Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ার দৈ তৈরীতে ফরমালিন ?

ব্যবসার গন্ডি পেরিয়েছে হাজার কোটি টাকা ....

বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ৪:৩৮ পিএম

বগুড়ার জনপ্রিয় মিষ্টান্ন আইটেম দই। দেশব্যাপী এর জনপ্রিয়তার কারণে বাইরের কেউ বগুড়ায় এলে যেমন দই নিয়ে ফেরেন , তেমনি বগুড়া থেকেও কেউ বাইরে গেলে অফিসের বস , বা আত্মীয় বাড়িতে দই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বগুড়ার ১২টি উপজেলাতেই এখন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান দই প্রস্তুত করছে । পুরো জেলাতেই এখন দই বা একযোগে দই মিষ্টির সেলিং পয়েন্ট বা শো’রুমের সংখ্যা ৬শ’র মত । আর দৈনিক গড় বিক্রির পরিমাণ ৫ কোটি , মাসে ১ শত ৫০ কোটি এবং বছরে ১ হাজার ৮ মত কোটি টাকার দই বিক্রি হচ্ছে ।

বগুড়ার দইয়ের চাহিদার কারনে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সব বড়বড় শহরেই এখন শো’রুম বা বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে । এটা একদিকে যেমন আশাপ্রদ খবর অন্যদিকে আশংকারও বটে !

চার দশক ধরে দই ব্যাবসার সাথে জড়িত একটি ঘোষ পরিবারের সদস্য জানান , দুই দশক আগেও বগুড়া জেলায় হাতে গোনা ১০/১৫টি প্রতিষ্ঠান দই উৎপাদন ও বিপননের সাথে জড়িত ছিল । তখন দইয়ের উৎপাদনেপ পরিমান কম হলেও মানের কোন কমতি ছিলনা। মুলত বগুড়ার দইয়ের সুনামও ওই সময়েই সারাদেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে । শোনা যায় বগুড়ার নবাববাড়ির কৃতি সন্তান পাকিসাতানের ফরেন মিনিষ্টার থাকাকালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে দই খাইয়ে মুগ্ধ করেন । আইয়ুব খান আবার বৃটেনের রানী এলিজাবেথকে দই পাঠিয়ে কুটনৈতিক বেনিফিট নেওয়ার চেষ্টা করেন।

তার মতে এটা একটা পজিটিভ দিক । তার হিসেবে বগুড়ায় এখন ব্যাপকহারে দই উৎপাদনকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫/৬ হাজার মানুষের। ডেইরিফার্ম গুলোর উৎপন্ন বিপুল পরিমানে দুধ ব্যবহার হচ্ছে দই উৎপাদনের কাজে ।

অন্যদিকে দইয়ের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একশ্রেনীর অসৎ ব্যবসায়ী ও কালোটাকার মালিক নিরাপদ খাত হিসেবে নেমে পড়েছে দই এর ব্যবসায় । এরা ১ কেজির দামে দই যে দই বিক্রি করছে তাতে প্রকৃত দই থাকছে ৭ শ গ্রাম । কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম দই বিকি করছে কেজির দরেই।
ভোক্তা অধিকারের বিধি মোতাবেক দই ও মিষ্টির দাম নির্দিষ্ট স্থানে লেখা থাকার কথা থাকলেও বড়ো দু’চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেই
মানছেননা । ফলে আগে যেমন ১ কেজির ১টি সরা বা বারকির দৈ দিয়ে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে ৮/১০ জনকে খাওয়ানো যেত এখন সেটা মাত্র ৪/৫ জনকেও তুষ্ট করা যায়না বলে কমন অভিযোগ পাওয়া যায় ক্রেতাদের । দই ও মিষ্টান্ন সামগ্রী উৎপাদনে এখন নি¤œ মানের গুঁড়াদুধ ব্যবহার খুব স্বাভাবিক। মুলত বস্তার গুঁড়া দুধের ব্যবহারই হয় বগুড়ায় দই উৎপাদনের কাজে ।

সবচেয়ে মারাত্মক হল প্রিজারভেটিভ এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এখন বিপ্জ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছে যাতে ৮/১০ দিন পর্যন্ত দৈ একই রকম থাকে সেজন্য প্রিজার্ভেটিভ হিসেবে ফরমালিন ব্যবহার কিছু দই প্রস্তÍ কারক । বগুড়ার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের একাধিক দই এর শো’ রুমের মালিকরা এর সাথে জড়িত । বাস যাত্রীরা এখান থেকে দই নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় বিধায় দই প্রস্ততকারকরা সুযোগ নিয়ে থাকে।
বগুড়ায় একাধিক বিভিন্ দই প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভেজাল ও নি¤œ মানের দুধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও মাত্রাতিরিক্ত প্রিজারভেটিভ বা ফরমালিন ব্যবহারের বিষয়ে কোন অভিযান বা অনুসন্ধান কোনটাই হয়নি বলে জানা গেছে । বগুড়া পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শাহ আলীর মতে এবিষয়ে তাদের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে । অচিরেই জনস্বাস্থ সুরক্ষায় দই মিষ্টিতেও অসৎ ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মেশায় কি না তার তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হবে ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ