Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরে অভিনব প্রতারণার শিকার কলেজ শিক্ষার্থী

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ৬:০৭ পিএম

দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করার পরে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বিয়ে করেন এক তরুণ। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে স্বামীকে একতরফা তালাক দেয় শিক্ষার্থী। এরপর আবার কথিত স্বামী কর্তৃক অপহরণের শিকার পরে উদ্ধার হয়ে থানায় মামলা কারায় ভুক্তভোগী পরিবারকে দিনের পর দিন হুমকি দিচ্ছে প্রতারক যুবক। আতঙ্ক আর ভয়ে দিন কাটছে অসহায় পরিবারটির। এমনই অভিযোগ রয়েছে, কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ মামলার প্রধান পলাতক আসামী বাবু হাওলাদার (২২) এর বিরুদ্ধে। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা কালিকাপুর ইউনিয়নের হোসনাবাদ এলাকার ফারুক হাওলাদারের ছেলে। বাবু হাওলাদার অপহরণ মামলার প্রধান পলাতক আসামী হলেও ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়েই যাচ্ছেন।

অভিযোগ জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করে আসছিল বাবু হাওলাদার (২০) নামে এক ব্যক্তি। একাধিকবার মেয়ের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি মেয়ের পরিবার। তাতেই ক্ষিপ্ত হয় বাবু। এর কিছু দিন পরে ২০২০ সালের ২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে ওই তরুণী বাড়ির পাশেই তার বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিল। সে সময়ই বাবু পূর্বপরিকল্পিতভাবে আরো দু’জন সহযোগী নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে জোরপূর্বক ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক শিক্ষার্থীর পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তার কোন সন্ধান না পেলেও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে পারেনি এবং বাবু এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। ঘটনার দুই মাস পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে পুরো বিষয়টি খুলে বলেন। বাবু হাওলাদার তাকে নিয়ে গিয়ে জোর পূর্বক শিবচর পাঁচ্চর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে এবং পরে সুযোগ পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে।

ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল শিবচর উপজেলা বাঁশকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান নামের এক কাজির মাধ্যমে মেয়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও জোর পূর্বক বিবাহ করতে বাধ্য করে বাবু। তখন বাবু ওই মেয়ের নামে নকল একটি জন্মনিবন্ধন তৈরি করে কাজি আব্দুল মান্নানকে দেয়। যেখানে তার বয়স দেখানো হয়েছে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ। অথচ মেয়ের মূল জন্মনিবন্ধনে বয়স ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ এবং মেয়ের স্কুল সার্টিফিকেট এবং এসএসসি সার্টিফিকেট সনদে একই জন্ম তারিখ রয়েছে। তখন ওই শিক্ষার্থীর বয়স মাত্র ১৭।

এদিকে কাজী আব্দুল মান্নান এর কাছে গিয়ে তার নিকাহ রেজিস্ট্রার খাতায় মেয়ের জন্ম তারিখ ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ দেয়া থাকলেও সেখানে মেয়ের বা ছেলের কোন স্বাক্ষর করা নেই। কিন্তু বাবু হাওলাদার একটি নকল কাবিননামা তৈরি করে এলাকার সবাইকে দেখিয়ে বলছেন, এ মেয়ে তার বিবাহ করা স্ত্রী। ওই শিক্ষার্থী তার পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে আর কোন উপায় না পেয়ে একতরফা তালাক দেয় তার কথিত স্বামীকে।

এরপর থেকে আবারো তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল বাবু। এসবের ভয়ে ওই শিক্ষার্থীকে রাজধানীর ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে তার পরিবার। দীর্ঘ দিন পর গত ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসেন ওই শিক্ষার্থী। এদিন তার বিয়ের জন্য বাড়িতে মেহমান আসবে এমন খবরে কথিত স্বামী বাবু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তাদের বাধা দিলে নারীসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবু ও তার সহযোগীরা।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে অভিযান চালিয়ে রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার কালিকাপুর থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সবাই পালিয়ে গেলেও বাবুর সহযোগী বেলায়েত খানকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতেই নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় বাবুকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নামে মামলা করেন।এর পর গত শুক্রবার ১৩ আগস্ট রাত ১০ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিপন হাওলাদার নামে মামলা ৮ নং আসামিকে আটক করে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী বাবু হাওলাদার সহ অন্যান্য আসামী এখনো পলাতক রয়েছে। বাবু হাওলাদার জোরপূর্বক ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করানোর ব্যাপারে তার এর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করবেন বলের জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘বাবু আমার মেয়েকে সব সময় বিরক্ত করতো। ওর কারণে আমরা এলাকায় মুখ দেখাতে পারতাছি না। আমরা মামলা করার পর থেকে সবসময় হুমকি দিয়ে আসতেছে। আমারা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতেছি। বাবু আমার মেয়ের জীবন টা নষ্ট করে দিছে। আমরা এর বিচার চাই।’

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞাঁ বলেন, আমারা ইতিমধ্যেই মামলার দু’জন আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামীদের ধরতে আমার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি পলাতক আসামীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।’

এব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামানের কাছে উক্ত কাজির আইন বহির্ভূত বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিবাহ রেজিস্টার এর ব্যাপারে তার কোন কোন গাফলতি থাকলে সেটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এদিকে মামলার ঘটনার পর থেকে এলাকা থেকে পালিয়েছে বাবু হাওলাদারের পরিবার। যে কারণে বার বার তাদের বাড়ী গিয়েও কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদারীপুর

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ