পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন ফেরি চার বার পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পিলারে ধাক্কা দিয়েছে। সবশেষ গতকাল শুক্রবার সকালে কাকলি ফেরি পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। তবে এতে সেতু অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়নি। সেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, কাকলি ফেরির ধাক্কায় পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপের কোনো ক্ষতি হয়নি।
এদিকে, পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা এড়াতে ঘাট স্থানান্তর করতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ঘাট স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে রো রো ফেরি না চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর পিলারে পরপর চারবার ফেরির ধাক্কার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গতকাল সকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হালকা আঘাত লাগলেও আমরা এটাকে হালকাভাবে দেখছি না। চালকদের দায়িত্বে উদাসীনতার কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট সরিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দিতে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বিকেলে টেলিফোনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঘাট সরাতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগবে। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সকালে মাঝিরকান্দি ঘাট পরিদর্শন করেছি এবং সেখানেই ঘাট সরানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাছাড়া পালের চর নামে আরেকটি জায়গা আছে। আমার স্টাডি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব। পদ্মাসেতুর পিলারে বারবার ফেরির ধাক্কা লাগার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি সেইরকম কিছু না। পদ্মাসেতু চালু হয়ে গেলে বাংলাবাজার ঘাটের বাঁধ রক্ষায় সেতু কর্তৃপক্ষ সেখানে ঘাট রাখতে দিবে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া এর আগেও সেতু কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কাঁঠালবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পেছনে বাংলাবাজারে ঘাটটি সরিয়ে নিয়েছিলাম।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার টনের ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ রয়েছে পদ্মা সেতুতে। ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প বা তার সমান কম্পন সহনীয় এ সেতু। আগামী ২০০ বছর নদীতে যে ক্ষমতার জাহাজ চলবে, তা মাথায় রেখেই সেতুর নকশা করা হয়েছে নির্মাণ কাজও সেভাবেই এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ফেরির চেয়ে বড় নৌযান, ট্যাংকার জাহাজ ১২০০ থেকে ১৩০০ টন জ্বালানি নিয়ে বাঘাবাড়ী, আরিচা, নগরবাড়ী রুটে চলাচল করে। প্রশ্ন উঠছে, এ পথে জাহাজগুলো নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারলেও বারবার ফেরিই কেন পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দিচ্ছে? সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন, পদ্মা সেতুর পিলারে বারবার ফেরির ধাক্কাকে নিছক কোনও দুর্ঘটনা বা চালকের অদক্ষতা বলে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। এখানে কোনও অন্তর্ঘাত আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবিøউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে তৈরি ঘূর্ণিই ফেরির বারবার ধাক্কার কারণ। তিনি বলেন, ফেরি চলাচলের পথে পদ্মা সেতু এলাকা এড়ানোর জন্য বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। এই ঘাটটি শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি ঘাটে নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ ফেরি পুরনো। এগুলোর ইঞ্জিন খুবই দুর্বল। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও সেই সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা থাকে। এর ওপর সেতুর পিলার নির্মাণের জন্য নদীতে পানিপ্রবাহের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। পিলারের আশপাশে স্রোত ও পানির ঘূর্ণন বেশি। এতে পুরনো ফেরির দুর্বল ইঞ্জিন বাতাস ও স্রোতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারছে না। তাছাড়া, চালকদের ফেরি পরিচালনার দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিতে রয়েছে তদারকির যথেষ্ট অভাব।
সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা নদীর একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। নৌযান চলাচলের জন্য যা যথেষ্ট। বিজ্ঞানসম্মতভাবে এ দূরত্ব রাখা হয়েছে। বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ প্রয়োজনীয় ক্ষমতার ইঞ্জিন দিয়ে অনায়াসে সেতুর দুই পিলারের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু ফেরি চলাচলে ঘটছে যত বিপত্তি।
এদিকে, পরপর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআইডবিøউটিসি অতিরিক্ত ও ভারী যান নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি চালকদের সাবধানে ফেরি পরিচালনা করার নির্দেশনা দেয়াও হয়েছিল। এসব নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পিলারে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্বলতা ও দায়িত্বহীনতা কোথায় সেটাও দেখা হচ্ছে। যারা দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফেরি চালাতে যে দক্ষতা থাকতে হয় তা ফেরি চালকদের আছে কি না তা-ও দেখা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের সঙ্গে রো রো ফেরি শাহ মখদুমের ধাক্কা লাগে। এরপর ২৩ জুলাই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহজালাল ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ১০ নম্বর পিলারে সজোরে ধাক্কা খায়। চার দিনের ব্যবধানে গতকাল পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে কাকলি নামে ছোট একটি ফেরির ধাক্কা লাগে। সকাল পৌনে সাতটার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সেতুর পিলারের পানির লাগোয়া অংশে পাইল ক্যাপ বা পলেস্তারা উঠে গেছে।
ফেরি কাকলীর মাস্টার ও হুইল সুকানি বরখাস্ত
শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌরুটে চলাচলরত ফেরি কাকলী সঠিকভাবে পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় ফেরির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার মো. বাদল হোসেন এবং হুইল সুকানি আব্দুর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিআইডব্লিউটিসি এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। এর আগে সকাল ৭টার দিকে ফেরি কাকলী পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া আসার পথে এ ঘটনা ঘটে। ফেরির চালক বাদল তখন জানিয়েছিলেন, ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১১-১২ পিলারের মধ্য দিয়ে আসার কথা। কিন্তু প্রচন্ড স্রোত ও বাতাসের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১০ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরিটির র্যাম্পের একটু ক্ষতি হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফেরিতে পানি ওঠা অবস্থায় দ্রুত শিমুলিয়ার ঘাটে নোঙর করা হয়। এর আগে গত ৯ আগস্ট একই পিলারে ধাক্কা দিয়েছিল বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নামের একটি ফেরি। সেই ঘটনার চার দিনের মাথায় আবারো পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটল। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের ধাক্কা দেওয়ার ঘটনায় খুঁটির পাইল ক্যাপের কিছু কংক্রিট উঠে গেছে। এটি সেতুর তেমন ক্ষতি না হলেও বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। তার আগে গত ২৩ জুলাই সকাল পৌনে ১০টায় ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাট থেকে রওনা দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছিল। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু জুলাই মাসেই ৩টি ফেরি সেতুর পিলারে আঘাত করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।