নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ..। শাহনাজ রহমতউল্লাহর দেশাত্ববোধক গানটি খুব করে মনে পড়ছিল। কারণটা নাথান এলিসের শেষ তিন বল। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ তিন বল। কে জানতো অভিষিক্ত এলিস বিরল এক কীর্তি গড়ে ফেলবেন? যেখানে নিজের কোটার প্রথম তিন ওভারেই দিয়েছেন ২৯ রান। ওভারপ্রতি দশের কাছাকাছি, মিরপুরের মন্থর উইকেটে এ তো অনেক বেশিই। সুর্যোদয় যে সবসময় দিনের পূর্বাভাস দেয় না, তারই যেন আরেকটি মঞ্চায়ন হলো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে। দিন শেষে ফিকে হলো এলিসের কীর্তি, অল্প রানে আটকে গিয়েও ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলের ম্যাচটি জিতে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতলো বাংলাদেশ।
গতকাল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ দলের সামনে সুযোগ ছিল ইতিহাস গড়ার। তা কাজেও লাগালো লাল-সবুজেরা। টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে বোলিংয়ে পাঠান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু টাইগার দলপতির ৫২ রান বাদে আর কেউ বড় সংগ্রহ করতে না পারায় ১২৭ রানেই আকটে যায় স্বাগতিকরা। জবাবে পুরো ২০ ওভার ব্যাট করেও ৪ উইকেটে ১১৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি অজিরা। ১০ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে কম রান করেও প্রতিপক্ষকে আটকানোর রেকর্ড। এরআগে ১৩১ রানে অস্ট্রেলিয়াকে আটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ ম্যাচে আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। টানা তৃতীয় জয়ে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকল রাসের ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।
তবে চেনা আঙিনায় বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিলো দুঃস্বপ্নের মতো। দলীয় ৩ রানেই নেই দুই ওপেনার। তখন মনে হচ্ছিল, আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাহলে ভুলই হয়ে গেল। নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিরে যান। ৩ রানেই দুই উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। যদিও এই জুটি বড় হয়নি। দলীয় ৪৭ রানে থামেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর পূর্ণ করা সাকিব। এর আগে ১৭ বলে ৪টি চারে ২৬ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই ব্যাট হাতে যা লড়াই করেছেন। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে ৫৩ বলে ৪টি চারে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি। আফিফ হোসেন ধ্রæবও ভালো শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান রানআউট হয়ে থামেন। এ ছাড়া নুরুল হাসান সোহান ১১ রান করেন।
ইনিংসের শেষ ওভারের শেষ তিন বলে উইকেট তুলে নেন এলিস। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অভিষিক্ত বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন ডানহাতি এই অজি পেসার। ম্যাচে এই ৩ উইকেটেই পয়েছেন তিনি। এ ছাড়া জস হ্যাজেইলউড ও অ্যাডাম জ্যাম্পা ২টি করে উইকেট নেন। নিজের শেষ ওভারে প্রথমে তুলে নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। ওভারের চতুর্থ বলে তাকে করলেন বোল্ড। এরপর মুস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদি হাসানকেও ফেরালেন তিনি। তাতে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শেষ করলেন নিজের চার ওভারের কোটা। এই হ্যাটট্রিকে গড়া হয়ে গেছে ইতিহাসও। টি-টোয়েন্টি ইতিহাস এর আগে হ্যাটট্রিক হয়েছে ১৭টি। বাংলাদেশের বিপক্ষেই এসেছে চারটি। কিন্তু তার একটিও ছিল না অভিষেকে। এ তালিকায় এলিসই হয়ে থাকলেন প্রথম।
১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ম্যাথু ওয়েডকে তুলে নেন নাসুম। দলীয় ৮ রানে প্রথম উইকেট হারানো অজিদের পথ দেখান বেন ম্যাকডেরমথ ও মিচেল মার্শ জুটি। এ দুই ব্যাটসম্যান ৬৩ রানের জুটিও করে ফেলেন। ম্যাকডেরমথকে ৩৫ রানে বোল্ড করে স্বস্তি ফেরান সাকিব। এরপর মসিস হেনরিকসকে (২) দ্রুত ফিরিয়ে দেন শরিফুল। তখন সংগ্রহ ১৪.১ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৪ রান। ৩৫ বলে অজিদের দরকার ছিল আরও ৫৪ রানের। ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে নয় রান। সে সময় মার্শকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন অ্যালেক্স ক্যারি। ব্যক্তিগত ৫০ রান পূর্ণ করে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেননি শরিফুল। দলীয় ৯৪ রানে চতুর্থ উইকেটের পতণ। তখন জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৩ রানের। বলহাতে মুস্তাফিজ। মাত্র ১ রান খরচ করলেন তিনি। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২২ রানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল দু’টি এছাড়া নাসুম ও সাকিব একটি করে উইকেটের দেখা পান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।