বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পারিবারিক কলহের জের ধরে সহিংসতা অতঃপর দাদীর দায়ের করা মামলায় মা কারাগারে। বেসরকারি চাকরিজীবী বাবার নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা। শেষ পর্যন্ত অবুঝ দুই শিশু সন্তান আলিফ এবং গালিফের ঠাই হয় রাস্তায়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে দিনভর শহরের টাউনহল এলাকার অগ্নিঝরা একাত্তরের পাদদেশে অসহায় দুই শিশু অবস্থান নেয়। বিকেলের দিকে তারা অবস্থান নেয় বরগুনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। অসহায় দুই শিশুর এ করুণ পরিণতি দেখতে সেখানে ভিড় জমান শত শত উৎসুক জনতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত অসহায় দুই শিশুর কেউ কোন দায়িত্ব না নেয়ায় সন্ধ্যার দিকে তাদের ঠাই মিলল বরগুনা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজের বাসায়।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু জানান, পারিবারিক সহিংসায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। ক্ষতিগ্রস্থও হয় শিশুরা। বরগুনার অসহায় দুই শিশু আলিফ এবং গালিব তার প্রমাণ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ দুই শিশুর কেউ দায়িত্ব না নেয়ায় মানবিক কারণে বরগুনা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজ ও তার স্ত্রী জাফরিণ নিতু সন্ধ্যার দিকে তাদের বাসায় নিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, দোষত্রুটি যাই থাকুক তার সবই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের। এ ঘটনায় শিশুরা কেন ভুক্তভোগী হবে? এসব বিষয় নিয়ে সচেতনতার সাথে আমাদের ভাবতে হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ জানান, ভুক্তভোগী শিশু আলিফের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, বাবার চাকরির সুবাদে তারা গাজীপুরে বসবাস করে আসছিলো। সে সেখানকার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সম্প্রতি সে আলিফ ইংল্যান্ডের একটি স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে সে জানায়। তার ভিসাও প্রস্তুত। করোনার কারণে তার ইংল্যান্ড যেতে দেরি হচ্ছিলো। অথচ এমন একটি সময়ে তার দাদীর দায়ের করা মামলায় কারাগারে রয়েছেন তাদের মা আনিতা জামান। শিশু আলিফ আরও জানায়, তার বয়স এখন ১২ বছর। অথচ মিথ্যে তথ্য দিয়ে মামলায় তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে তাকেও আসামী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোণাকালীন সময়ে গত দুই তিনমাস ধরে শিশু আলিফ ও গালিফকে নিয়ে মা আনিতা জামান বরগুনায় তাদের গ্রামের বাড়ি আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামে থাকছেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মাঝে কলহ চলছে। এসব কলহের জের ধরে আলিফের দাদী আলেয়া বেগম তার ছেলে মো. মনিরুজ্জামান ও পুত্রবধূ আনিতা জামানের বিরুদ্ধ বরগুনা থানায় মারধরের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার আলিফ ও গালিফের মা আনিতা জামানকে জেল হাজতে পাঠায় আদালত।
আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, শিশু আলিফ ও গালিফের নানা বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। বরগুনায় তার দাদীবাড়ির স্বজন ছাড়া আর কোন স্বজন নেই। তিনি বলেন এক পক্ষে আলিফ ও গালিফের দাদী ও ফুফুরা অন্য দিকে আলিফ ও গালিফের বাবা-মা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পারিবারিকভাবে এ দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌছলে উভয় পক্ষই মারমুখী হয়ে পড়েন। পরে দাদী আলেয়া বেগমের দায়ের করা মামলায় মা অনিতা জামান কারাগারে যান। তিনি বলেন, যে শিশুটির বয়স ১২ বছর তাকে মামলায় ১৮ বছর দেখানো হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে আলিফ জানায় তার ফুফুরাই তার মাকে মারধর করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আলিফ এবং গালিফের বাবা মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল গাজীপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মামলায় ঘটনার যে সময় দেখানো হয়েছে সেসময় আলিফের বাবা মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল তার কর্মস্থলে ছিলেন। সেখানে ডিজিটাল হাজিরায় তার হাজিরা রয়েছে। অথচ মিথ্যে তথ্য দিয়ে সেই মামলায় তার বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েলকে আসামী করা হয়েছে। তার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। এ অবস্থায় দুই বছরের দুগ্ধপোষ্য শিশু ছোট ভাই গালিফকে নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যদিয়ে দিন কাটছে তাদের। তাই এ মিথ্যে মামলা থেকে মায়ের মুক্তির দাবি জানিয়েছে অসহায় দুই শিশু আলিফ ও গালিফ।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, ‘ভুক্তভোগী দুই শিশু আলিফ এবং গালিফের চাচা ও ফুফুদের ভেতরকার পারিবারিক দ্বন্দ্বর জের ধরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অসহায়ত্বের শিকার হয়েছে ছোট ছোট দুই শিশু। দুগ্ধপোষ্য শিশু ও এবং করোণাকালীন সময়ে একজন নারীর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আগামীকাল আবারও আসামীপক্ষে জামিন আবেদন করা হবে।’ বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মিসকাত সাজ্জাদ জানান, করোণাকালীন সময়ে গত দুই তিনমাস ধরে শিশু আালিফ ও গালিফের বাবা-মা বরগুনায় থাকছেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মাঝে কলহ চলছে। আলিফের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ দাদীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, সন্ধ্যার দিকে অসহায় শিশু শিশু অলিফ ও গালিফের অসহায়ত্বের কথা ভেবে মানবিক কারণে বরগুনা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সোহেল হাফিজ ও তার স্ত্রী জাফরিণ নিতু আপাতত তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা আলিফ ও গালিফের জন্যে বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভব সব রকমের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।