Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যপ্রাচ্যের নতুন পররাষ্ট্রনীতিতে ম্লান যুক্তরাষ্ট্র

ক্রমবর্ধমান আধিপত্যেও জানান দিচ্ছে চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৫ এএম

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলো পাল্টে যাচ্ছে কারণ আঞ্চলিক শক্তিগুলো আমেরিকার উদাসীনতা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। শত্রæভাবাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতার ক‚টনীতি গতি লাভ করেছে; মিত্র দেশগুলোর পারস্পারিক বন্ধুত্বে ফাটল দেখা দিয়েছে। সউদি আরব, ইরান, তুরস্ক এবং মিশরের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাদের পররাষ্ট্র নীতি পুনর্বিবেচনা করছে এবং বিচ্ছিন্ন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা নবায়ন করেছে এবং চীন নতুন প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে এই আধিপত্যের খেলায় প্রবেশ করেছে।

এই পরিবর্তিত ভ‚রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যকে আরেকটি মহাপরাক্রমশীলতার প্রতিযোগিতার স্থান করে তুলতে পারে। তবে, এতে নতুন ক‚টনৈতিক সম্পর্কগুলো তৈরি এবং নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। ঐহাসিকভাবে একে অপরকে ঘৃণা করে এমন দেশগুলোর ঐক্য আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা হ্রাস করতে পারে। ভবিষ্যতের নতুন সম্পর্কগুলো পুনর্গঠনের পিছনের ম‚ল কারণগুলোর উপর বর্তমানের অনেক কিছু নির্ভর করবে: আমেরিকার আঞ্চলিক প্রস্থান, চীনের উত্থান এবং ইতিমধ্যে দুর্বল আঞ্চলিক অর্থনীতিতে করোনা মহামারীর বিরূপ প্রভাব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তার প্রশাসনের জন্য পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকারে মধ্যপ্রাচ্য নেই। বাইডেন ইয়েমেন যুদ্ধে মার্কিন সমর্থন সমাপ্ত না করেও সউদী আরব থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। তার প্রশাসন ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য ক‚টনীতি শুরু করেছে এবং তুরস্ক এবং মিশরকেও হাতের কাছেই রেখেছে। চলতি মাসে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে বাইডেন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এশিয়া এবং চীনের দিকে অগ্রসর হওয়ায় এই অঞ্চলের শীতল যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে একটি বিশ্বাস বিরাজ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর তাদের প্রকৃত অংশীদার নয়। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র যখন এ অঞ্চল থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে, চীন ক্রমবর্ধমানভাবে এই অঞ্চলে তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।

মার্চে চীন ইরানের সাথে একটি উল্লেখযোগ্য চুক্তি সম্পন্ন করে। তারা তেল এবং গ্যাসের স্থায়ী চালানের বিনিময়ে আগামী ২৫ বছরে ৪শ’ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রæতি দেয়। একই মাসে সউদী আরব, তুরস্ক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ওমানের সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য তার দেশের অঙ্গীকারের কথা নিশ্চিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেছেন যে, চীন বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করবে এবং এই অঞ্চলে স্থায়ী দ্ব›দ্বগুলো নিরসনে সৎ মধ্যস্ততাকারী হিসাবে কাজ করবে।

ওয়াং একটি চীনা মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনাকেও উন্মোচিত করেছেন, যা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে যুক্ত করে বিনিয়োগের মাধ্যমে কয়েক বিলিয়ন ডলার এনে দেবে। এই ধরণের অর্থনৈতিক মিষ্টতা মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়, যেখানে বেকারত্বের হার, দারিদ্র্যের মাত্রা এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক স‚চক করোনা মহামারী হওয়ার অনেক আগ থেকেই হতাশাজনক। গত ১৮ মাসে কোভিড -১৯ ইতিমধ্যে অনেক দেশে সামাজিক সংকটকে গুরুতরভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে আঞ্চলিক সংলাপ এবং ক‚টনীতি ফিরে আসছে। অধিকাংশ স্থানীয় শাসকই বোঝেন যে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা জনগণের চাহিদা পূরণের উপর নির্ভর করে; সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং অন্যদের প্রতি ঘৃণার উপর নয়। ফলে, গত এপ্রিলে সউদি আরব এবং ইরান ইয়েমেনের সংঘাত কিভাবে শেষ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য গোপন আলোচনা করেছে, যেখানে সউদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

সউদি আরব কাতারের সাথেও পুনর্মিলিত হয়েছে, যারা ২০১৭ সালের জুন মাসে সমস্ত সউদি সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ইরানের সাথে বন্ধুত্বপ‚র্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এভাবেই তাদের গত তিন দশকের পারস্পরিক বিদ্বেষ এবং শত্রæতার অবসান ঘটেছে। এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের (আরেক ঘনিষ্ঠ ইরানি অংশীদার) সঙ্গে বহু বছর ধরে যুদ্ধের পর, সউদি কর্মকর্তারা সম্প্রতি দামেস্কে তাদের সিরিয়ান প্রতিপক্ষের সাথে গোপন আলোচনা সেরেছেন, যার ফলে ক‚টনৈতিক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে একটি চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে।

ইরানও তার প্রতিবেশী, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ এপ্রিলে কাতার, ইরাক, কুয়েত এবং ওমান হয়ে আকর্ষণীয় ক‚টনৈতিক সফর থেকে ফিরে আসার পর খুব শীঘ্রই সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা গেছে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো ইরান-সউদি সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা। যদিও ইরানের মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শাসনামল শেষের পথে, তার পরিবর্তে কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন যে, তিনি সউদির সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কোন বাধা দেখছেন না।

সম্পর্কের পুনরুদ্ধার সিরিয়া এবং ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ এবং অনান্য যুদ্ধগুলোকে হ্রাস করবে যা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট। এরফলে, ইরাক ও লেবাননের মতো রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। সূত্র : প্রজেক্ট সিন্ডিকেট।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ