মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকার মিশ্র ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ পদ্ধতিতে টিকাদানের ফলাফল নিয়ে খুব কম তথ্য থাকায় বিষয়টিকে ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান। গত সোমবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এখানে কিছুটা বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। টিকার মিশ্র ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই।
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে করোনা টিকার ব্যাপক সঙ্কটের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে সেগুলোর সুরক্ষা ক্ষমতার স্থায়িত্ব নিয়েও। এ অবস্থায় বেশ কিছু দেশ টিকার মিশ্র ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। গত সোমবার থাইল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে, তারা সিনোভ্যাক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহার করবে। থাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং উচ্চমাত্রার ইমিউনিটি তৈরির লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মিশ্র টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে সিনোভ্যাকের ডোজ এবং এর তিন বা চার সপ্তাহ পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ দেয়া হবে। রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে।
এর আগে, থাইল্যান্ডে ৭০০ মেডিক্যাল কর্মীর ওপর পরিচালিত একটি প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সিনোভ্যাক টিকার দুই ডোজ নেয়ার পর প্রথম ৬০ দিন শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ দেখা যায়। তবে এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে এবং প্রতি ৪০ দিনে অ্যান্টিবডির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটির গবেষক সিরা নানথাপিসাল বলেন, আমাদের গবেষণা অনুসারে, যেসব মেডিক্যাল কর্মী সিনোভ্যাকের দুই ডোজ নিয়েছেন, তাদের অবশ্যই বুস্টার শট নেয়া উচিত। সেটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজার যে কারো টিকা হতে পারে। অবশ্য এ গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
থাইল্যান্ডের মতো টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে জার্মানিও। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ভ্যাকসিন বলেছে, যারা প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড নিয়েছেন তারা চাইলে শেষ ডোজ ফাইজার বা মডার্নার টিকা নিতে পারেন। মিশ্র টিকা শরীরের জন্য বেশি কার্যকর। তবে তা নিতে হবে এক মাসের মধ্যে। এরপর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতেও মিশ্র ডোজ ব্যবহারে উপকারের কথা জানানো হয়েছে।
ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুটি ডোজে করোনা থেকে বেশি সুরক্ষা মিলছে নাকি আলাদা দুই টিকার সংমিশ্রণে উপকার বেশি তা পরীক্ষা করা হয়েছে কম-কোভ ট্রায়াল নামে ওই গবেষণায়। এর ফলাফলে দেখা গেছে, দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকার সংমিশ্রণেই মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হচ্ছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী ৮৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। এতে দেখা যায়- অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের তুলনায় দুই ধরনের টিকার সংমিশ্রণে শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দিলে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি হয়। কিন্তু ফাইজারের টিকার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিলে ততটা উপকার পাওয়া যায় না। তবে ফাইজারের দুই ডোজের পর শরীরে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পর ফাইজারের টিকা দেয়া হলে সবচেয়ে বেশি টি-সেল তৈরি হয়েছে।
তবে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী বলেছেন, টিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ হিসেবে কোন টিকা কখন নেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত যদি নাগরিকরা নেন, তাহলে দেশে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশে মিক্স পদ্ধতিতে টিকার সিদ্ধান্ত নেই
‘মিক্স এবং ম্যাচ’ পদ্ধতিতে টিকা (দুই ডোজ দুই ধরনের) দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত ও গবেষণালব্ধ ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকারের টিকাবিষয়ক ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট গ্রুপ বা নাইটেগ-এর এমন কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। তাই যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি তাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। ছয় মাস পরেও নেওয়া যাবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা।
তবে সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কিছু টিকা এমাসেই আসছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি, তাদের এই টিকা দেয়া হবে। যত দ্রুত আসবে ততো দ্রুত শুরু করা হবে টিকাদান।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ জন। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ নিতে বাকী আছেন ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৫১ জন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টাকা নিয়েও ভারত টিকা না দেয়ায় বাধাগ্রস্থ হয় দেশের গণটিকা কার্যক্রম। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় দেশে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি ইতোমধ্যে যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও সরকারের হাতে নেই।
আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম আলমগীর বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ১৪ লাখের মতো মানুষ রয়েছেন যারা অ্যাস্ট্রেজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের এ টিকারই (কোভিশিল্ড) দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। তিনি বলেন, যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ছয় মাস পর্যন্ত তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। তাতে করে কোনও অসুবিধা হবে না।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের মধ্যে ১৭ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে আসার তথ্য রয়েছে। জাপান থেকে এ টিকা আনার প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত আলোচনা সম্পন্ন হবে এবং দেশে টিকা আসবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ইনকিলাবকে বলেন, দেশে শিগগিরিই গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। হাতে যেসব টিকা রয়েছে সেগুলো সঠিক বন্টন করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দ্বিতীয় ডোজ যারা পাননি তাদের জন্য অক্সফোর্ডের টিকার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি এ মাসেই কিছু টিকা আমরা পাবো। যা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অবশিষ্ট টিকা দেয়া সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।