পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক: শ্রীনগর। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী। এখানে বিদ্যুৎ নেই। ইন্টারনেট নেই। সংবাদপত্রগুলো বন্ধ। এমনকি স্কুলও বন্ধ। দু’জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। একজন সতর্কভাবে ঘর থেকে উকি দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখছিলেন। আরেকজন বিক্ষোভকারী ও ভারতীয় বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ের গল্প বলছিলেন। আরেকটি রুম। সেখানে ১৩ বছরের একটা কিশোর বসা। বাড়ির মুরুব্বিরাতাকে বাইরে যেতে না বলেছে। সে কারফিউর সঙ্গে পরিচিত। স্বৈরাচারীভাবে নিত্যদিন স্কুল বন্ধ করে দেয়ার সঙ্গেও সে পরিচিত। সহিংসতা কেমন তাও সে জানে। সে এমন সব কিছু দেখে যা শিশুদের কখনোই দেখা উচিত নয়। সে এও জানে যা মোটেই কোনো শিশুর জানা উচিত নয়। চোখ বুঝলে একবার সে শুনতে পায় বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছে। আরেকবার সে শুনছে গুলির শব্দ। এরপর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে মোটেই ভয়ে কেঁপে ওঠে না। সে মোটেই আতঙ্কিত হয় না। তবে সে ক্রুদ্ধ হয়। তার চারপাশে যা ঘটে তা দেখে সে ক্রুদ্ধ হয়। নিজের ঘরে বসে সে কিছুই করতে পারে না। তবে একদিন যখন সে বড় হবে, তখন সে কিছু একটা করবে। যদি আর কিছু সম্ভব না হলেও ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে পারাই কাশ্মীরি শিশুদের কাছে এখন একটা স্বপ্ন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্কুপহুপ কাশ্মীরের ছয়জন শিশুর সঙ্গে কথা বলেছে এবং তাদের কাছে জানতে চেয়েছে ‘ভারত’ শব্দটি শোনার পর তাদের কী অনুভূতি হয়েছে।
সাফান নিসার, ১৩ বছর: ভারত হচ্ছে পুলিশ, যারা শিশুদের পিটুনি দেয়। আমি ভারতকে ঘৃণা করি। বাবা-মা আমাকে ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। আমরা বাইরে যেতে ভয় পাই। আমাকে বাবা-মা বলেছে, তুমি খুন হয়ে যাবে। আমি খেলতে পারি না। আমি গত দশ দিন ধরে খেলতে পারি না। আমরা এখন বইও পড়তে পারি না। হাম ডরতে হ্যায় (আমরা আতঙ্কিত)। আমরা স্বাধীনতা চাই। আমি বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ করতে চাই। কিন্তু অভিভাবকরা আমাকে ঘরে আটকে রাখে। তাই আমি শুধু স্লোগান শুনতে পাই।
মুয়াউইন তাসনিম, ১২ বছর: ভারত হচ্ছে একটা দৈত্য। ভারত মানুষ খুন করে তাদের লুকিয়ে ফেলে। আমি স্বাধীন কাশ্মীর চাই। আমি ভারতের অংশ হতে চাই না। আমি পাকিস্তানেরও অংশ হতে চাই না। ঘরের বাইরে যেতে আমি ভয় পাই। পুলিশ আমার সঙ্গে যেকোনো কিছু করে বসতে পারে। আমি তাদের বিশ্বাস করি না। তারা আমাকে খুন করতে পারে। আমি খুব কম পড়াশোনা করতে পারি। আমি বাইরে খেলতে যেতে পারি না। কার সঙ্গে আমি খেলব? রাস্তায় থাকা ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে খেলব?
রিদা শাফি, নয় বছর: আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার বাবা-মা ভারতকে ঘৃণা করেন। আমি ভারতের প্রতি ক্রুদ্ধ। আমিও ভারতকে ঘৃণা করি।
মোহসিন ওয়ানি, ১৩ বছর: যখন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা হয় তখন আমার বাবা-মা পাকিস্তানকে সমর্থন করেন। আমি বুঝতে পারতাম না যে তারা কেন এমনটি করেন। আমি তাদের কাছে কখনো জানতেও চাইনি ব্যাপারটা। কিন্তু বড় হতে হতে আমি খেলার সাথী ও সহপাঠীদের কাছ থেকে জেনেছি কিভাবে কাশ্মীরে নিপীড়ন চালাচ্ছে ভারত। দিনের পর দিন একের পর এক ঘটনা জেনে আমি বাস্তবতা বুঝতে পেরেছি।
দানিশ, ১২ বছর: ভারত একটি ধূর্ত দেশ। তারা আমাদের নিপীড়ন করছে। ভারত যদি আমাদের দেশ হতো তাহলে তারা আমাদের এতো মানুষকে হত্যা করতে পারতো না। আমরা ভারতের সঙ্গে থাকা পছন্দ করি না। মেহেরিন, ১৪ বছর: কাশ্মীরে মেয়েদের খুন করছে ভারত। আমি টেলিভিশনের ছবিতে এমনটি দেখেছি। আমি ভয়ে বাইরে যেতে পারি না। কারণ আমার গায়েও ছড়রা গুলি লাগতে পারে। ভারতীয় বাহিনী সবাইকে অন্ধ করে দিচ্ছে। আমি ভারতকে পছন্দ করি না। আমি ভারতের সঙ্গে থাকতে চাই না। এখানে তারা সবাইকে খুন করছে। ভারত সবার মনের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমরা কেউই আর নিরাপদ বোধ করি না।
এসব শিশুর ভাবনাকে প্রচারণা বলে ভারতের অনেকেই উড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু ভারত যদি প্রকৃত সমাধানে পৌঁছতে না পারে তবে কাশ্মীরের সংঘাত কখনো থামবে না। এখন বা নিকট ভবিষ্যতেও না। ভারতের এমপিরা পার্লামেন্টে একে অপরকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত থাকেন। বিজেপি কংগ্রেসকে এবং কংগ্রেস বিজেপিকে দোষারোপ করে। তারা আবার একযোগে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। এই দোষ চাপানোর খেলার মধ্যে কাশ্মীরের শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে, তারা তাদের শৈশবকে হারিয়ে ফেলছে। ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।