Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিকা কার্যক্রমে গতি নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

চীন, আমেরিকাসহ প্রভাবশালী দেশগুলো ব্যাপকভাবে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। নতুন করে অর্থনীতি গতিশীল করতে সবকিছু খুলে দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সব সময় টিকা কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে টিকা নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হচ্ছে অথচ টিকা কার্যক্রমে গতি নেই। টিকা কার্যক্রম চালানোর জন্য দফায় দফায় বয়স নির্ধারণ করা হচ্ছে। টিকা দেয়ার প্রচারণা হচ্ছে, বিদেশ থেকে টিকা আসার খবর প্রচার করা হচ্ছে, এমন ২১ কোটি টিকা পাইপ লাইনে রয়েছে বলেও প্রচার করা হচ্ছে। অথচ যার জন্য এত প্রচারণা সেই টিকা কার্যক্রমে কেনো গতি দেখা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় অতি ধীর গতিতে চলছে টিকার কার্যক্রম। ফলে টিকা কার্যক্রম বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে দেখা যায় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ২ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। শুক্রবার টিকা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮,২০,০৩৩ মানুষ। ফাইজারের ৫,০২৩ জন, সিনোফার্মের ১৬,৬৬,৬৯৮ জন, মডার্নার ৪,৮১,৭১৫ জন মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। সবমিলে ৮০,১৮,৬৮১ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ ৪২,৯৮,০৮৬ জন, ফাইজারের ৬৯০ জন, সিনোফার্মের ৩০,৭০৮ জন সর্বমোট ৪৩,২৯,৪৮৪ জন কেবল মাত্র প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন।

জানতে চাইলে জনস্বাস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, দেশে প্রতি মাসে কমপক্ষ্যে এক কোটি করে মানুষকে টিকার আওতায় আনা প্রয়োজন। কারণ টিকার কার্যকারিতা এক বছর। এটা সম্ভব হলে এক বছরে সবাইকে টিকা দেয়া যাবে। কিন্তু প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হলে অনন্তকাল ধরে টিকা দিতে হবে। কমপক্ষ্যে প্রতি দিন ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া প্রয়োজন।

টিকা কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ করে মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত দেশের এক কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৯ জন মানুষ করোনা টিকার আওতায় এসেছে। এঁদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮০ লাখ ১৮ হাজার ৬৮১ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৮ জন। প্রথম ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ৪৯ লাখ ২ হাজার ৭৯০ আর নারী ৩১ লাখ ১৫ হাজার ৯২১ জন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩২ আর নারী ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৬৬ জন।
বিপুল পরিমাণ টিকা আসার পরও টিকা দেয়ার কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। লকডাউন শেষে হলেই আশা করছি আগামী ৭ আগস্ট থেকে ওই পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ ক্যাম্পেইন আকারে মাঠ পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে যখন যে এলাকায় শিডিউল থাকবে সেই এলাকার ১৮ ঊর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেওয়া শেষ করে অন্য এলাকায় যাওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ওই এলাকায় আগে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে এলেই টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানকর্মীরা শিথিল পন্থায় নিবন্ধনের কাজটি সেরে নেবেন।
অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন দিনে মাত্র ২ লাখ টিকা দেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এই টিকা দেয়ার সংখ্যা না বাড়িয়ে ৭ আগস্ট থেকে সাপ্তাহে ৬০ লাখ জোট টিকা দেয়া কঠিন হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী চীন থেকে ২৯ জুলাই সিনোফার্মের ৩০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। ২ জুলাই এসেছে ১০ লাখ ডোজ, ৩ জুলাই ১০ লাখ ডোজ, ১৭ জুলাই ৪০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এ ছাড়াও চীন তিন দফায় ২৪ লাখ জোজ টিকা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপহার হিসেবে টিকা দিয়েছে। বৈশ্বিক টিকা জোটের কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় জাপান অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। আজ শনিবার ও আগামী ৪ আগস্ট বুধবার অক্সফোর্ডের আরো ১৩ লাখ ডোজ করোনা টিকা আসবে। এ ছাড়াও ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ক্রয় ও উপহার হিসেবে এসেছে এক কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা। সে অনুযায়ী টিকা কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে না।

২০২০ সালের নভেম্বরে প্রথম ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য চুক্তি করে সরকার। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথম ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই টিকা প্রয়োগ করা হয়। ওই দিনই টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়। সেখানে নিবন্ধিতদের টিকা প্রয়োগ শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফা টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষেরা এবং সাধারণ মানুষের বয়স সীমা ৫৫ বছরের বেশি করা হয়। পরবর্তীতে সেই বয়সসীমা ৪৫ বছর করা হয়। অতপর সেটা ৪০ বছর, আবার ৩৫ বছর পরবর্তীতে ২৫ বছর করা হয়। ঘোষণা দেয়া হয় আগামী ৭ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সীরা টিকা নিতে পারবেন। একই সঙ্গে জানানো হয়, নিবন্ধন ছাড়াও শুধু আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে এলেও টিকা দেয়া হবে। গ্রাম পর্যায়ে টিকা দেয়ার জন্য তৃর্ণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ জন্য দেশে বিদ্যমান সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূূচি (ইপিআই) কার্যকর করা হবে করোনা টিকার ক্ষেত্রে। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য অস্থায়ী টিকাদানকেন্দ্রগুলোকে টিকা কার্যক্রমে কাজে লাগানো হবে। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরাও টিকাদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন। যার জন্য এতকিছু সেই টিকা কার্যক্রমে কিন্তু ধীর গতি।

টিকার বয়সসীমা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সরকার সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সব প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে। আর এরই ধারাবাহিকতায় টিকা নিতে প্রয়োজনীয় বয়সসীমাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, ভারতের নরেন্দ্র মোদি সেরামের টিকার চালান বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় টিকা নিয়ে নিদারুণ সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। অতপর টিকা সঙ্কটের কারণে টিকা কার্যক্রম ও টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অতপর চীন টিকা দিতে রাজি হলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপহারের টিকা পাঠালে নতুন করে গত ৭ জুলাই থেকে দেশে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। কিন্তু ৭ জুলাই যারা নিবন্ধন করেছেন তার অর্ধেক মানুষকে এখনো টিকার প্রদানের জন্য ম্যাসেজ পাঠানো হয়নি।



 

Show all comments
  • Mohammed Abutaher Simon ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৩ এএম says : 0
    ৭ তারিখ নিবন্ধন করেছি এখন খবর নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi S. Rahman ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৫ এএম says : 0
    অথচ শুরুটা কি দুর্দান্ত হয়েছিল। বিশ্বে কয়েকটা দেশ মাত্র আমাদের সাথে শুরু করতে পেরেছিল টিকা কর্মসূচি।আশাকরি সরকার যতদূর সম্ভব সবগুলো টিকা উৎপাদনকারী দেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবে, সাথে সাথে নিজেদের দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যাবস্থা করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ganna Moy Talukder ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৫ এএম says : 0
    করোনা টিকা কার্যক্রম কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে। একজন লোক করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করে মোবাইলে ম্যাসেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর যদি মোবাইলে ম্যাসেজ না আসে তাহলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ম্যাসেজ এর ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে করতে গিয়ে মাস খানেক চলে যায়, এসব ভোগান্তির কারণে অনেকে করোনা টিকা নিতে সাহস পাচ্ছে না
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদুল কবির খান এসিএস ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৬ এএম says : 0
    ২০ দিনের উপর হইছে রেজিট্রেশন করছি কিন্ত টিকার ডেট এখনও আসে নাই। এই হইলো আমাদের টিকাদান কর্মসূচি। অথচ সরকার ফেব্রুয়ারি প্রথমে যেভাবে শুরু করেছিল প্রতিদিন ২-৩ লাখ লোক টিকা নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল। সরকার যদি প্রতিদিন অন্তত ৫ লাখ লোককে টিকা দেয়ার ব্যাবস্থা করে তাহলে মাত্র ১ মাসে দেরকোটি লোককে দেয়া যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Mohi Uddin ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৬ এএম says : 0
    টিকা নিবন্ধন করার 20 দিন পরেও টিকার এসএমএস আসেনি অথচ আমাদের মন্ত্রী অনেক কথা বলেন। প্রতিদিন দেশে 100000 করেও টিকা দিতে পারেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Nabi Newaz ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৬ এএম says : 0
    সরকারের মন্ত্রী গন মিথ্যা আশ্বাস আর ফাঁকা কথার তোপ লাগাচ্ছে কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দিনের পর দিন লাশের পাহাড় গড়ে উঠেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mijan Bin Saeed ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৭ এএম says : 0
    ১৮ কোটি মানুষের মাঝে অর্ধকোটি মানুষকেও টিকা দিতে পারেনি এতদিনে, জনগণ ঘর থেকে বের হলেই দোষ! লকডাউন দিলে খাদ্য দিন, না পারলে লকডাউন উঠিয়ে নিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Monsurul Quadir ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৭ এএম says : 0
    ভারতের টিকার প্রথম ডোজ দিয়া, দ্বিতীয় ডোজ এখনও দেয় নাই অনেক লোক আছে। তাদের কপালে কি আছে, আল্লাহ্পাক জানে।
    Total Reply(0) Reply
  • সুমন দে ৩১ জুলাই, ২০২১, ৪:০৮ এএম says : 0
    আমাদের সাস্থ্য মন্ত্রণালয় হয়ত দীর্ঘ মেয়াদি কোভিডে আক্রান্ত। তাদের সাফল্যের শেষ নাই। তাদের পরিকল্পনারও শেষ নাই, বাস্তবায়ন যাই হোক। তবে.. নিজেকে নিজে সুরক্ষিত না রাখলে বিশ্বের কোন সাস্থ্য সেবা একজন মানুষকেও সুস্থ রাখতে পারবে না। মার্চ মাসে রেজিষ্ট্রেশন করে এখনো টিকা না পাওয়া আমি। অথচ আমার পরে করে বহুজন পেয়ে গেছে। এর মধ্যে কোভিডের সাথে একবার সাক্ষাৎ ও হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ