্ধার করেন। বিষয়টি আলোড়ন তৈরি করলে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জানুয়ারিতে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় পরিবারের অগোচরে তার ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়া হয়। ভুক্তভোগী মেয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে পাচারকালীন সময়ে তার মাকে পাচারের বিষয়টি জানাতে সক্ষম হয়। তখন মা মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাচারকারীদের কাছে নিজের নাম গোপন করে তিনি মুন্নি নামে পরিচয় দেন। ফেব্রয়ারিতে নাগিন সোহাগ ও কাল্লু একইভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর মাকেও এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। চক্রটি একই পথে অবৈধভাবে তাকেও নিয়ে যায় ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে। তবে মানবপাচারকারী ওই চক্রের সদস্যদের হাত থেকে মা খুব কষ্টে পালিয়ে যায়। এরপর মেয়েকে খুঁজে পেতে তিন মাস ধরে কলকাতার অলিগলি, কখনও দিল্লির অলিগলি চষে বেরিয়েছেন। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ (পশ্চিম দিনাজপুর) ও বিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা কিশানগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মেয়েকে উদ্ধার করেন সাহসী এই মা।
উদ্ধারের পর বাংলাদেশে ফিরে আসার সময় ভারত সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সদস্যরা তাদের ধরে ফেলেন। পরে পুরো ঘটনা খুলে বললে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে যোগযোগ করে বিএসএফ। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নারী পাচার করতো। চক্রের মূল হোতা কাল্লু-সোহাগ ছাড়াও দেশে ২০-২৫ জন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। এছাড়া গ্রেফতারকৃত বিল্লাল সীমান্তবর্তী এলাকার সমন্বয়ক। পাচার চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে বলে জানা যায়। মূলত, যৌন বৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই ভিকটিমদের পাচার করা হতো বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। চক্রটি ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁও, গাজীপুরসহ বেশকয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, ভুক্তভোগীদেরকে অবৈধভাবে নৌ-পথে ও স্থলপথে সীমান্ত পারাপার করানো হত। তারা কয়েকটি ধাপে পাচরের কাজটি করে। প্রথমে নাগিন সোহাগ এই চক্রের অন্য সদস্যরা অল্প বয়সী তরুণীদেরকে ভারতে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। প্রলুব্ধ ভিকটিমদের পরবর্তী সময়ে কাল্লুর কাছে বুঝিয়ে দেয়া হতো।
এরপর কাল্লু নিজেই অথবা সোহাগসহ অন্যান্যদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকার বিল্লালের সেইফ হাউসে অবস্থান করাতো। গ্রেফতার বিল্লাল চারটি সেইফ হাউস পরিচালনা করে থাকে। সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে তাদেরকে ভিকটিমদের জলপথ দিয়ে নৌকায় সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করানো হতো। এছাড়া স্থল পথে পাচারের ক্ষেত্রে অরক্ষিত অঞ্চল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পাচার হওয়ার পর দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকদিন ভিকটিমদের অবস্থান করানো হয়। তারপর সুবিধাজনক সময়ে সড়কপথে তাদেরকে চাহিদামতো বিভিন্ন স্থানে পাঠানো ও বিক্রি করা হতো। আর এভাবেই এই কিশোরীকেও পাঞ্জিপাড়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়। উল্লেখ্য ভিকটিম ‘মা’ উক্ত যৌনপল্লী হতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্যদের সহযোগীতায় তার মেয়েকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। এর আগেও বিল্লাল ও তার সহযোগী (স্ত্রী) রাজিয়া খাতুন ২০১৮ সালে পল্লবী থানার মানবপাচার মামলায় এক বছর কারাভোগ করেছেন এছাড়া ৪-৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত কাল্লুও করাভোগ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।