গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নতুন করে না বাড়ালে দুদিন পারেই শেষ হচ্ছে সরকারঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ (লাকডাউন)। শেষদিকে এসে এই লকডাউন অনেকটাই ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। জনসাধারণ প্রয়োজনে যেমন ঘর থেকে বের হচ্ছে, তেমনি বিনা কারণেও বের হচ্ছে। প্রধান সড়কগুলোতে গণপরিবহন না চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা অবাধে চলাচল করছে। এ ছাড়া পুলিশের চেকপোস্টগুলোতেও হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে লকডাউনের এমনি চিত্র দেখা গেছে। তবে গণপরিবহন না চালাচল করায় রাজধানীতে চিরচারিত যানজট দেখা যাচ্ছে না।
মেরুল বাড্ডা থেকে রিকশায় মতিঝিলের অফিসে এসেছেন আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মেরুল বাড্ডা থেকে মতিঝিল আসতে ২০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে। মোটরসাইকেলে আসলে খরচ আরও কম হতো। তবে চেকপোস্টে মাঝে-মধ্যে মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে চেক করে পুলিশ। রিকশায় আসলে এই ঝামেলায় পড়তে হয় না। তাই বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে অফিসে আসার পথে রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে পুলিশের চেকপোস্ট আছে। চলমান লকডাউনের শুরুর দিকে এই চেকপোস্টে বেশ কড়াকডড়ি ছিল। এখন আর কোনো কড়াকড় নেই। আজ দেখলাম চেকপোস্টের পুলিশ অনেকটাই নীরবে দায়িত্ব পালন করছে। রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল সবকিছু অবাধে চেকপোস্ট পার হয়ে যাচ্ছে।’
রাজধানীর কাঁঠালবাগান থেকে মোটরসাইকেলে দিলকুশায় অফিসে আসা জিনান মাহমুদ বলেন, ‘ব্যাংকে চাকরি করার কারণে নিয়মিত অফিসে আসতে হয়। শাহবাগ মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট আছে, তাই শাহবাগ মোড়ে না গিয়ে ভেতর দিয়ে আসি। এখনো কোথাও কোনো সমস্যায় পরিনি।’
তিনি বলেন, ‘চলমান লকডাউনের শুরুর দিকে রাস্তায় মানুষের চলাচল তুলনামূলক অনেক কম ছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে মানুষের চলাচল তত বাড়ছে। তবে বাস না চলায় রাস্তায় তেমন যানজট নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই অফিসে চলে আসতে পারি এবং বাসায় ফিরতে পারি।’
যাত্রাবাড়ী থেকে রিকশায় বিজয়নগর অফিসে আসা রাখি আক্তার বলেন, ‘রাস্তায় সবকিছুই চলছে, শুধু গণপরিবহন চলছে না। এতে আমাদের মতো স্বল্প বেতনের কর্মীদের কষ্ট হচ্ছে। গণপরিবহন চালু থাকলে ২০ টাকা দিয়েই অফিসে আসতে পারি। এখন রিকশায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা চললে বেতনের বেশিরভাগ টাকা রিকশা ভাড়া বাবদ চলে যাবে।’
মালিবাগ মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক আজগর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের শুরুর দিকে তেমন ভাড়া পেতাম না। দুদিন ধরে একটু বেশি ভাড়া পাচ্ছি। তবে স্বাভাবিক সময় থেকে এখন অনেক কম আয় হচ্ছে। দিনে ৪০০ টাকা ভাড়া মারায় কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে অর্ধেক বেলাতেই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া পেতাম।’
তিনি বলেন, ‘চলমান লকডাইনের প্রথমদিকে মাঝে-মধ্যে পুলিশ হয়রানি করতো। ভয়ে ভয়ে রিকশা চালাতাম। কয়েকদিন ধরে পুলিশ কিছু বলে না। যাত্রী নিয়ে সহজেই রাস্তায় চলাচল করতে পারছি। আগের তুলনায় রাস্তায় মানুষের যাতায়াত অনেক বেড়েছে।’
আবুল হোটেল এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে, এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখন গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে মানুষের চলাচল বাড়বে। স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট নিয়ন্ত্রণে আমাদের হয়তো অত বেগ পেতে হয় না, কিন্তু নিয়মিতই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ এই মোড়ের সব রাস্তাতেই গাড়ি চলাচল করছে।’
প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল যেমন বেড়েছে তেমনি রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের চলাচল বেড়েছে। আর কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে থাকা অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। গলির ভেতরে চলাচল করা মানুষের একটি বড় অংশই অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে।
রামপুরা মোল্লাবাড়ি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষের প্রচণ্ড ভিড়। রাস্তার দুই ধারে বসা বাজারটিতে এতটাই ভিড় যে রাস্তা দিয়ে যেতেও অন্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে হচ্ছে। আর দোকানগুলোতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা পণ্য কিনছে।
এই বাজারে সবজি কেনা আলেয়া বেগম নামের একজন বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এই বাজারে এমন ভিড় হয়। এটা এখানকার নিয়মিত ঘটনা। সবাই এটা জানে। কেউ কিছু বলে না। কারণ সবাই এখানে প্রয়োজনেই আসে। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে পুলিশের গাড়িও যায়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।