Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দ. এশিয়ায় শিশু টিকাদানে অনেক বছরের অগ্রগতি মøান

ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফের নতুন তথ্য

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের টিকাদান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে টিকাদান কমেছে ৬ শতাংশ পয়েন্ট। ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ-এর গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় ৫৩ লাখেরও বেশি শিশু নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ টিকা পাওয়া থেকে বাদ পড়েছে, যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ১৯ লাখ বেশি। এটি টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যার দিক থেকে ২০১৪ সালের পর সবচেয়ে বেশি।

২০১৯ ও ২০২০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-পারটুসিস (ডিটিপি থ্রি) ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ গ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা ৯০ শতাংশ থেকে কমে ৮৪ শতাংশ হয়েছে। ১৯৮০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-পারটুসিস (ডিটিপি থ্রি) ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ পাওয়ার হার ছিল ৬ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে বেড়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লরিয়া-অ্যাডজেই বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে শিশুদের টিকাদানে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করা একটি অঞ্চলকে করোনার কারণে এভাবে উল্টোরথে চলতে দেখা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। প্রায় ৪৪ লাখ শিশু তাদের মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে, এমন ভ্যাকসিনের একটি ডোজও পাচ্ছে না। সংখ্যাটি গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা। কারণ এটি তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এবং তাদের দুর্ভোগের দিকে ধাবিত করছে’।

দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে শিশুদের টিকা দেওয়ার হার কমেছে। নেপালে ডিটিপি থ্রি দেওয়ার হার ৯ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে; পাকিস্তানে কমেছে ৭ শতাংশ পয়েন্ট; ভারতে কমেছে ৬ শতাংশ পয়েন্ট; শ্রীলঙ্কায় কমেছে ৩ শতাংশ পয়েন্ট এবং ভুটান ও আফগানিস্তানে ২ শতাংশ পয়েন্ট করে কমেছে। তবে, বছরের শেষ দিকে অনেক দেশে জোরালো পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা সামগ্রিকভাবে টিকাদানের এ নিম্নমুখী হারের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকাদান কার্যক্রম শিশুদের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে টিকা না পাওয়া শিশুদের ৬২ শতাংশেরই বসবাস মাত্র ১০টি দেশে। বিশেষ করে করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ভারতে অরক্ষিত শিশুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৩৫ লাখ) যা আগের চেয়ে ১৪ লাখ বেশি। পাকিস্তানে ২০২০ সালে অরক্ষিত শিশুর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ, যা আগের চেয়ে ৪ লাখ বেশি।

উদ্বেগজনকভাবে, এসব শিশুর বেশিরভাগ গত বছর টিকার একটি ডোজও পায়নি, যা নির্দেশ করে যে, সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং দুর্গম এলাকায় বসবাসরত শিশুদেরই মহামারিজনিত কারণে টিকাদান ব্যাহত হওয়ায় সবচেয়ে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। গত দশ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু, প্রায় ৪৪ লাখ, নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে। ‘কোনো টিকা না পাওয়া’ এসব শির ৩০ লাখেরই বসবাস ভারতে।

হাম এখনও একটি উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে। পাশাপাশি রয়েছে ডিপথেরিয়া ও হলুদ জ্বরের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব। এসব রোগ টিকা না পাওয়া লোকজনের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় হামের টিকার প্রথম ডোজ প্রদানের আওতা ২০১৯ সালে ছিল ৯২ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৮৮ শতাংশে নেমে আসে, যা হাম থেকে সুরক্ষিত রাখতে জাতিসংঘ নির্ধারিত ৯৫ শতাংশের চেয়ে বেশ কম। দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে, যা বেশ কিছু টিকাদানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমনই একটি টিকা হচ্ছে এইচপিভি, যা জরায়ুর ক্যান্সারের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই টিকা শিশু ও কিশোরীদের দেওয়া হয় স্কুলে।

কোভিড-১৯ মহামারির আগে, দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-পারটুসিস, হাম ও পোলিওর টিকাদানের হার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বৃদ্ধি পায়, যেখানে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে টিকাদানের আওতায় বেশিরভাগ সময়েই স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি জন্য অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কর্মীকে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে হয়। কিছু দেশে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বা কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে, আবার কিছু পরিবার সুরক্ষা নিয়ে ভীত থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিতে দেরি করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ