Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাবানলের হটস্পট হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল

করোনার মতো দাবানলও বিশ্বের জন্য হুমকি : এরদোগান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৬ এএম

তুরস্ক, গ্রিস, ইতালি ও ইসরাইলেও দাবানল

ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে তুরস্কের বিভিন্ন প্রদেশে। আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। এর মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বললেন, করোনা মহামারির মতো দাবানলও বিশ্বের জন্য হুমকি। বুধবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। খবর আনাদোলুর। টিভিতে সরাসরি প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এরদোগান বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, এটা সন্ত্রাসী ‘হুমকির মতো’। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশে গত আটদিনে ১৮৭ জায়গায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে এখনও ১৫টি দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরদোগান জানান, ৫১টি হেলকপ্টার ও ২০টি প্লেন আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের গোয়েন্দা ও পুলিশ দাবানালের পেছনে কারও হাত রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে কাজ করছে বলে জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট। সরকারি তথ্যমতে, ২৮ জুলাই থেকে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। খবরে আরো বলা হয়, ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তুরস্ক, গ্রিস ও ইতালির দাবানল। শুধু এই তিন দেশই নয় দাবানলের কবলে আছে ইসরাইলও। দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মিলাসের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রাসে পড়েছে দাবানলের। ইতোমধ্যে সেখান থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাইড্রোজেন কুলিং ট্যাঙ্ক আগেই খালি করে দেয়া হয়েছিল। সংবাদসংস্থা এএফপির তথ্য মতে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতর আগুন ঢুকে পড়ায় দমকল, পুলিশ ও অন্য সরকারি কর্মীরা পালিয়েছেন। এ ব্যাপারে শহরের মেয়র তোকাট জানিয়েছেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে আগুন লেগে গেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান যখন টেলিভিশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র খালি করে দেয়া হয়। এরদোগান তখন বলেন, ‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুড়ে যেতে পারে। প্রবল হাওয়া বইছে। না হলে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।’ ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, ‘দাবানল নিয়ে রাজনীতি করার কোনো অবকাশ নেই। করোনার মতোই বিশ্বজুড়ে দাবানল হচ্ছে। খবরে বলা হয়, দাবানলের হটস্পট হয়ে উঠেছে এখন ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো। গত সপ্তাহে তীব্র তাপ প্রবাহের পর দাবানলের কবলে পড়ে তুরস্ক। এছাড়া আশপাশের দেশগুলোও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে বুধবার সতর্ক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা। মঙ্গলবার গ্রিসের এথেন্সের কাছাকাছি এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে পাঁচ শতাধিক কর্মী। তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে দক্ষিণ ইউরোপের দেশটিতে দাবদাহ ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার গ্রিসে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত সাত দিন ধরে তুরস্কে দাবানলের তাÐব চলছে। যেসব জায়গায় দাবানলের তাÐব চলছে, সেখানে গত কয়েক মাস ধরে প্রবল খরা ছিল। গত বুধবার থেকে দেশটিতে সব মিলিয়ে ১৩০টি জায়গায় আগুন জ্বলছিল। তার মধ্যে এখনো সাতটি বড় আগুন জ্বলছে বলে দেশটির বনমন্ত্রী জানিয়েছেন। কোপার্নিকাস অ্যাটমোস্পেয়ার মনিটরিং সার্ভিস জানিয়েছে, স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবি ও ভ‚মি থেকে পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, দাবানলের তীব্রতা বাড়ছে। এটি ইতালির দক্ষিণ দিকে ছড়াতে শুরু করেছে। গত বছর জুলাইয়ে দাবানলের কবলে পড়েছিল ইতালি, আলবেনিয়া, মরক্কো, গ্রিস, নর্থ মেসিডোনিয়া ও লেবানন। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের পাশেই এসে পড়েছে দাবানল। কয়েক হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এথেন্স ভরে গিয়েছিল ধোঁয়ায়। বুধবারও শহরে ধোঁয়া ছিল। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের বাড়ির ভেতর থাকতে বলা হয়েছে। শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। সারারাত ধরে আগুন নেভানোর কাজ করে গেছেন প্রশিক্ষিত কর্মীরা। আগুনে ৯০টি বাড়ি, ২৭টি বাণিজ্যিক সংস্থা, এবং ৮০টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিটিজেনস প্রোটেকশন মন্ত্রী জানিয়েছেন, কেউ গুরুতর কোনো আঘাত পাননি। কিন্তু শহরের প্রান্তে থাকা আবাসিক এলাকায় আগুন লেগে যাওয়ায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়। তারপরই সেখান থেকে মানুষদের সরিয়ে নেয়া হয়। অনেকে গাড়ি নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে চলে যান। এমনই একজন সাংবাদিকদের বলেন, নারকীয় পরিস্থিতি। গ্রিসজুড়ে একশর বেশি দাবানল জ্বলছে। তাপমাত্রা প্রচÐ বেড়ে গেছে। প্রবল হাওয়া দিচ্ছে। এথেন্স থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপও আগুনের গ্রাসে। সেখানে অন্তত ১৫০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। বুধবার সারা দেশ জুড়ে দাবানল সম্পর্কিত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইটালির তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। একই সাথে সেখানেও দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানকার অবস্থা তুরস্ক ও গ্রিসের মতো অতটা ভয়ংকর না হলেও প্রচুর সংখ্যায় দাবানল জ্বলছে। ইসরাইলের জঙ্গলেও দাবানল জ্বলছে। বিমান ব্যবহার করে দাবানল নেভানোর কাজ চলছে। আনাদোলু, এএফপি, রয়টার্স, ডয়চে ভেলে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাবানল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ