Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুঁশিয়ারি ১২শ’ বিজ্ঞানীর ঝুঁকিতে বিশ্ব

ইংল্যান্ডে করোনা বিধিনিষেধ প্রত্যাহার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিশ্বের অনেক দেশ যখন করোনা সংক্রমণের জন্য দেয়া লকডাউন শিথিল করে আবার ইউটার্ন নিয়েছে, তখন আগামীকাল সোমবার ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি মোকাবিলায় আরোপিত সকল বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তার এই সিদ্ধান্ত পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি বলে সতর্ক করেছেন কমপক্ষে ১২০০ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী। তারা বলেছেন, এতে করে টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতার চেয়ে শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটার উর্বর পরিবেশ তৈরি হবে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউজিল্যান্ড, ইসরাইল ও ইতালি। নিউজিল্যান্ড সরকারের একজন উপদেষ্টা ব্রিটেনের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
একটি জরুরি সম্মেলনে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী জানান, বৈশ্বিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্র ব্রিটেন। সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটলে তা দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। ইংল্যান্ডে কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নিতে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। এসব বিশেষজ্ঞের মধ্যে রয়েছেন নিউজিল্যান্ড, ইতালি ও ইসরাইলের সরকারি উপদেষ্টারাও। এ বিষয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি চিঠির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন তারা। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত নতুন ভ্যাকসিন-প্রতিরোধী ভাইরাস সৃষ্টির পথ খুলে দিতে পারে। সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের এক সরকারি উপদেষ্টা মাইকেল বেকার ও তার সহকর্মীরা জানান, ইংল্যান্ড সরকারের এমন পরিকল্পনা তাদের হতবাক করে দিয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ওটাগো’র জনস্বাস্থ্য বিষয়ক এই অধ্যাপক বলেন, নিউজিল্যান্ড সবসময় বৈজ্ঞানিক দক্ষতার ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব অনুসরণ করেছে। এ কারণেই তাদের মৌলিক জনস্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসরণ না করার এই ঘটনা এত বিস্ময়কর। এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ার অধ্যাপক হোসে মার্টিন-মরেনো ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের এত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও এমনটা কেন হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি না।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, ব্রিটিশ সরকারের এই পদক্ষেপ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকাররা রাজনৈতিক স্বার্থে অনুকরণ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক থিংকট্যাংক একসেস হেলথ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান ডা. উইলিয়াম হ্যাসেলটাইন বলেন, আমার সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে, আমাদের অনেক রাজ্য সরকার যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এই সাবেক গবেষক বলেন, আমাদের মতো সমান হারে টিকাপ্রাপ্ত একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখে আমি হতাশ।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডলের ক্লিনিক্যাল অপারেশনাল রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ক্রিস্টিনা প্যাজেল সম্মেলনে বলেন, বৈশ্বিক যোগাযোগ ও পরিবহনের একটি অন্যতম কেন্দ্র হওয়ায় যুক্তরাজ্যে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়া যেকোন ভ্যারিয়েন্টই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। যুক্তরাজ্যের নীতিমালা কেবল ব্রিটিশদের উপরই নয়, সবার উপরই প্রভাব ফেলে।
ল্যানসেটের ওই চিঠিতে লেখা হয়, আমরা বিশ্বাস করি সরকার একটি বিপজ্জনক ও অনৈতিক পরীক্ষা করতে চায়। আমরা ১৯ জুলাই বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাতিল করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল মহামারিবিদ ড. দীপ্তি গুরুদাসানী বলেন, এখন এড়ানো সম্ভব এমন একটি সংকট যুক্তরাজ্যে শুরু হতে দেখছে পুরো বিশ্ব।
তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘এ নিয়ে কোনো সন্দেহ রাখাই উচিৎ নয় যে আমরা এমন এক দেশে বসবাস করছি যেখানে আমাদের সরকার আমাদের যুবসমাজকে এমন এক ভাইরাসের সংস্পর্শে আনতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা অনেকের মধ্যে ভয়াবহ অসুস্থতা সৃষ্টি করে। আমাদের সরকার শিশুদের জন্য সব ধরনের সুরক্ষা বন্ধ করছে। স্কুলে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসলে কাউকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়ার নীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে’।
দ্য সিটিজেন্স নামে একটি সাংবাদিকতা বিষয়ক এনজিও আয়োজিত ওই সম্মেলন যুক্তরাজ্য সময় বিকেলে ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। এদিকে ইংল্যান্ডের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছেন যে, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভীতিকর মাত্রায় পৌঁছে যেতে পারে।
অধিক সংক্রমণশীল ভারতীয় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ও লকডাউন বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের কারণে সম্প্রতি আক্রান্তের হার বেড়েছে। হুইটি বৃহস্পতিবার সাইয়েন্স মিউজিয়াম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বলেছেন যে, প্রতি ৩ সপ্তাহে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। পাশাপাশি, বর্তমানে কোভিড রোগী ভর্তির হার কম হলেও, আগামী কয়েক মাসে তা গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন কোভিড সংক্রমণ ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মারা যাওয়ার হার মার্চের পর এখনই সর্বোচ্চ মাত্রায়। বৃহস্পতিবারের উপাত্তে দেখা যায়, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩৭৮৬ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ৬৩ জন। ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অর্থাৎ ডাউনিং স্ট্রিট লোকসমাগমের উপর আইনি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পক্ষেই অটল ছিল। তাদের আশা, ভ্যাকসিন দ্রুত দেয়া গেলে মানুষজন গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ