রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
চিকিৎসক-নার্সসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বরগুনা জেলা সদর হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। মাত্র ৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সরা।
এছাড়াও প্রসাশনিক কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এবং নার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেনীর মোট ৮৯টি পদ থাকলেও সেখানে কর্মরত রয়েছে শুধুমাত্র ৫৫ জন, বাকি ৩৪ পদ শূন্য। এমনকি কম্পিউটার অপারেটর, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, অফিস সহায়ক, বাবুর্চিসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৬৬টি পদ থাকলেও সেখানে মাত্র ৩১ জন কর্মরত আছেন। বাকি ৩৫টি পদই রয়ে গেছে শূন্য। এছাড়াও আউটসোর্সিং ক্যাটাগরিতে ২০ জন লোকবল থাকার কথা থাকলেও সেখানে ২০টি পদই শূন্য।
প্রায় ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল। অথচ সেই হাসপাতাল ধুঁকছে চিকিৎসক-নার্সসহ জনবল সঙ্কটে। যেখানে চিকিৎসক থাকার কথা ৪৩ জন সেখানে চিকিৎসক আছে মাত্র ৬ জন। এতে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড সামলাতে অন্য হাসপাতাল থেকে সাময়িকভাবে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক আনা হয়েছিল। বর্তমানে তারা আর দায়িত্বে নেই। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। এতে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলার প্রধান এই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪৩ জনের। এর অনুকূলে আছেন মাত্র ৬ জন। বাকি ৩৭টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের ১৮টিই শূন্য। আর চিকিৎসা কর্মকর্তার ১৯টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য। জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে নাক, কান, গলা, শিশু, গাইনি, প্যাথলজিস্ট, মেডিসিন, চক্ষু, কার্ডিওলোজিস্ট, অ্যানেসথেটিস্ট, অর্থোপেডিকস, রেডিওলজিস্ট ও সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকের পদ শূন্য। বর্তমানে যে ৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন তারা হলেন- হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), একজন হোমিও চিকিৎসক, একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও শয্যা আর খাবার ছাড়া কিছু বাড়েনি। এর মধ্যেই ২০১০ সালের মে মাসে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালে নতুন ভবনটি উদ্বোধন হওয়ার পর বর্তমানে সেখানে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। এরপর প্রশাসনিক কাজ, ময়নাতদন্ত, ধর্ষণের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজকর্ম এই ছয়জনকেই সামলাতে হয়। ফলে এতো রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ভবনে বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ সারি। সেখানে কথা হয় পেটব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বরগুনা সদরের বড় লবনগোলা গ্রামের গৃহবধূ নাসিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে আইছি। এহন দুপুর বাজে ১২টা। এত্ত রোগী যে একজন ডাক্তারে দেইখ্যা আউগাইতে পারে না। হ্যারা বা হরবে কী।’
বুকে ব্যথা নিয়ে একসপ্তাহ আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সদরের আয়লা পাতাকাটা গ্রামের হযরত আলী হাওলাদার (৭০) নামের এক রোগী। তিনি বলেন, ‘এই সাতদিনে ডাক্তার ওয়ার্ডে আইছে তিন দিন। হ্যারপর খবর নাই।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকা বলেন, ‘এত স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের সামাল দেয়া দুরূহ। আমরা কীভাবে দিচ্ছি, সেটা বলে বোঝাতে পারব না।’
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসার কোন পরিবেশ নেই। নেই পর্যাপ্ত ঔষধ। তারপর ডাক্তার দেখাতে পারলেও অবস্থা পত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ফলে গরীব ও অসহায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পরিবেশ নেই। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধ। আউট ডোরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বসে থেকেও প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে রোগী দেখানোর সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দিন খান বলেন, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য পদে জনবল সঙ্কট থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটের বিষয়ে একাধিকবার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। খুব শিগগিরই একটা ভালো ফলাফল আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসক সঙ্কটে ভুগছে। আমরা ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের ফলে বেশ কিছু ডাক্তার এখানে পোস্টিং দেয়া হলেও দুর্ভাগ্য, কেউ কেউ যোগদান করেননি। চিকিৎসক সঙ্কট উত্তরণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি নিকট ভবিষ্যতে চিকিৎসক সঙ্কট কেটে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।