নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ক্যাম্প ন্যুয়ের প্রিয় আঙিনা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। চারদিকে তাই অনুক্ষণ বেজে চলেছে বিষাদে রাগিণী। ২০ বছরেরও বেশি সময়। সময়টা বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা সময়। পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চারটিই আসে এ সময়ে। দুইবার জিতেছে ট্রেবল। আর তার ম‚ল কারিগরই ছিলেন লিওনেল মেসি। সেই মেসিকে এবার ক্লাব ছাড়তে হচ্ছে। এমনটা হওয়ার পর কি ক্লাব আর আগের মতো থাকবে? টুকরো টুকরো হাজারো মুহ‚র্ত, স্মৃতি উঁকি দিচ্ছে জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুস্কেটস থেকে ক্লেমো লংলেঁ , জাভি থেকে লুইস সুয়ারেজদের মনে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উপচে পড়ছে ফেলে আসা স্মৃতি। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সুন্দর আগামীর প্রত্যাশার বার্তায় ভাসছেন মহাতারকা।
বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে ‘ফ্রি এজেন্ট’ হয়ে যান মেসি। বার্সেলোনা অবশ্য মেসির বিদায় বার্তাটা দিয়েছিল দুদিন আগেই। তবুও আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা ছিল ক্লাব সভাপতি হুয়ান লাপোর্তার সংবাদ সম্মেলন শোনার। যদি নতুন কোনো তথ্য দেন। যদি কোনো উপায় তৈরি হয়। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। উল্টো কঠিন বাস্তবতার কথা বিদায় বার্তাটা আরও জোরালোভাবে দেন ক্লাব সভাপতি, বললেন ‘ক্লাব বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত’। তাতেই শেষ দরজাটা বন্ধ হয়ে যায় মেসির। সতীর্থরাও উপলব্ধি করতে শুরু করেন শ‚ন্যতার। আর এ কঠিন বাস্তবতা যেন মানতে পারছেন না পিকে। সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আবেগি বার্তা দিয়ে বলেন, ‘কিছুই আবার আগের মত হবে না। না ক্যাম্প ন্যু, না বার্সেলোনা শহর, না আমরা। ক্লাবে ২০ বছরেরও বেশি সময় পর, তুমি বার্সার জার্সি পরা বন্ধ করে দিবে। বাস্তবতা, কখনও কখনও, খুব কঠিন।’ তবে আবারও মেসি বার্সায় ফিরবেন, এ অপেক্ষায় থাকবেন পিকে, ‘এখন তুমি চলে যাচ্ছ, কিন্তু আমি জানি যে তুমি একদিন ফিরে আসবে। অনেক কাজ বাকি আছে। এটা ভালোভাবে পার করো, যেখানেই যাও ভালোভাবে উপভোগ করো, জিততে থাকো এবং এটা তুমি করতে জানো। এখানে আমরা তোমাকে মিস করতে যাচ্ছি। আমি তোমাকে ভালবাসি লিও।’
২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে আসা সুয়ারজ ক্যাম্প ন্যু থেকে বিদায় নেন গত বছর। পাড়ি জমান অ্যাটলটিকো মাদ্রিদে। উরুগুয়ের এই ফরোয়ার্ডের সঙ্গে মেসির ঘনিষ্ঠতা কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়; পারিবারিকও। পথ আলাদা হয়ে গেলেও কিছুদিন আগে একসঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল দুই পরিবার। বার্সেলোনা থেকে সুয়ারেসের বিদায়টা সুখের হয়নি মোটেও। বন্ধুকে রেখে দেওয়ার সব চেষ্টাই করেছিলেন মেসি। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয় শেষ পর্যন্ত। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুটবলের সবুজে পথচলা থেমেছে কিন্তু দুই বন্ধুকে আলাদা করা যায়নি। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া সুয়ারেজের বার্তায় ফুটে উঠল তা, ‘বন্ধু, বার্সেলোনায় যে গল্প তুমি লিখেছে, জানি তা বলার জন্য হাজারো শব্দ আছে। যে ক্লাবে তুমি বেড়ে উঠেছ, যে ক্লাবকে তুমি ভীষণ ভালোবেসেছ এবং ইতিহাসের সেরা হওয়ার আগ পর্যন্ত যে ক্লাবটির হয়ে তুমি জিতেছ অনেক, অনেক শিরোপা। লিভারপুল ছেড়ে আসার সময় তুমি যেভাবে আমাকে বরণ করে নিয়েছিলে, তার জন্য আমি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকব। কী দারুণ মানুষ তুমি। বার্সেলোনায় হাজারো দারুণ মুহূর্ত তোমার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পেরে গর্বিত এবং তোমার সঙ্গে খেলতে পেরে ভাগ্যবান আমি। আন্তরিকভাবে চাই, তোমার এবং তোমার পরিবারের সঙ্গে ভবিষ্যতে যেটা হবে, সেরাটাই হোক। ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে।’
২০০৮ সাল থেকে মেসির সতীর্থ ছিলেন বুস্কেটস। দুজনে মিলে জিতেছেন তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ আরও অনেক শিরোপা। সদ্য সাবেক হওয়া বার্সেলোনা সতীর্থদের মধ্যে সবার আগে বিদায়ী বার্তা দিয়েছেন বুস্কেটস, ‘ক্লাবের জন্য তুমি যা করেছ, এই বছরগুলোতে যাদের সঙ্গ দিয়েছ, সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ। এখানে তুমি এসেছিল কিশোর বয়সে এবং চলে যাচ্ছ ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। এই ক্লাবটি যেখানে পৌঁছানোর যোগ্য, তুমি তাকে সেখানে পৌঁছাতে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছ এবং সবসময় বলব, তোমার সঙ্গে খেলেছি এবং ভাগাভাগি করেছি অনেক মুহূর্ত। তোমাকে ভীষণ মিস করব।’
বার্সেলোনায় আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন ফিলিপে কোতিনহো। কিন্তু মেসির সঙ্গে এই ব্রাজিলিয়ানের সম্পর্কে কমতি ছিল না একটু। তা পরিষ্কার কোতিনহোর বার্তায়ও, ‘সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া এবং খেলতে পারা অনেক সম্মানের। ওই সময়টাকে তুমি যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেজন্য খুবই কৃতজ্ঞ! তোমার আরও সাফল্যময় ভবিষ্যৎ কামনা করি। ঈশ্বর সবসময় তোমার এবং তোমার পরিবারের সহায় হোন।’
ইনস্টাগ্রামে জেরার্দ দেউলোফেউয়ের বার্তায় মিশে থাকল প্রশংসা ও শ্রদ্ধা, ‘কী আনন্দদায়ক ব্যাপারই না বিশ্বের সেরা ক্লাব বার্সেলোনায় ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিও মেসির সঙ্গে মুহূর্ত ভাগাভাগি করা। অনেক প্রশংসা ও শ্রদ্ধা তোমাকে। যে বিস্ময় তুমি উপহার দিয়েছ, সেজন্য আমরা তোমাকে শুধু ধন্যবাদই বলতে পারি এবং আশা করি, প্রতি সপ্তাহে মাঠে এই বিস্ময় তুমি উপহার দিতেই থাকবে।’
২০১৮ সালে বার্সেলোনার ‘বি’ দল থেকে মূল দলে পা রেখেছিলেন রিকি পুস। সে অর্থে মেসিকে খুব বেশি দিন ড্রেসিংরুমে পাননি। কিন্তু ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের বার্তায় থাকল মেসির সঙ্গে খেলার স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তি, ‘ফুটবলপাগল যে কোনো শিশুর যেটা স্বপ্ন (তোমার সঙ্গে খেলা), সেটা পূরণ করতে পেরেছি আমি। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করতে পেরেছি, একই দলে খেলতে পেরেছি। তার সঙ্গে থাকা, তার কাছ থেকে শেখা এবং তার সঙ্গে লড়তে পারা-শেষ দুই বছরে আমার সঙ্গে ঘটা সেরা ঘটনা। ধন্যবাদ লিও। তোমাকে ভীষণ মিস করব আমরা।’
বিশ্বের সবপ্রান্তে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছড়িয়ে দেওয়ার ফেরিওয়ালা মেসি। সের্গি রবের্তো বিদায়ী বার্তায় আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে স্মরণ করলেন সেভাবেই, ‘যখন ছোট ছিলাম, আমার স্বপ্ন ছিল বার্সেলোনার মূল দলে খেলা। কিন্তু সেটা ফুটবল ইতিহাসের সেরা তোমার সঙ্গে খেলব, তা কখনও কল্পনাও করিনি। যে মুহূর্তগুলো তুমি উপহার দিয়েছ, সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমাকে, ক্লাব সমর্থকদেরকে যে আনন্দ তুমি দিয়েছ, যতগুলো গোল করেছ, যত শিরোপা উৎসব করেছে, এই ক্লাবকে শীর্ষে তোলা এবং অনেক মানুষকে ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখা শেখানোর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি যা আমাদেরকে দিয়েছ, তা কখনই তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারব না। তোমার এবং তোমার পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ শুভকামনা। আমরা তোমাকে ভালোবাসি এবং ভীষণ মিস করব। চিরদিন কৃতজ্ঞ।’
মেসিকে মাত্র তিন মৌসুম সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন ক্লেমো লংলেঁ। ফরাসি এই ডিফেন্ডারের বার্তায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ‘পেশাদার ও নেতৃত্বের’ উদাহরণ, ‘তিন মৌসুম তোমার সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করতে পারার অনুভূতি প্রকাশের কোনো শব্দ আমার নেই। তুমি পেশাদারিত্ব এবং নেতৃত্বের উদাহরণ। এ কারণে তুমি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় এবং কিংবদন্তি অ্যাথলেট। এই ক্লাবকে এবং এই দারুণ ক্লাবে আমার প্রথম দিন থেকে তুমি যা দিয়েছ, সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার দারুণ আগামীর কামনা করি।’
ছোট্ট বার্তায় মিরালেম পিয়ানিচ জানিয়ে দিয়েছেন মেসির প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা, ‘লিও, তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ছিল আনন্দের। তুমি বিশেষ একজন মানুষ। তোমার এবং তোমার পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি। বিশাল আলিঙ্গন... ফেনোমেনোন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।