গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
![img_img-1720103663](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678211639_df.jpg)
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিধিনিষেধ শুরুর প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র বদলেছে। দ্বিতীয় ঘণ্টায়, লকডাউন বাস্তবায়নে রাজপথে সরব হয়েছে পুলিশ। এতে করে সকালের তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী। প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কমেছে। রিকশা চলাচল করলেও যাত্রীদেরকে চেকপোস্টের মুখে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, সিটি কলেজ মোড়, রাসেল স্কয়ার মোড়, প্রাধানমন্ত্রীর বাস ভবন এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ঘুরে দেখা যায়, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কঠোর ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। ওই রাস্তায় চলাচলরত প্রত্যেকটি গাড়িকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় এনে তারপর ছাড়া হচ্ছে। যারা বাইরে বের হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারছেন না, তাদের গাড়ি জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।
দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, রাস্তায় চলাচলকারীরা বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছেন। কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন, কোনো গাড়িচালক তার কর্মকর্তাকে সদরঘাটে পিক করতে যাচ্ছেন, কেউ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসায় যাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন।
এর আগে বিধিনিষেধের প্রথম ঘণ্টায় রাজধানীর কয়েকটি জায়গা ছাড়া কোথাও কোনো চেকপোস্ট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সরব ভূমিকা দেখা যায়নি। রাস্তায় রিকশা, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অলিগলিতে তেমন মানুষজনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে রাস্তায় নির্দ্বিধায় রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
প্রথম ঘণ্টায় দেখা গেছে, রাজধানীর শংকর ও সিটি কলেজ মোড়ের সামনে উপস্থিতি ছিল ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের। লঞ্চে যারা সদরঘাটে নেমেছেন তারা কোনো যানবাহন না পেয়ে হেঁটে যার যার গন্তব্যে ফিরছেন। অনেককে ঠাসাঠাসি করে ভ্যান ও রিকশায় যেতে দেখা গেছে।
এদিকে বিধিনিষেধের সময়ে যেসব বিষয় কঠোরভাবে মানতে হবে তা গত ১৩ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে ১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। ২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) এবং সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ৩. শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৪. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৫. সব প্রকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। ৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৮. ব্যাংকিং, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, মেইল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী এবং যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল, ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ১৩. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে। ১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট বা প্রমাণক প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন। ১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২৩. ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।